বিজ্ঞাপন

আন্দোলনে একমত, কৌশলের মতানৈক্যে এক হতে পারছে না সরকারবিরোধীরা

October 2, 2021 | 12:52 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে সেই নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তিমত্তা বাড়িয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলোর মধ্যেও শুরু হয়েছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। এরই মধ্যে বিরোধী দলীয় অনেকের মুখেই উঠে এসেছে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কথা। বিরোধী দলগুলো মিলে সরকারবিরোধী ‘শক্তিশালী’ আন্দোলনের কথাও রয়েছে আলোচনায়। তবে এখন পর্যন্ত সেই আন্দোলনের কোনো আভাস বা রূপরেখা মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে অনানুষ্ঠানিকভাবে। তবে সেই আলোচনায় কেউই ঐকমত্যে আসতে পারেনি। এছাড়া বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বড় যে কয়েকটি রাজনৈতিক জোট রয়েছে, সেই জোটের মধ্যেও রয়েছে কোন্দল ও মতানৈক্য। কোন কোন দলের সঙ্গে কে আন্দোলনে এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবে, তা নিয়েও রয়েছে মতপার্থক্য। নিজেদের মধ্যেকার এসব বিভক্তি এড়িয়ে সরকারবিরোধী সমন্বিত আন্দোলন সহসাই মাঠে গড়াবে না— এমন অভিমতই পাওয়া যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংগঠনসহ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো দল ও জোট। জনসম্পৃক্ত কোনো বড় ইস্যু পেলেই এসব সংগঠনকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামার লক্ষ্য তাদের। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে এক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরিক দলগুলোর মধ্যেও ন্যূনতম ইস্যুতে নিজ নিজ দলীয় অবস্থান থেকে আগামী নির্বাচন তদারকি সরকারের অধীনে পরিচালনা এবং আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য মাঠে নামার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। সার্চ কমিটি দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে মেনে নেবে না— এমন মত জোটের দলগুলোর। সে কারণে সরকারকে চাপে রাখতে সমন্বিত আন্দোলনে মাঠে নামতে চান তারাও। তবে এখনই বিএনপির মতো দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে দলগুলোর মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই কতৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে যুগপথ আন্দোলনের বিকল্প নেই।’ তবে সেই আন্দোলন কোন দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে তিনি কিছু বলেননি।

বিএনপির সঙ্গে মাঠে নেমে আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলের নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট গত ৫০ বছর রাজনীতি করে দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারেনি। এই দুই দলের মধ্যে নানা পার্থক্য থাকলেও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সামন্য ব্যতিক্রম ছাড়া তারা একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ফলে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করার প্রশ্নই ওঠে না। সিপিবি জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে শক্তি সঞ্চায় করে তৃণমূল থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে।’

এদিকে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কার্যত নিষ্ক্রিয়। এই জোটের অনেক দলই কেবল কাগজে-কলমে রয়েছে বিএনপির সঙ্গে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে জোটের সঙ্গে তাদের দূরত্ব এখন দৃশ্যমান।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যেই সবশেষ শুক্রবার (১ অক্টোবর) এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে খেলাফত মজলিস থেকে। সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, ২০ দলীয় জোট রাজনৈতিকভাবে কার্যত অকার্যকর হয়ে যাওয়ার কারণেই তারা জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও ২০ দলীয় জোট নিয়ে ভাবনার বদলে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের বক্তব্য এসেছে। তবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা পাওয়া যায়নি।

বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস কৌশল করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখনো কোথাও মতানৈক্য দেখিনি। এর বাইরে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে খেলাফত মজলিসের বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগেই সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘এতে জোটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা এখন যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছি। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বাস্তব কোনো কার্যক্রমে না থাকা এই জোটটির অস্তিত্ব মূলত খাতা-কলমে। গঠনের সময় এই জোটে বিএনপি থাকলেও এখন তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো ড. কামাল হোসেনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ড. কামালও জোটের শরিক দলগুলোর ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। সব মিলিয়ে এই জোট আর কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই বলেই অভিমত জোট নেতাদের। যদিও শরিক দলগুলো বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সারাবাংলাকে বলেন, মতানৈক্য তো আছেই। যেহেতু আলাদা আলাদা দল। তবে কমন পয়েন্টে এক হওয়ার পক্ষে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি বুঝে পরস্পর পরস্পরকে জানার যে প্রয়াস, সেটা করা হয়নি।

মান্না আরও বলেন, এক মঞ্চে না উঠে যুগপৎ আন্দোলনের কথা আমি শুরু করি। বিএনপি বিষয়টিতে এগ্রি করেছে। কিন্তু বাকিরা করেনি। তবে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি। বাম দল ও হেফাজত, নাগরিক ঐক্যসহ অন্যান্য দলগুলো আলাদা আলাদাভাবে আন্দোলনের মাঠে আছে। আন্দোলন হবে। বিএনপি হয়তো নিজেরাও নিজেদের সবকিছু ঠিক করতে পারেনি এখনো।

ড. কামালের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম নেতা শফিক উল্লাহ ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করে নিলেন। তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের কার্যকারিতা নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অকার্যকর। কীভাবে আন্দোলন হবে? আমি মনে করি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর করে আন্দোলনের কৌশল ও ইস্যু ঠিক করলে তবেই আন্দোলন হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন