বিজ্ঞাপন

‘পূর্ণিমাকে হত্যা করে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে অভিযুক্তরা’

November 1, 2021 | 11:22 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমার ‘রহস্যজনক মৃত্যু’কে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সহপাঠী ও স্বজনরা। তারা বলছেন, ‘পূর্ণিমা হত্যা করে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে অভিযুক্তরা।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান পূর্ণিমার সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজন ও সাধারণ মানুষ।

কর্মসূচিতে পূর্ণিমা চাকমার মামাতো ভাই পলাশ চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রাজিয়া চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা মহারঞ্জন চাকমা ও সত্যপ্রিয় চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী তরুণ চাকমা, রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাধনা চাকমা, লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থী বিধি চাকমাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা কর্মসূচি থেকে পূর্ণিমার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচারের জোরালো দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, একই দাবিতে দুপুর ১২টায় রাঙ্গামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- পূর্ণিমা চাকমার মামাতো ভাই পলাশ চাকমা। লিখিত বক্তব্যে পলাশ বলেন, ‘আমার বোন পূর্ণিমা চাকমা পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। তাকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন ছিলো সে একজন ডাক্তার হয়ে নিজের এলাকা ও দেশের মানুষের সেবা করবে। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।’

পলাশ চাকমা দাবি করেন, ‘গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ঘটনার দিন পূর্ণিমা চাকমার বাসা পাল্টানোর কথা ছিলো। ঠিক সেদিন দুপুরেই তাকে লাশ হতে হলো। বাসার মালিক পুরো ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। কিন্তু পূর্ণিমা চাকমা কোনোভাবেই আত্মহত্যার করার মতো মেয়ে না। এই বাসাতে থাকাকালীন সময়ে তাকে চুরির অপবাদসহ নানান ভাবে অপমান, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।

বাসার মালিক মল্লিকা দেওয়ান দাবি করেছেনন পূর্ণিমা গলায় দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে সে ঘরে কোন চেয়ার-টেবিল কিংবা ওড়ানাও ছিলো। আর ঘরের মেঝে থেকে সিলিং এর যে দূরত্ব পূর্ণিমার পক্ষে কোন চেয়ার, টেবিল ব্যবহার ছাড়া আত্মহত্যা করার কোন সুযোগ নেই। এমনকি পূর্ণিমার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই আমরা পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে মনে করছি। একইসঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যেন আর কোন শিক্ষার্থীকে অকালে ঝরে পড়তে না হয়।’

বিজ্ঞাপন


পলাশ আরও বলেন, ‘এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলার পর মল্লিকা দেওয়ান ও তার পরিবারের লোকজনকে আমাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমরা তো টাকা দিয়ে দফারফা করতে চাই না। টাকা দিয়ে তো বোনকে ফিরে পাবো না। আমরা বোন হত্যার বিচার চাই। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচার চাই।’

পূর্ণিমার প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুর ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলাশ চাকমা বলেন, আমরা হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এদিকে, রাঙ্গামাটি কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন, ‘কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। তবে এখনও পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দেননি।’

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কলেজছাত্রী পূর্ণিমাকে অচেতন অবস্থায় রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা শুনে উধাও হয়ে যান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা। ঘটনার পরদিন শনিবার দুপুরে পূর্ণিমা চাকমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমা জেলার জুরাছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর দুর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বগাখালী এলাকার সাধন চাকমার মেয়ে। সে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। পড়ালেখার সুবাধে জেলা শহরের রাজবাড়ী এলাকার মল্লিকা দেওয়ানের বাসায় থাকতো। পূর্ণিমাকে মল্লিকা দেওয়ানের বাসায় রাখার ব্যবস্থা করেন দেন জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা অঞ্জলী চাকমা (গান্ধী)।

এ ঘটনার পর থেকে মল্লিকা দেওয়ান ও গান্ধী চাকমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন