বিজ্ঞাপন

বিজয়ের আগে বেদনার স্মৃতি

December 13, 2017 | 11:35 pm

আসাদ জামান

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:  ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। চারদিকে শত্রু পতনের সংবাদ। একটু একটু করে হানাদারমুক্ত হচ্ছে প্রিয় স্বদেশের ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়-পতাকা উড়িয়ে ঘরে ফিরছেন। ৫৫ হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে ঝংকৃত হচ্ছে বিজয়ের গান। মুক্তাঞ্চলে চলছে বিজয় উল্লাস।

যুদ্ধফেরত সন্তানকে বুকে ধরে মায়ের আনন্দ-অশ্রু, পিতার গর্বিত সুখ। বীরযোদ্ধা স্বামীকে ফিরে পেয়ে স্ত্রীর বাঁধনহারা পবিত্র অনুভূতি, সন্তানের মনে পৃথিবীর ‘সব’ পাওয়ার  আনন্দ। সর্বপরি মুক্ত স্বদেশে বুক ভরে নি:শ্বাস নেওয়ার সুখানুভূতিতে বিভোর পুরো জাতি! ঠিক এমনি এক আনন্দক্ষণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা দেয় মরণ কামড়!

ফলে চূড়ান্ত বিজয়ের এক দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে রচিত হয় এক বেদনাঘন দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল পরাক্রমের সামনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। বাঙালি জাতিকে মেধা-মননশূন্য করতে বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঘাতকদের এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার-আলবদর বাহিনী।

বিজ্ঞাপন

রায়েরবাজার পরিত্যাক্ত ইটখোলা ও মিরপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়  নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বিজয় অর্জনের পর এসব বধ্যভূমিতে একে একে পাওয়া যায় হাত-পা-চোখ বাঁধা দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। হত্যার আগে তাঁদের ওপর যে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়, তা অনুধাবন করে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্ববিবেক।

পৃথিবীর ইতিহাসে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য কারণ সবার কাছেই আজ পরিষ্কার। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মনে করেছিল, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেওয়া যাবে। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সে লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রধান সেনাপতিদের বিচার হয়েছে। কার‌্যকর হয়েছে বিচারের রায়। বাঙালি জাতি গত ৪৬ বছর ধরে বিজয় উৎসবের আগে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিতে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। দিন দিন নতুন প্রজন্মের কাছে  আদর্শের অনুপ্রেরণা হয়ে শক্তি যোগাচ্ছেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও কর্ম। আর রাজাকার-আলবদর ও তাদের উত্তরসূরিরা পরিণত হচ্ছে ঘৃণার্ঘ্য মিনারে!

প্রতি বছরের মতো এবারও মিরপুর ও রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে  পুষ্পস্তবক অর্পণ ও নানা আয়োজনের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন অগুনতি মানুষ। ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামবে মিরপুর ও রায়েরবাজারের স্মৃতিসৌধে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, সর্বস্তরের মানুষ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন—বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শরিক হবেন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে।

কর্মসূচি: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং ৮ টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে। সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং আগামী ১৭ ডিসেম্বর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে।

বিজ্ঞাপন

দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯ টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। বিকেল ৩ টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তেন আলোচনা সভা করবে দলটি।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, উদীচী, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সারাবাংলা/এজেড

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন