বিজ্ঞাপন

৪ লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন, প্রতিদিন টার্গেট ৪০ হাজার

November 1, 2021 | 12:24 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হচ্ছে রাজধানীতে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) থেকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজেসহ রাজধানীর আরও সাতটি স্কুলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন স্কুলে জন্মনিবন্ধন সনদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে রাজধানীর বাইরের অনেক স্কুল থেকেই এখন পর্যন্ত কোনো তালিকা জমা পড়েনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে। রাজধানীতে মাত্র চার লাখ শিক্ষার্থীদের তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্য পাঠানো হয়েছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। এ কারণে রাজধানীর বাইরের ২১ জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সংক্রমণের হার কমে আসায় ধীরে ধীরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে কনফিডেন্স আসবে ও আস্থা বাড়বে বলে আশা করছি। এভাবে আমরা আশা করছি আগামী বছর থেকে স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে একটি জরুরি বিষয় হলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা আছে এমন কেন্দ্র নির্ধারণ করা। সেই বিবেচনায় আমরা এখন পর্যন্ত আটটা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করতে পেরেছি। আরও কেন্দ্র বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সকল স্থানের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করানো, তাদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ— এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমরা আশা করছি, খুব দ্রুতই এটা আমরা পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারব। দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে। এরইমধ্যে রাজধানীর চার লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠানো হয়েছে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে সোমবার থেকে ১২ থেকে ১৭ বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। দিনে চার থেকে পাঁচ হাজার স্কুলশিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

সকাল সাড়ে ৯টায় মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাই জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে ভ্যাকসিন কর্মসূচির জন্য নিবন্ধন করাবে শিক্ষার্থীরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জন্মনিবন্ধনের তালিকা আইসিটি বিভাগকে পাঠাবে। আইসিটি বিভাগ হোয়াইট লিস্টিং করে, সঠিক করে দেখে আমাদের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে। তখন প্রতিটি অভিভাবক অথবা স্কুল কর্তৃপক্ষ সুরক্ষার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেদিন ভ্যাকসিন নেবে সেদিন তার নিবন্ধন কার্ড এবং জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে স্কুলে আসতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ভ্যাকসিন নিলে আমরা তাদের সার্টিফিকেট দিতে পারবো না।’

ডা. শামসুল বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে এমন স্কুলগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ছাড়াও তার আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক স্কুলের তালিকা চেয়েছিলাম, কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রাথমিকভাবে ২৫টি করে বুথ করা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এমন মোট আটটি স্কুলের তালিকা দিয়েছে। তবে পরবর্তীতে ঢাকা শহরসহ আরও প্রায় ২২টি জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে প্রতিটি জেলায় এই কর্মসূচি সম্প্রসারিত করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ১২টি কেন্দ্র নির্বাচন করা হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আটটি কেন্দ্রকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য ক্লাস্টার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এগুলো হলো—হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর কমার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকলী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।’

তিনি বলেন, যে আটটি কেন্দ্রে নির্বাচন করা হয়েছে সেখানে তারা নিজেদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আশপাশের নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ফাইজারের এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণে আলট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য প্রয়োজন হয় থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আলট্রা ফ্রিজার ভ্যান। যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগ উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য যে ডায়লুয়েন্ট লাগে সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে যেখানে আমাদের এই সুযোগ আছে সেই স্কুলগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২৫টি বুথ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, প্রতিদিন যেন ৪ থেকে ৫ হাজার শিশুকে টিকা দিতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগে স্কুল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ স্কুলে যখন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলবে তখন সেখানে টিকাদানকারীসহ প্রতিটি স্কুলে ডাক্তার থাকবেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সবাইকে স্কুলে ভিড় না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর আট স্কুলে বসছে কেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে ২৫টি বুথ। একেকটি বুথে প্রতিদিন ভ্যাকসিন পাবে ২০০ শিক্ষার্থী। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় মতিঝিল আইডিয়ালে কর্মসূচির উদ্বোধন। এ দিন এখানে ভ্যাকসিন পাবে ৫ হাজার শিক্ষার্থী। পরের দিন আট স্কুলে শুরু হবে টিকাদান। প্রতিদিন ৪০ হাজার ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা করছে অধিদফতর।

ডা. শামসুল হক বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে মানিকগঞ্জে ১২০ শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তারা সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চালু হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৭০ লাখ ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন রয়েছে। আগামী নভেম্বরে আরও ৩৫ লাখ ডোজ ফাইজারের ভ্যাকসিন দেশে আসার সম্ভাবনা আছে।

এর আগে, গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার চারটি স্কুলের ১২ থেকে ১৭ বয়সী ১২০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

শিশুদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের এই কার্যক্রম উদ্বোধন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রয়োগের উপযোগী ৬০ লাখ ভ্যাকসিন আমাদের হাতে আছে। এর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন আমরা দেব।’

মূলত এর পরেই শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু করা হয়। স্কুলশিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিতে এরইমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদঠতর-মাউশি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সে তথ্য আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের তথ্য ভাণ্ডারে যোগ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন নিবন্ধন করতে পারছে।

প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে বলেছে মাউশি। সে জন্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটের ‘নিবন্ধন (জন্মসনদ)’ মেন্যু বা ঠিকানায় নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

এ ঠিকানায় প্রবেশ করে জন্ম সনদ নম্বর, জন্ম তারিখ ও ক্যাপচা কোড নির্দিষ্ট স্থানে পূরণ করে ‘যাচাই করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তী ফরমে ইংরেজিতে নাম এবং মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এরপর বর্তমান ঠিকানা দিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে।

নিবন্ধনের সময় দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে পরে ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখ ও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাকসিন নিতে হবে, তা জানানো হবে।

তথ্য দেওয়া শেষে এসএমএসে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে ‘নিবন্ধন সম্পন্ন করুন’ বাটনে ক্লিক করে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

সুরক্ষা ওয়েবসাইটের ‘টিকা কার্ড’ মেনুতে জন্ম সনদ নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করা যাবে।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন