বিজ্ঞাপন

প্রিমিয়ার লিগে নতুনের কেতন

April 7, 2018 | 2:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

১.
একদিক থেকে বলতে গেলে একদমই আনকোরা পেসারটি। লিস্ট ‘এ’ তে মাত্র দুই ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে নেমে গিয়েছিলেন আবাহনীর বিপক্ষে। যেখানে আবার খেলেছেন বিজয়, শান্ত, মিঠুন, মোসাদ্দেকের মতো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওঠানো ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ইয়াসিন আরাফাত মিশু গাজী গ্রুপ ক্রিকেটারসের হয়ে যা করলেন, সেটা ঢাকা লিগেই আগে কেউ দেখেনি। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে বাংলাদেশের কেউ প্রথমবার নিলেন ৮ উইকেট। অথচ মিশুর বয়স ২০ পেরোয়নি। কিন্তু ধুমকেতুর মতো ঠিকই সেদিন সব মনযোগ কেড়ে নিলেন নিজের দিকে।

২.
মিশু ওই ম্যাচের আগে পরে আর তেমন কিছু করতে পারেননি, তবে অনেক কিছু করার সময় এখন পড়ে আছে। আর এবারের প্রিমিয়ার লিগে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাওয়া তরুণদের সংখ্যাও কম নয়। সেখানে সবার আগে জ্বলজ্বল করার কথা নাজমুল হোসেন শান্তর নাম।

শান্তর নাম দেখে হয়তো ভাবছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে তো কয়েক বছর ধরেই ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। কথাটা ভুল নয়, সেই ২০১৪ সালে লিস্ট ‘এ’ তে অভিষেক হয়েছিল এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। তবে লিগে নিজেকে প্রথম চেনাতে শুরু করেছেন ২০১৬ থেকে। এসবের মধ্যেও ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, শান্তর বয়স এখনও ২০ পেরোয়নি। জাতীয় দলের অভিষেক নিউজিল্যান্ড সফরে অনেকটা পাকেচক্রে হয়ে গিয়েছিল বটে, কিন্তু শান্ত সেই সুযোগ হাতছাড়া করার পর হারিয়ে যাননি। আবাহনী সতীর্থ মাশরাফি বিন মুর্তজা যেমন বলেছেন, শান্ত হতে যাচ্ছেন লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।

বিজ্ঞাপন

৩.
সেই লম্বা দৌড়ে তরুণদের মধ্যে আর কে কে থাকবেন বলা মুশকিল। তবে প্রিমিয়ার লিগে এবারের নতুন কেতন উড়েছে পতপত করেই। বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাচ থেকে একঝাঁক খেলোয়াড়দের বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করাটা শুভলক্ষণ হিসেবেই দেখা যায়।

সেখানে শুরুর দিকে থাকা উচিত কাজী অনীকের নাম। গত বছর লিস্ট ‘এ’ অভিষেক হয়েছিল অনীকের, বিপিএল অভিষেকও সেবার। তবে সুযোগ খুব বেশি জোটেনি এই বাঁহাতি পেসারের, এবারই প্রথম লিগে নিজেকে চেনানোর উপলক্ষ পেয়েছেন। ২৮ উইকেট নিয়ে সেটি কাজে লাগিয়েছেন দুই হাত ভরেই। লিগে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে চার জনের। তবে তার চেয়ে কম স্ট্রাইক রেট (১৯.১০) আছে মাত্র দুজনের।

৪.
সেই দুজনের একজনও এবার এসেছেন অমিত সম্ভাবনা নিয়ে। রবিউল হকের বয়স এখনো ১৯ পেরোয়নি, লিস্ট ‘এ’ অভিষেক হয়েছে এবারই। শেখ জামালের হয়ে এই পেসার শুরু থেকেই দারুণ ধারাবাহিক। মাত্র ১৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে এবার পেয়েছেন ২৭ উইকেট। আবাহনীর সঙ্গে ৩ উইকেট নিয়ে তো দলকে শিরোপার সুবাসও এনে দিচ্ছিলেন। সেটা হয়নি, তবে রবিউল ঠিকই নিজের সুবাসটা রেখে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

৫.
মাত্রই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা দলের আরও দুজনের নাম অন্তত আলাদা করে বলতেই হয়। একজন জাতীয় দলের অভিষেকের কাছাকাছিই চলে গিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ শেষ করার আগেই উড়ে এসে যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। নাঈম হাসান গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামের ক্যাম্পেই প্রথম চোখ কেড়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দারুণ করার পর হুট করেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। তবে অভিষেক আর হয়নি এই অফ স্পিনারের। তাতে দমে যাননি, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটারসের হয়ে এবারের বিপিএলে ১৬ ম্যাচে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। ডানহাতি অফ স্পিনারদের মধ্যে তার উইকেটই সবচেয়ে বেশি, স্পিনারদের মধ্যে নাঈমের চেয়ে বেশি উইকেট আছে মাত্র তিন জনের।

নাঈমের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এক সতীর্থও দেখাচ্ছেন আশার আলো। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের বিশ্বকাপটা ভালো যায়নি একদমই, তিন ম্যাচে করেছিলেন ৩৫ রান। তবে প্রিমিয়ার লিগে খেলাঘরের স্বপ্নযাত্রার অন্যতম সারথী ছিলেন, ১৬ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৬০৯ রান। তার চেয়ে বেশি রান আছে মাত্র আটজনের। তবে উইকেটের পেছনে অঙ্কনই সেরা, লিগের সর্বোচ্চ ২৮ ডিসমিসাল তার। ২০টি ডিসমিসালই নেই আর কোনো উইকেটকিপারের। তার সতীর্থ তৌহিদ হৃদয় ১১ ম্যাচে ৪৬৬ রান করে জানান দিয়েছেন সম্ভাবনা। আর ওই দলের অধিনায়ক সাইফ হাসান অবশ্য খুব সপ্রতিভ ছিলেন না। তবে তারকাঠাসা আবাহনীতে ১২ ম্যাচে ৪৬৫ রান করে জানান দিয়েছেন, তিনিও পথেই আছেন।

৬.
এদের বাইরে আরেকজনের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বাঁহাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমও এখন দুরন্ত ১৮র কোঠায়। তবে ব্যাটিং দেখে তা বোঝার উপায় নেই। আবাহনীর হয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও নাঈমের ব্যাট আশা জাগিয়ে রেখেছিল রূপগঞ্জের, পর পর তিন বলে তিন ছয়ে এমনকি ম্লান করে দিয়েছিলেন অন্য পাশের সঙ্গী মুশফিকুর রহিমকেও। অভিষেক মৌসুমেই ১২ ম্যাচে করেছেন ৫৫৬ রান। জাতীয় দল এখনই না হোক, এইচপি দলের জন্য নিজের দাবিটা জানিয়েছেন জোরেশোরেই।

তবে নাঈমদের আরও একটা বড় মঞ্চ সামনে। দুই দিন পরেই শুরু বিসিএল, নিজেদের লম্বা দৌড়ের ঘোড়া প্রমাণের দারুণ একটা সুযোগ তা। অনীক, শান্তরা সেখানে নিশ্চয় আরও বড় কিছু করতে চাইবেন!

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন