ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় আসছেন রোববার

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেসব গোখলে রোববার (৮ এপ্রিল) দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। এই সফরে দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক ইস্যুতে বিজয় কেসব গোখলের বিশেষ বার্তা থাকবে। ঢাকা এবং নয়া দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরের মূল বিষয় থাকবে, দু’দেশের সম্পর্ককে আরো কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, এই বিষয়ে কাজ করা। সফরে তিস্তা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বিজয় কেসব গোখলে। এ ছাড়া ভারতীয় সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার ব্যাখ্যা আসবে। ওই বক্তব্য যে সেনাপ্রধানের নিজস্ব মন্তব্য, ভারতের নয়, এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এই সফর মূলত পরিচিতিমূলক। সফরে তিনি পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দুইদেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ে দুই দেশের সচিব একটি সমাঝোতা স্মারকে সই করতে পারেন।  সফরে বিজয় কেসব গোখলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে এক সেমিনারে বক্তব্য দিবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়। বিশেষ করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিককালের সম্পর্কের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ভারত। এই অঞ্চলে চালকের আসনটি অন্য কোনো দেশের হাতে দিতে চায় না মোদি সরকার। যে কারণে অতি সম্প্রতি সমুদ্র নিরাপত্তা ইস্যুতে ফ্রান্সের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করেছে ভারত।

এদিকে, ভারত বাংলাদেশকে বিশেষ বন্ধু মনে করে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঢাকাকে নয়াদিল্লির পাশে চায় মোদি সরকার। কিন্তু বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত নয়া দিল্লি। গত দুই বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং যে সকল সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে তার প্রতিও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে নয়া দিল্লি। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের গণমাধ্যমকর্মীদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক শুধুমাত্র দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। এতে ভারতের বিচলিত হওয়ার কিছু নাই।

নয়া দিল্লি প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট বার্তা পেতে চায় নয়া দিল্লি। বিজয় কেসব গোখলের ঢাকা সফরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে এই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা জানার চেষ্টা চালাবেন। পাশাপাশি ভারতের পাশে বাংলাদেশের সরব সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ সফরের আগে নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেসব গোখলে চীন সফর করেছেন। দোকলাম ইস্যুতে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার পর ওটাই ছিল দু’দেশের উচ্চপর্যায়ের মধ্যে প্রথম সফর। এ ছাড়া আগামী জুনে চীনের সাংহাইতে একটি সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, চীন সফরে বিজয় কেসব গোখলে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, বিজয় কেসব গোখলের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের সরব সমর্থনের অভাব বিষয়টিকে ঢাকার পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ ছাড়া আসামে বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশটির সেনা প্রধানের দেয়া বিতর্কিত মন্তব্য সম্পর্কেও পররাষ্ট্র সচিবের সফরে জানতে চাইবে ঢাকা।

ভারতের কূটনীতিকরা বলছেন, অতীতের যে কোনো সময় থেকে বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নয়া দিল্লি ঢাকার পক্ষেই আছে, এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বোঝাতেই বিজয় কেসব গোখলে বাংলাদেশ সফরে আসছেন।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএইচ/এমআইএস