বিজ্ঞাপন

গেড়ে বসছে রোহিঙ্গারা! বাড়ছে সুযোগ সুবিধা

April 5, 2018 | 10:54 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মিয়ানমার থেকে নিপীড়ণের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জীবন-মান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোয়। তাদের বসবাসের জরাজীর্ণ আর নড়বড়ে ঘরগুলো ক্রমেই স্থায়ী আবাসে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া শিবির এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং ধর্মীয় উপসানালয়ও বসছে। গড়ে উঠছে স্থায়ী বাজার ব্যবস্থাও। সবমিলে পরিপূর্ণ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে এসব রোহিঙ্গাদের জন্য।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে থাকা ২ লাখ ৩ হাজার (মোট রোহিঙ্গা ১১ লাখেরও বেশি) রোহিঙ্গাকে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে একাধিক মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব নাগরিক সুবিধা পেলে ধীরে ধীরে এদেশে গেড়ে বসবে রোহিঙ্গারা।

গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় তখন তাদের আশ্রয় শিবিরগুলো ছিল লাল/সাদা পলিথিনের জীর্ণ একটু মাথা গোজার ঠাই। কিন্তু এখন সেই জীর্ণ শিবিরগুলো অনেকটাই শক্তিশালি কাঠামোতে রূপ পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের চলাচলের জন্য সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে। রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের শিক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবি সংস্থাগুলো প্রায় হাজারখানেক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। যেখানে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি মিয়ানমারের বার্মিজ ভাষায় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের অনেকেই স্থানীয় শ্রম বাজারে কাজ করছে। কক্সবাজারের কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৪৫ বছর বয়সের ছলিম উল্লাহ জানান, তিনি স্থানীয় একটি জেলে নৌকায় মাছ ধরার কাজ শুরু করেছেন। রাখাইন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে অনেক শান্তিতে বসবাস করছেন বলেও জানান নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত এই রোহিঙ্গা।

সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অতীত অভিজ্ঞতা এবং মিয়ানমার সরকারের বর্তমান আচরণ থেকে ঢাকা এতোটুকু নিশ্চিত হয়েছে যে সহজেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না নেপিডো।

মিয়ানমারের আচরণ থেকে শতভাগ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতের বিষয়ে কোনো আস্থা রাখা যাচ্ছে না। আর বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করে। তাই রোহিঙ্গাদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় ঢাকা।
সরকার এখনো শতভাগ প্রত্যাবাসনের প্রত্যাশাই রাখছে। তবে সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না সেটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বক্তব্যেও ফুটে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শতভাগ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা আশাবাদি। মিয়ানমারের সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিক চুক্তি হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে খুবই মানবিক। কেননা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরাও অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বাংলাদেশ শরণার্থীর ব্যথ্যা বোঝে। যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি না হচ্ছে ততক্ষণ বাংলাদেশ তাদের পাশে রয়েছে। নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীকেতো গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া যায় না।’

এদিকে, জাতিসংঘ এবং ৮৯ টি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ২০১৮ সালের খাবার এবং আনুসঙ্গিক বিষয়ের জন্য আরো ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ জন্য স্বেচ্ছাসেবি এই সংস্থাগুলো অনুদান সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

বর্তমানে কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থান করছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যার সঙ্গে আরো ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে এসে যোগ দিতে পারে বলে জাতিসংঘ এবং ৮৯ টি স্বেচ্ছাসেবী ধারনা করছে।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাগুলো আগাম রোহিঙ্গার সংখ্যা ধরেই তহবিল সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে বলে জানান রেড ক্রসের কর্মকর্তা আজমত উল্লাহ।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত মাসে ‘আসন্ন বর্ষাকালে সম্ভাব্য ঘুর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল ও পাহাড় ধস হতে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থানরত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের রক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণ’ শীর্ষক একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকে জানানো হয়, একাধিক শিবিরে আশ্রয় নেয়া ২ লাখ ৩ হাজার রোহিঙ্গা আগামী বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৯ জন ভ’মিধস এবং ৬৯ হাজার ৩৫১ জন বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩৫ জনকে ১৭ ও ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা অন্য রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের সম্প্রসারিত উত্তর-পশ্চিমাংশে ১২৩ একর জমি চিহ্নিত করে বসবাসের যোগ্য করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের ব্যারাক হাউজগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএস/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন