বিজ্ঞাপন

দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে গণঅনশন ভাঙল বিএনপি

November 20, 2021 | 5:26 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী গণঅনশন কর্মসূচি শেষ করেছে বিএনপি। শনিবার (২০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় সমাপণী বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর হাত থকে পানি পান করে অনশন ভাঙেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী ২২ নভেম্বর দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি পালন করব আমরা। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে এ সমাবেশ হবে।

এরপরও যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে আরও কর্মসূচি আসবে, জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে গুরুতর অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন। আজকে এই গণঅনশন কর্মসূচি হচ্ছে আমাদের নেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের দাবিতে। কিন্তু এই সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করছে না। আমরা বারবার অনুরোধ করছি, দেশের মানুষ অনুরোধ করছে, রাজনৈতিক দলগুলো অনুরোধ করছে, তারপরও সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। গ্রাম থেকে গ্রামে, বন্দরে বন্দরে চারণ কবির মতো দীর্ঘ ৯ বছর গণতন্ত্রের গান গেয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কোনো দিন কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজীবন সংগ্রামী নেত্রী সকল অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটিয়েছেন। ২০০৭ সালে ১/১১ এর চক্রান্তমূলক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার, গণতন্ত্রকে বন্দি এবং দেশকে বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়িযেছেন। আর সে কারণেই তাকে আর তার দলকে নির্মূল করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ। যদিও সরকার সাময়িকভাবে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে, কিন্তু তিনি স্বাধীন জীবনে ফিরতে পারেন নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে না যাওয়ার শর্ত থাকায় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারছেন না।’

 

নয়াপল্টনে গণঅনশনে বিএনপি

 

গণঅনশনে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আব্দুল্লাহ আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন-নবী-খন সোহেল, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু ও উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্যরা।

বিজ্ঞাপন

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের আহ্বায়ক হেলাল খান, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।

জোট শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।

কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থকরা নয়াপল্টনে এসে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক গণঅনশনে অংশ নেন।

বিএনপির পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিল। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল তারা।

গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এবছর এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত টানা ৫৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকার সেই আবেদন আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হলো- সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। বিদেশে যেতে হলে কারাগারে ফিরে আবেদন করতে হবে।

সারাবাংলা/এজেড/এএম/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন