বিজ্ঞাপন

তাইজুলের ৭ উইকেটে ৪৪ রানের লিড বাংলাদেশের

November 28, 2021 | 3:06 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

চট্টগ্রাম টেস্টের ২য় দিনে যেখানে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ রানে শেষ করেছিল পাকিস্তান। তবে ৩য় দিনে এসে পাল্টে গেল পরিস্থিতি। তৃতীয় দিনে এসে ঘূর্ণি জাদুতে তাইজুল ইসলাম নেন ৭টি উইকেট, তার সঙ্গে এবাদতের দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ১৪১ রানে সবকটি উইকেট হারায় পাকিস্তান। এতেই প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান অলআউট হয় ২৮৬ রানে। বাংলাদেশ লিড পায় ৪৪ রানের। ৪৪.৪ ওভার বল করে ১১৬ রান দিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল সকাল তাইজুল ইসলাম আঘাত হানলেন পাকিস্তানের ওপর। দিনের প্রথম ওভারে বল হাতে এসেই ৫ম বলে ফেরালেন গতদিন ৫২ রানে অপরাজিত থাকা আব্দুল্লাহ শফিককে। আর পরের বলেই তুলে নলেন আজহার আলীকে। দিনের প্রথম ওভারে দুটি সফলতায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ।

তাইজুলময় এক সকাল (ছবি: শ্যামল নন্দী)

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচটির তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হয়েছে সাত মিনিট আগে। আগের দিন খানিকটা আগে খেলা শেষ হয়েছিল বলে আজ সাত মিনিট এগিয়ে আনা হয় তৃতীয় দিনের খেলা। ওই সাত মিনিট জুড়ে চলল বাংলাদেশিদের উল্লাস।

দিনের প্রথম ওভারটি করতে এসেছিলেন তাইজুল ইসলাম। ওভারের পঞ্চম বলটি লেগ স্ট্যাম্পে পিচ করে অফের দিকে টেনে আনলেন তাইজুল। আগের দিন দারুণ ব্যাটিং করে ৫২ রানে অপরাজিত থাকা অভিষিক্ত আব্দুল্লাহ শফিকি তাতে পুরোপুরি পরাস্ত। বল আঘাত হানল প্যাডে। বাংলাদেশি ফিল্ডারদের জোড়ালো আবেদন। আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার। পরে পাকিস্তান রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি, শুধু রিভিউটিই নষ্ট হয়েছে সফরকারীদের।

বিজ্ঞাপন

পরের বলে অভিজ্ঞ আজহার আলীকে ঠিক একই ভাবে বোকা বানালেন তাইজুল। ওভারের ষষ্ঠ ডেলিভারিটিও অনেকটা একই রকম ছিল। নতুন ক্রিজে আসা আজহার সেটি সামলাতে পারেননি। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নেওয়ার সাহসও দেখাননি আজহার আলী।

৬৮তম ওভারে তাইজুলের প্রথম বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান তুলে নিলেন আবিদ আলী। আর তাতেই উঠে এসেছে আবিদের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। ২০৯ বল খেলে সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। চার মেরেছেন নয়টা, ছক্কা দুটি।

বিজ্ঞাপন

এরপর বাবর আজম একটি চার মেরে হাত খোলার আভাস দেন। যা দিনে পাকিস্তানের প্রথম বাউন্ডারি ছিল। কিন্তু কীসের কী! উল্টো দুর্দান্তভাবে ফিরে এলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজের একটু দ্রুতগতির সোজাসুজি বলে পরাস্ত হলেন বাবর। বোল্ড হলেন। ৪৬ বল খেলে ১০ রান করেছেন বাবর।

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে পাকিস্তান তখন কিছুটা ব্যাকফুটে। ধীরে সুস্থে রান তুলছিলেন আবিদ এবং ফাওয়াদ আলম। কিন্তু ফাওয়াদকেও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে দিলেন না তাইজুল। শফিক, আজহারের পর তাইজুলের শিকার ফাওয়াদ আলম। তাইজুলের বলে রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডে লেগে উইকেটের পেছনে লিটনকে ক্যাচ দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। ১৫ বলে ৮ রান করে আউট হয়েছেন ফাওয়াদ।

তবে চার উইকেটের আনন্দ নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গেলেও, এর সঙ্গে থেকে গেছে সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলির ক্যাচ মিসের হতাশাও। প্রথম স্লিপে আবিদের ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তখন ১১৩ রানে খেলছিলেন আবিদ। সেখান থেকে ১২৭ রানে শেষ করেছেন প্রথম সেশন।

বিজ্ঞাপন

মধ্যাহ্ন বিরতির পর স্পিন সরিয়ে পেসারদের আক্রমণে এনেছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করলেন এবাদত হোসেন। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেছেন তিনি। ৩৮ বলে ৫ রান করে আউট হয়েছেন রিজওয়ান।

শতক হাঁকানো আবিদ আলীকেও এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেললেন তাইজুল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেনি পাকিস্তান। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। ২৮২ বলে ১৩৩ রান করে ফিরলেন আবিদ। ১২টি চারের পাশাপাশি মেরেছেন দুটি ছক্কা।

আবিদ ফেরার পর ক্রিজে নামেন হাসান আলী। কিছু বড় শট খেলে তাইজুল ইসলামের বোলিং এলোমেলো করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে যেন নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন এই বাঁ-হাতি স্পিনারই। ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন হাসান আলী। কিন্তু তাইজুলের ফ্লাইট ও টার্নে বলের লাইন মিস করেন। স্ট্যাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ কাজে লাগান লিটন দাস। ৮ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ১২ রান করেন হাসান। ২২৯ রানে ৭ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

হাসানের উইকেট নিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। এটি ক‍্যারিয়ারে ৯ম বারের মতো পাঁচ উইেকট তাইজুলের। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার।

প্রথম সেশনেও আঁটসাঁট বোলিং করেছিলেন। কিন্তু তখন স্ট্যাম্পে খুব একটা বল রাখেননি এবাদত হোসেন। তাই সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি ব‍্যাটারদের। দ্বিতীয় সেশনে লাইনে একটু পরিবর্তন এনে পেলেন সাফল‍্য। সাজিদ খানকে বোল্ড করে নিলেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। পাকিস্তান তখন ২৪০ রানে হারায় ৮ম উইকেট।

৯ম উইকেটে নুমান আলী এবং ফাহিম আশরাফ মিলে ১৭ রান যোগ করেন। এরপর ১০৩.৪ ওভারে বল করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ করেন তাইজুল। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নেন সাজিদ। কিন্তু রিভিউয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই রয়ে যায়। ২৫৭ রানে ৯ম উইকেটের পতন হয় পাকিস্তানের।

শেষ দিকে এসে শাহিন শাহ আফ্রিদি এবং ফাহিম আশরাম মিলে ২৩ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়লে বাংলাদেশের লিড কমে যায়। তবে তাইজুল ইসলাম ফাহিম আশরাফের উইকেট তুলে নিলে ২৮০ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। এতেই ৪৪ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড

১ম ইনিংস

বাংলাদেশ: ৩৩০/১০; (সাইফ হাসান ১৪, সাদমান ইসলাম ১৪, মুমিনুল ৬, শান্ত ১৪, লিটন ১১৪, ইয়াসির ৪, মুশফিক ৯১, তাইজুল ১১, রাহী ৮, এবাদত ০ এবং মিরাজ ৩৮*); (আফ্রিদি ২৭-৮-৭০-২, হাসান আলী ২০.৪-৫-৫১-৫, ফাহিফ-১৪-২-৫৪-২, সাজিদ-২৭-৫-৭৯-১, নুমান-২৬-৬-৬২-০)।

পাকিস্তান: ২৮৬/১০; (আবিদ আলী ১৩৩, আব্দুল্লাহ শফিক ৫২, আজহার আলী ০, বাবর আজম ১০, ফাওয়াদ আলম ৮, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫, ফাহিম আশরাফ ৩৮, হাসান আলী ১২, সাজিদ খান ৫, নুমান আলী ৮, আফ্রিদি ১৩*); (রাহী ১২-০-৪১-০, এবাদত-২৬-৭-৪৭-২, তাইজুল ৪৪.৪-৯-১১৬-৭, মিরাজ ৩০-৭-৬৮-১ মুমিনুল ৩-০-১২-০)।

বাংলাদেশ ৪৪ রানের লিড পেয়েছে।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন