বিজ্ঞাপন

‘যক্ষ্মায় মৃত্যু ২৮ হাজারে নেমেছে, সুস্থ ৯৫ শতাংশ’

September 21, 2021 | 11:31 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সঠিক সময়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ায় যক্ষ্মায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার অনেক বেড়ে গেছে। ২০০৪ সালেও বছরে যেখানে ৭০ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় মারা যেত, বর্তমানে সেটি ৪৮ শতাংশ কমে ২৮ হাজারে নেমে এসেছে। এখন ৯৫ শতাংশের বেশি রোগী সুস্থ হচ্ছেন। আর প্রতি বছর গড়ে পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছেন ৯০ শতাংশ মানুষ ।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ সেন্টার ও রিজিওনাল টিবি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দেশে ২০০৪ সালে যক্ষ্মাতে ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতো। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নানামুখী পদক্ষেপে এটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশে গড়ে প্রায় তিন লাখ মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে কোভিডকালীন মহামারিতে অন্যান্য রোগের সঙ্গে এই রোগের চিকিৎসাও স্বাস্থ্য খাতকে দিতে হচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য খাত কোভিড, ডেঙ্গু চিকিৎসার পাশাপাশি যক্ষ্মা রোগেরও সঠিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগে প্রতি বছর গড়ে ৯০ শতাংশ মানুষ পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে। সরকারি সংস্থা এই চিকিৎসা বিনামূল্যে দিচ্ছে। ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ল্যাবরেটরি সার্ভিস বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য এই রোগী আরও কমিয়ে আনা।’

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যদি যক্ষ্মা নির্মূল করতে চাই এবং যক্ষায় মৃত্যুর হার কমাতে চাই, তাহলে প্রাথমিক সময়ে শনাক্ত সঠিকভাবে করতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। প্রাথমিকভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করা সম্ভব হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা গেলে অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে ওঠে।’

এ দিন শ্যামলীতে ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় জাহিদ মালেক বলেন, ‘ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার প্রমাণ করে এই সরকার রোগীকেন্দ্রিক সেবা প্রদানে কতটা আন্তরিক। আমরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও রোগীকেন্দ্রিক যক্ষ্মার সেবা সম্প্রসারণ করব। ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যৌথভাবে কাজ করার এক অনন্য নজির।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যা ২০৩০ সালের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও অবদান রাখবে। এছাড়াও যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ ‘

বিজ্ঞাপন

জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংক্রমণের হার ছিল শতকরা সাড়ে ৫ শতাংশ, মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক কম ছিল। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে করোনায় আমরা কতটা ভালো করেছি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথা বলেন দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়েও। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো চলছে। করোনার সময়েও আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বেশি রয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই আমাদের খাদ্যের অভাব হয়নি। মানুষজনের চলাচল শুরু হয়ে গেছে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমাদের ৮০০টি করোনা পরীক্ষার ল্যাব বসাতে হয়েছে। ১৫০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কোথাও অক্সিজেনের অভাব হয়নি। ফলে করোনায় মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম ছিল।’

ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দিচ্ছি। ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাংলাদেশ ভালো করেছে। আমরা ভ্যাকসিন তৈরি করি না। যেসব দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদন করে, তারা হয়তো আমাদের চেয়ে বেশি দিয়েছে। আমরা ভ্যাকসিন উৎপাদন না করলেও জোগাড় করেছি। আগামীতে আমরা আরও বেশি ভ্যাকসিন দিতে পারব বলে আশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টারের দ্বার উন্মোচন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। যারা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েও এর বিরুদ্ধে নিয়মিত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের জীবন রক্ষায় অবদান রাখতে পেরে আমরা যারপরনাই আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষদের স্বাস্থ্যকর ও উন্নত জীবনের জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যে সমন্বিত প্রচেষ্টা এই সেন্টারটি তারই স্মারক।’

সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘আগে বলা হতো যার হয় যক্ষ্মা, তার নেই রক্ষা। এখন আর সেই কথাটি প্রচলিত নেই। এখন সময় মতো চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।’

ইউএসএআইডি’র ডেপুটি মিশন ডিরেক্টর র‍্যান্ডি আলী বলেন, ‘সবধরনের যক্ষ্মা, বিশেষ করে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে যক্ষ্মার বিস্তার রোধ ও বাংলাদেশিদের জীবন রক্ষায় এর ভূমিকা অপরিসীম হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যক্ষ্মা নির্মূলে এবং যক্ষ্মা চিকিৎসা, নির্ণয় ও প্রায়গিক গবেষণায় ওয়ান স্টপ টিবি সার্ভিস সেন্টারকে ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স’ পরিণত করার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিগত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়নের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। যক্ষ্মার দ্রুত পরীক্ষায় ৭২টি জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়েছে। এ কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের ও চিকিৎসার হার বাড়ে এবং রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- আইসিডিডিআর,বি-এর ডা. তাহমিদ আহমেদ, এমবিডিসি’র পরিচালক এবং টিবি ল্যাপরোসি’র লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল ইসলাম, শ্যামলী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আবু রায়হান প্রমুখ।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন