বিজ্ঞাপন

‘বাবার ইচ্ছায় আইনজীবী হয়েছি’

April 7, 2018 | 6:41 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: “আমার ছোটবেলায় কমপক্ষে একবার বাবা পরিবারের সবার সঙ্গে খাবার খেতেন। সে রকম একদিন খাবারের টেবিলে বাবা আমার ভাই ও বোনকে প্রশ্ন করলেন তারা বড় হয়ে কে কী হতে চায়, সবাই তাদের পছন্দ জানিয়ে দিলো। শুধু আমাকে কোনো প্রশ্ন করেননি বাবা- আমাকে বললেন, তোমার কোনো চয়েস নেই। তোমাকে আইনজীবী হতে হবে। শুধু তাই নয়, আমি যেভাবে বলব- সেইভাবেই আইনজীবী হতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে আপনি যেমন বলবেন।”

শনিবার (৭ এপ্রিল) অফিসার্স ক্লাবে নতুন আইনজীবীদের হাতে সনদ তুলে দেন আইনজীবী আনিসুল হক। নবীন আইনজীবীদের মন্ত্রী জানান তার আইনজীবী হয়ে ওঠার গল্প। শুরুতেই তিনি তার বাবাকে স্মরণ করেন।

আইনমন্ত্রীর বাবা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গঠন করা কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।
বাবা বললেন, দেখো আমি ইংরেজিতে বিএ পাস করেছি, ইংরেজিতে মাস্টার্স পাস করেছি, তোমাকেও তাই করতে হবে। তারপরে তোমাকে এলএলবি পড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাবার ইচ্ছা মতো তা-ই করলাম। পড়া শেষ করার পরে আমি বাবার কাছে জানতে চাইলাম, আপনি আমাকে এই রাস্তায় আনলেন কেন- আমার চার বছর সময় নষ্ট হয়েছে।

তিনি আমাকে বললেন, তুমি আইনজীবী হতে পারো- এটা আমি মানি। কিন্তু আইনজীবী হিসেবে আয় করে সংসার চালাতে পারবে- এটা আমি বলতে পারব না। সেই জন্য তোমাকে আমি ইংরেজিও পড়িয়েছি। তুমি যদি আইনজীবী হতে না পারো, সংসার চালাতে না পারো, তাহলে যেন অন্তত পক্ষে তুমি একজন লেকচারার হতে পারো।

আরেকটি কারণে ইংরেজি পড়িয়েছি, একজন আইনজীবীর দু’টি যোগ্যতা থাকা খুব দরকার- ড্রাফটিংয়ে পরিষ্কারভাবে মূল কথা তুলে আনতে পারা এবং ঘটনার ধারাবাহিক বর্ণনা করতে পারা। বিচারক যেন ঠিক ঠিক সব বুঝতে পারে। সেই জন্য তোমাকে ইংরেজি পড়িয়ে তোমাকে এইখানে এনেছি।

বিজ্ঞাপন

আইনমন্ত্রী বলেন, আরেক দিন, তখন আমি আইনজীবী হয়ে গেছি। হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম হাসানের চেম্বারে একটা রিট পিটিশন ছিল। আরেকটি মামলা ছিল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে (জামিনের আবেদন দেওয়ার কথা ছিল)। আমি দুপুরে গেলাম ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। যাওয়ার সময় দেখলাম, আমার বাবা ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট থেকে এসে হাইকোর্টে ঢুকেছেন। ভাবলাম ভালোই হলো, আমার ফিরতে যদি দেরি হয়ে যায়- বাবা শুনানি করে দিতে পারবেন। আমি জ্যামে আটকা পড়লাম। আমাদের সহকারীকে বললাম, বাবাতো আছেন, তাকে বলেন আমার একটু দেরি হয়ে গেছে- যেন মামলার শুনানি করে দেন। একই চেম্বারের মামলা ছিল।

কিছুক্ষণ পরে জানলাম, বাবা মামলার শুনানি না করে বাসায় চলে গেছেন। আমি সেদিন বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে হাইকোর্টে পৌঁছেছি। তখন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে টাই পড়ে যাওয়া যেত। আমি কোর্টে ঢুকে টাই খুলে দ্রুত মামলার শুনানি করি। আল্লাহর রহমতে ওই দিন আমি ওই মামলায় রুল আর স্টে পেয়েছিলাম।

পরে বাসায় গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম। এটা আপনি কী করলেন। বাবা তখন বললেন, তোমাকে একটা গল্প বলি। ছেলের বাবাকে এক মা বলছেন, ছেলেকে ব্যবসা শেখাতে। একদিন বাবা রাজি হলেন। ছেলেটিকে বললেন, আমি যা বলব তাই করতে হবে। সে অনুযায়ী, বাবা ছেলেটিকে চালে উঠতে বললেন। তাই হলো। এবার তিনি ছেলেকে বললেন, তুমি লাফ দাও আমি ধরব। ছেলে লাফ দিলো ঠিকই, কিন্তু বাবা হাত সরিয়ে নিলেন। পড়ে গিয়ে ছেলেটির পা ভেঙে গেল। ছেলেটিকে তার বাবা বললেন এটা তুমি কী করলে! ব্যবসায় কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না- বাবাকেও না।

আমার বাবা আমাকে বললেন, অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। এই অভিজ্ঞতাটা তোমাকে দেওয়ার জন্য এটা করেছি। তুমি আমার ছেলে, তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারতাম। তাতে তোমার শেখা হতো না।

বিজ্ঞাপন

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বাবা আজ নেই। কিন্তু বাবার এই কথাগুলো জীবনে কখনো ভুলবো না।

সারাবাংলা/এজেডকে/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন