বিজ্ঞাপন

‘ধর্মীয় রাজনীতি কখনো ভালো ফল আনতে পারে না’

October 21, 2021 | 10:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘ধর্মীয় রাজনীতি কখনও ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এজন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইন পাস করে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করেছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু’ শীর্ষক ডিজিটাল চিত্র প্রদর্শনীতে উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও মহাত্মা গান্ধীর জন্মের দেড়শ বছর উপলক্ষে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার কার্যালয় এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তরুণ বয়সে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শনে প্রভাবিত হয়েছিলেন। গান্ধীজী ছিলেন উপমহাদেশের মুক্তির আন্দোলনের পুরোধা এবং যিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে আবার ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন ঔপনেবেশিক শাসনের বিরুদ্ধ, উনার অহিংস আন্দোলনে আস্থা রেখেছিল সবাই। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তিনি সফলকাম হয়েছিলেন।’

‘আমাদের জাতির পিতাও, পাক হানাদার বাহিনী যখন অস্ত্রহাতে হত্যা শুরু করে, তখন সশস্ত্র আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনিও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্পৃহা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। সাংবাধিনিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই তিনি ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। গান্ধীজী যেমন বিচ্ছিন্নতাবাদী হননি, তেমনি আমাদের জাতির পিতাও বিচ্ছিন্নতাবাদী না হয়ে একেবারে শেষপর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাধীনতার স্পৃহা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। দুই নেতা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন,’— বলেন উপমন্ত্রী নওফেল।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লেখনিতে দেখি তিনি অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ একজন মানুষ ছিলেন। কারণ তিনি ধর্মীয় রাজনীতির অপপ্রভাব দেখেছেন। এ কারণে উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হলে— কেবল দ্বিখণ্ডিত হওয়া মূল বিষয় নয়, এর কারণে লাখ লাখ মানুষের যে মৃত্যু ও সহিংসতা তিনি দেখেছেন— এর পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি এই বিশ্বাসে উপনীত হয়েছেন যে ধর্মীয় রাজনীতি কখনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এজন্য তিনি আইন পাস করে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই পথ থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি।’

একই ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, একই ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী রাজনীতির অংশীদার হিসেবে কিন্তু গান্ধীজিকে হত্যা করেছে। সেই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ধর্মীয় অপরাজনীতির সংস্কৃতিতে ফেলতে চেয়েছিল। ভারতে তারা এটা করতে চেয়ে সফল হতে পারেনি। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকে তারা পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে আমাদের আজ এত সমস্যা এবং সেসব সমস্যা সমাধানের পথ আমরা খুঁজছি।’

বিজ্ঞাপন

উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দর্শনগত দিক থেকে বঙ্গবন্ধু-বাপু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। আজ বাংলাদেশে দেখেছি— কিছু দুষ্কৃতিকারী ও অপরাজনীতির শক্তির দোসর, সুনির্দিষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশে যারা আপাতত রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে পরাজিত অবস্থায় আছে, তারা গোপন রাজনীতির অংশ হিসেবে আমাদের সাধারণ মানুষকে উগ্রতার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-অরাজকতা করাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের গান্ধীজির দিকে দেখতে হবে। তার দর্শন ও আদর্শ আমাদের সমাজের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তার চিন্তাভাবনা— তার সঙ্গে একত্রিত করে গান্ধীজীর দর্শনের সর্বোত্তম প্রচার ও প্রসার করা গুরুত্বপূর্ণ।’

‘আজ জাতির পিতার আদর্শের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরাও তার মৌলিক দর্শন ধারণ করতে পারছি না। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা কিছু শিখতে পারবে। তাদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি হবে। বিশেষ করে ছাত্রজীবনে এখন পরীক্ষা নির্ভরতা মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। পুঁথিগত বিদ্যার সংস্কৃতি চর্চা, আদর্শ চর্চা ভুলে যাচ্ছি। এখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য নানাভাবে রাজনৈতিক দর্শনের চর্চা করা— এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চিত্র প্রদর্শনী আমাদের সেই পথ দেখিয়ে দিচ্ছে,’— বলেন নওফেল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরিণ আখতার ও চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন সিকদার এতে বক্তব্য রাখেন।

বিজ্ঞাপন

অনিন্দ্য ব্যানার্জি স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৭১ সাল থেকে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। বঙ্গবন্ধু ও গান্ধীজী— দু’জনেই মহান নেতা। বঙ্গবন্ধুর সাহস ও দৃঢ়তা বিশ্বের অনেকের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি ভারতেও শ্রদ্ধার পাত্র।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রদর্শনী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সবার জন্য দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। ২২টি তথ্যদেয়াল ও শতাধিক ডিজিটাল মুহূর্তের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন