বিজ্ঞাপন

বাঁধনহারা `রেহানার’ এক সন্ধ্যা

November 2, 2021 | 6:37 pm

আহমেদ জামান শিমুল

এতটা উচ্ছ্বাস, এতটা আনন্দ— তিনি করতেই পারেন। এতো সাফল্য, এতো আলোকচ্ছ্বটা যে আগে আসেনি আর! যার কথা হচ্ছে, তিনি আজমেরী হক বাঁধন।মর্যাদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্টান্ডিং ওভেশন পাওয়া বাংলাদেশের প্রথম অভিনয়শিল্পী। সবেই অভিনীত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশন বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে। সেখানে পুরস্কার জিততে না পারলেও যে সম্মান, ভালোবাসা পেয়েছেন; তা অভাবনীয়। আনন্দ ভাগ করে নিতে তার অভিনয়ে পথচলার গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী সংবাদকর্মীদের জন্যে আয়োজন করেছিলেন এক আড্ডার। আমন্ত্রণপত্রে লেখা ছিল— আপনাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করতে চান ‘রেহানা’।

বিজ্ঞাপন

আমন্ত্রণপত্র পড়ে গুলশান-১ এর ঠিকানায় যাওয়ার আগে মনে হয়েছিল আড্ডায় থাকবে না কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন। ঠিক তাই; কোনো আড়ম্বর আয়োজন ছিল না। ঘরোয়া আয়োজনে টানা আড়াই ঘণ্টা একাই মাতিয়ে গেছেন বাঁধনহারা বাঁধন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় অকপটে বলেছেন, দেশের বিনোদন সাংবাদিকতা, ব্যক্তিজীবন, রেহানা হয়ে উঠার গল্প ও সদ্যই ভারতে শুটিং করা নেটফ্লিক্সের ছবি খুফিয়ার খুঁটিনাটি নিয়ে।

আজকের বাঁধন হয়ে ওঠার পিছনে সাংবাদিকদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করলেন। একই সঙ্গে বললেন, কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার সঙ্গে কথা না বলে। এতে তার ব্যক্তিজীবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

খুফিয়াতে অভিনয় করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে ভারতীয় সাংবাদিকদের। তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের সাংবাদিকতার পার্থক্য জানালেন এভাবে— আমাদের এখানে কাউকে যদি বলা হয়, নিউজটা প্রকাশের আগে আমাকে দেখিয়ে নিয়েন। তাহলে তিনি হয়তো ভালোভাবে নেন না কথাটা। কিন্তু তারা আমার ব্যক্তি জীবন নিয়ে প্রশ্ন করার পর তারা প্রকাশ করার আগে আমাকে ড্রাফট দেখিয়ে নিয়েছে। আর তারা ‘টু দ্য পয়েন্টে’ প্রশ্ন করে।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকতার আলাপ থেকে নিজেই চলে গেলেন ব্যক্তিজীবনে। জানালেন, ২০০৫ এর দিকে ব্যক্তিজীবনে বেশ বড় এক ঘটনার কারণে দুবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তারপর ২০০৬ এ লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগীতায় আসার পর তার জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে। এর জন্য প্রতিযোগীতার কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন।

২০১৪ এ ব্যক্তিজীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছিল বাঁধনের। সে সময়ে তাকে বেশ কয়েকবার পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছিল। কিছুটা তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। তখন জেদ চেপেছিলো, ঠিক করেছিলেন পুলিশ হবেন বিসিএস দিয়ে। কোচিংয়েও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন তার জীবনের ওই মুহূর্তে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে তার কাজ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর কাজ করলে বিসিএসের জন্য পড়া হবে না। তখন সরে আসলেন।

৪৩ তম বিসিএসের প্রিলিতে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে প্রশ্ন আসা প্রসঙ্গে উপরের ঘটনা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে বলেন, অনেকে হয়তো বিষয়টা নিয়ে ট্রল করছে। কিন্তু তারা জানে না বিষয়টা আমার জন্য কত বড় গর্বের।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশে মিডিয়া নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। বলা হয়, এখানে কেউ কারো বন্ধু নয়। কিন্তু এ নিয়ে বাঁধনের সরাসরি উত্তর, ‘আমার মেয়ের রক্ত মাংস গড়ে উঠছে মিডিয়ার টাকায়।’

অনেক কথায় তো হলো, কিন্তু আমন্ত্রণপত্রে তো বলা হয়েছিলো ‘রেহানা’ কথা বলবেন। তাহলে আমরা ওই প্রসঙ্গেই যাই।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর শুটিং হয়েছে কুমিল্লার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে। টানা দুমাস তারা শুটিং করেছেন। ইউনিটের সবাই বাইরে থাকলেও তিনি কলেজ হোস্টেলে ছিলেন। শুটিংয়ের সময়টাকে তিনি বললেন, ভয়ংকর একটা সময় গিয়েছে। এমনকি তিন-চার দিন পর তিনি শুটিং ফেলে চলে আসতে চেয়েছিলেন! শুরুতে সবার সঙ্গে অনেক ঝগড়াও করেছেন।

‘বলতে পারেন ছবির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ রীতিমত আমার উপর টর্চার করেছে। ধরেন যেদিন আমার মেন্টালি ডিস্টার্ব থাকার দৃশ্যের শুটিং থাকতো ওইদিন সকাল থেকে সেটে আমার সঙ্গে নানাভাবে খারাপ আচরণ করা হতো। কিন্তু আমি এরপরও ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, আমি পরে বুঝতে পেরেছি সাদ সবকিছু ন্যাচারাল করতে চেয়েছে, যার কারণে আমাকে চরিত্র অনুযায়ী মানসিক অশান্তিতে রেখেছিল’—বলেন বাঁধন।

বিজ্ঞাপন

পরিচালক সাদকে খুশি করা বেশ কঠিন ছিল। সকল দৃশ্যই এক টেকে নেওয়া হতো। দেখা যেত টানা ৫-৭ মিনিটের দৃশ্যও তিনি টানা ২০-২৫ বার দেওয়ার পরেও বলেছেন— হুম, চলে। এমনকি একটা দৃশ্য ৬৭ বার নেওয়া হয়ে এমন রেকর্ডও আছে।

সাদের সঙ্গে কাজ করার পর দেশ বা দেশের বাইরে যেখানেই কাজ করেন সেখানে সর্তক হয়ে গেছেন বাঁধন। যেনতেন কাজ আর করতে চান না স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি।

আড্ডায় খুব স্বাভাবিকভাবে প্রসঙ্গ আসে বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’ নিয়ে। স্পষ্টত জানিয়ে দিলেন, চরিত্র বুঝে শুনেই তিনি ছবিটিতে কাজ করছেন। অন্য কারা কী কারণে ছবিটি করছে না তা তিনি জানেন না।

বাঁধন বললেন, ‘ছবিটিতে আমার চরিত্র বেশ ছোট। মাত্র ১০ দিনের সিডিউল। এর মধ্যে ৭ দিন দিল্লীতে শুটিং করেছি। এরপর মুম্বাইয়ে কাজ করবো।’

হিন্দিতে কথা বলার ক্ষেত্রেও তাকে বাংলাদেশি একসেন্টে বলার সুযোগ দিয়েছেন পরিচালক। এমনকি কানে সে জামদানি পরেছিলেন সেটিও ছবিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। পোশাক হতে শুরু করে অনেক কিছুই তারা তাকে জিজ্ঞেস করে ঠিক করছে। এক কথায় বিশাল ভরদ্বাজ ও তার টিমের প্রতি মুগ্ধ।

অনেক কথায় হলো, এবার কেক আনা হলো। সেখানে লেখা, ‘লাভ ইউ অল’। বাংলাদেশের মিডিয়াতে কাগজে কলমে ১৫ বছর হলেও, তিনি মনে করেন তার পথচলা শুরু হয়েছে ২০১৪ এর পর। এ পথা চলায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দিয়ে যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, তা আজীবন পেতে চান। সকল বাধা, বিপত্তি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে চান। হতে চান বাঁধনহারা।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন