বিজ্ঞাপন

সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে পুরো ঢাকা

October 28, 2021 | 10:12 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রায় এক হাজার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) বসিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ২০১৮ সালে এসে বাড্ডার আফতাব নগর এলাকাকেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। এছাড়া পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বসুন্ধরা এলাকাতেও।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি মনে করছে, সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকা এসব এলাকার অপরাধ তারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। কিন্তু রাজধানীর অন্য এলাকাগুলো সেভাবে সিসি ক্যামেরার আওতায় না থাকার কারণে এলাকাগুলোতে অপরাধ বেশি ঘটছে। অন্যদিকে সিসি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটেই পুরো ঢাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে ডিএমপি।

জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নতুন করে ৬২৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে— জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, গুলিস্তান, রায় সাহেব বাজার মোড়, বংশাল, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ, সাত রাস্তা, মগবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব, ফার্মগেট।

সিসি ক্যামেরার আওতায় আসা এলাকাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে— মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, ধানমন্ডি, আজিমপুর, চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, টিকাতলী, মানিক নগর, ধোলাইপাড়, জুরাইন, শনির আখড়া, মিরপুর-১০, রূপনগর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বিজয় সরণি, রামপুরা, দক্ষিণ বনশ্রী, খিলগাঁও, বাসাবো, বৌদ্ধ মন্দির, শাহজাহানপুর, তালতলা ও হাতিরঝিল।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল গণি রোডে ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টারের ছাদে বসানো হয়েছে এসব সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, সাধারণ যেসব এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে সেসব এলাকায় অপরাধের মাত্রা অনেক কম। আবার কোনো অপরাধ সংঘটিত হলেও সেটি সহজে ও তাড়াতাড়ি শনাক্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যেসব এলাকায় সিসি ক্যামেরা নেই, ওই সব এলাকায় অপরাধের মাত্রা বেশি। আবার ওইসব অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করতেও সময় লাগে। তখন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বেশি জোর দিতে হয়। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে তদন্ত শুরু করলেও অনেক বেগ পেতে হয়। কিন্তু সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ঘটনাটি পর্যালোচনা করা সহজ ও দ্রুত হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ে যুক্ত একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিদিন শত শত ঘটনা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা কমান্ড সেন্টার চালুর পর ডিএমপির থানাগুলোতে চুরি-ছিনতাই সংক্রান্ত যেসব জিডি ও অভিযোগ পড়ছে, তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলোতে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করতে সহায়তা করা হচ্ছে। ফলে থানায় কোনো অভিযোগ জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কাছে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। আমরাও তাৎক্ষণিকভাবেই তাদের সহযোগিতা করতে পারছি।

বিজ্ঞাপন

একটি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে অনেক আগে থেকেই দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা করতে পারে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী। সেই সুযোগ নিয়ে অপরাধী চক্র ঢাকায় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এ পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকায় যেন অপরাধের মাত্রা বাড়তে না পারে এবং অপরাধ সংঘটিত হলেও অপরাধীদের যেন দ্রুত আইনের আওতায়ে আনা যায়, সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যই পুরো ঢাকায় সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে।

তবে পুলিশ আরও বলছে, অপরাধ যে ধরনের হোক না কেন, সেটি অপরাধ। রাজনীতির নামে হোক আর সাধারণভাবে হোক— অপরাধের সংজ্ঞায় যা কিছু ঘটুক, তাকে পুলিশ অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করবে। রাজনীতির নামে কেউ যদি অপরাধ বা নাশকতা করতে চায়, সেটিও দ্রুত শনাক্ত করা পুলিশেরই কাজ। আর দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করার সেই কাজে সিসি ক্যামেরা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হোসেন এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, গুলশান বিভাগে আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল। ফলে ওই এলাকায় অপরাধ অনেক কমে গেছে। আর অপরাধ হলেও অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা ছিল না। এরই মধ্যে নতুন করে ৬২৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আব্দুল গণি রোডের কমান্ড সেন্টারের ওপরে আরেকটি মনিটরিং সেন্টার করা হয়েছে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সেগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।

ডিসি ফারুক আরও বলেন, রাজধানীর যেসব এলাকা বাকি রয়েছে, আগামীতে সেসব এলাকাতেও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। অর্থাৎ পুরো রাজধানীই সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে বলা যায়। ঢাকায় যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়া মাত্রই যেন তা শনাক্ত করে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা যায়, সেই চেষ্টাই আমরা করছি। এতে অপরাধের মাত্রা ও অপরাধীর সংখ্যা কমে আসবে বলে আশা করছি।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে ডিএমপির অধীন পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ৬২৫টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বা পয়েন্টগুলোতে আগে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আগামীতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাকি পয়েন্টগুলোতেও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।

তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরা বসানোর ফলে অপরাধের মাত্রা কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি। আর অপরাধ হলেও অপরাধী ধরা না পড়ে খুব বেশি সময় থাকতে পারবে না। এ বিষয়টি অপরাধীরা বুঝতে পারলে তারাও অপরাধ সংঘটনে নিরুৎসাহিত হবে বলে আমরা মনে করছি।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন