বিজ্ঞাপন

সকালের স্বপ্ন বিকেলেই পরিণত দুঃস্বপ্নে

November 28, 2021 | 5:58 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

সাগরিকায় তৃতীয় দিনের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। তাইজুলের ঘূর্ণিতে প্রথম সেশনেই ৪ উইকেট। ধারাবাহিকতা অব্যাহত দ্বিতীয় সেশনেও। তাইজুলের সঙ্গে যোগ দিলেন এবাদতও। পাকিস্তানের টেলএন্ডারদের প্রতিরোধের পরও তাইজুল ইসলামের ৭ উইকেটে পাকিস্তান গুটিয়ে গেল ২৮৬ রানে। আরেকটু বেশি প্রত্যাশা থাকলেও টাইগাররা লিড পেল ৪৪ রানের। সেখান থেকে শেষ সেশনে একটু ‘সেন্সিবল’ ব্যাটিংয়ে ম্যাচটাকে নিয়ন্ত্রণে আনাই ছিল টপ অর্ডার ব্যাটারদের কাজ। কিন্তু শাহিন আফ্রিদি আর হাসান আলীর বোলিংয়ের সামনে ‘অবিবেচকের মতো’ ব্যাট চালানোর ধারাবাহিকতা ছিল অব্যাহত। তাতে সকালের যে রঙিন স্বপ্ন মাঝের সেশনে রাঙা হয়েছিল, শেষ বিকেলের ম্লান আলোয় তা পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। টপ অর্ডারের আরও এক ব্যর্থতা কাহনে ২৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস। কোনোমতে ৩৯ রান তুলে দিন পার করা মুমিনুলদের লিড দাঁড়িয়েছে তৃতীয় দিন শেষে ৮৩ রানের।

বিজ্ঞাপন

তাইজুলের ৭ উইকেটে ৪৪ রানের লিড বাংলাদেশের

ওপেনার সাদমানকে বেশ ভালোই পরীক্ষা করলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। টানা দু’টি বল অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন। একটি ভেতরে ঢুকেছিল। অন্যটি আউটসুইং করে বেরিয়ে গেছে। পরের বলটাই করলেন স্টাম্পে এবং অ্যাঙ্গেল ধরে রেখে আরও ভেতরে ঢুকেছে। এর এতেই পরাস্ত সাদমান। তার রক্ষণে ধস নামল। এলবিডব্লু হয়ে ফিরলেন সাদমান। ইনিংসের ৫ম ওভারের তৃতীয় বলে সাদমান ফিরলেন ১২ বলে ১ রান করে। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১৪ রান।

এরপর উইকেটে এলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাদমানকে ফেরাতে একটু পরিকল্পনা করতে হয়েছিল আফ্রিদিকে, নাজমুলের ক্ষেত্রে সেটাও দরকার হয়নি। টানা দুটি বল অফ স্তাম্পের বাইরে করেছেন। দ্বিতীয় বলটিতেই খোঁচা দেওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি নাজমুল। প্রথম স্লিপে ধরা পড়েছেন। ফিরলেন শূন্য রানে। ১৪ রানেই বাংলাদেশ হারাল দুই উইকেট।

বিজ্ঞাপন

চারে ব্যাট করতে আসা অধিনায়ক মুমিনুলের ওপর আশা ছিল ইনিংসটা মেরামতের। পারলেন না তিনিও। আগের বলে সাইফের ক্যাচ ঝাঁপিয়েও ধরতে পারেননি ফিল্ডার। পরের বলটাও মুমিনুলকে কাঁপিয়ে দিল। হাসান আলীর বলটা ঠিকভাবে খেলতে পারেননি। তার ব্যাটের স্পর্শ নিয়ে বল চলে গিয়েছিল মিডউইকেটে। এবার আজহার আলী ঠিকঠাক ডাইভ দিয়েছেন। সময়মতো বল হাতে তুলে নিয়েছেন। ২ বলে দু’বার ক্যাচ তুলে শূন্য রানে ফিরলেন মুমিনুল হক।

মুমিনুল ফেরার পর উইকেট ধরে রেখে লড়ছিলেন সাইফ হাসান এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। দুই জনে মিলে ড্রিংকস পর্যন্ত সময়টুকু পার করে দিলেন আর কোনো বিপদ ছাড়াই। তবে ড্রিংকসের পরেই প্রথম ইনিংসে বাউন্সার সামলাতে না পেরে আউট হওয়া সাইফ দ্বিতীয় ইনিংসেও শাহিন শাহ আফ্রিদির বাউন্সারেই আউট হলেন। ১৮ রান করা সাইফ ফিরলেন বাংলাদেশের দলীয় ২৫ রানে।

বিজ্ঞাপন

সাইফ ফেরার পর উইকেটে আসেন ইয়াসির। দ্বিতীয় ইনিংসেই ছয়ে নামলেন ইয়াসির। তবে এর পেছনে লিটন দাসের ক্লান্তি ভূমিকা রেখেছে। ১১৫ ওভার উইকেটের পেছনে থাকার কারণেই তাকে এত দ্রুত ব্যাটিংয়ে নামায়নি বাংলাদেশ। ইয়াসিরকে একটু নড়বড়ে মনে হলেও মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে শেষ পর্যন্ত দিন পার করে দিয়েছেন। ইনিংসের ১৯তম ওভারের পর আলো কমে আসার কারণে আম্পায়াররা মনে করলেন খেলা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়। এতেই চট্টগ্রামে শেষ হলো তৃতীয় দিন।

৪ উইকেটে ৩৯ রান তুলে দিনের শেষ টানে বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে ইয়াসির আলী রাব্বি ও মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১৪ রানের জুটি গড়ে। মুশফিক ১২ আর ইয়াসির ৮ রানে ব্যাট করছেন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রতিটি দিনেই প্রথম সেশনে উইকেট পতনের যে ধারাবাহিকতা, সেটা ঠেকানোই যে এই দু’জনের প্রধান এবং একমাত্র দায়িত্বতা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

সব মিলিয়ে অবশ্য তৃতীয় দিনটা বলা যায় ছিল বোলারদেরই। দুই দলের বোলাররা মিলে তুলে নিয়েছেন ১৪ উইকেট, ৭৭ ওভার ৪ বলে রান উঠেছে মাত্র ১৮০। আর এই ১৪ উইকেটের অর্ধেক— ৭টিই গেছে তাইজুলের ঝুলিতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড

বিজ্ঞাপন

১ম ইনিংস

বাংলাদেশ: ৩৩০/১০; (সাইফ হাসান ১৪, সাদমান ইসলাম ১৪, মুমিনুল ৬, শান্ত ১৪, লিটন ১১৪, ইয়াসির ৪, মুশফিক ৯১, তাইজুল ১১, রাহী ৮, এবাদত ০ এবং মিরাজ ৩৮*); (আফ্রিদি ২৭-৮-৭০-২, হাসান আলী ২০.৪-৫-৫১-৫, ফাহিফ-১৪-২-৫৪-২, সাজিদ-২৭-৫-৭৯-১, নুমান-২৬-৬-৬২-০)।

পাকিস্তান: ২৮৬/১০; (আবিদ আলী ১৩৩, আব্দুল্লাহ শফিক ৫২, আজহার আলী ০, বাবর আজম ১০, ফাওয়াদ আলম ৮, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫, ফাহিম আশরাফ ৩৮, হাসান আলী ১২, সাজিদ খান ৫, নুমান আলী ৮, আফ্রিদি ১৩*); (রাহী ১২-০-৪১-০, এবাদত-২৬-৭-৪৭-২, তাইজুল ৪৪.৪-৯-১১৬-৭, মিরাজ ৩০-৭-৬৮-১ মুমিনুল ৩-০-১২-০)।

২য় ইনিংস

বাংলাদেশ: ৩৯/৪; (সাদমান ১, সাইফ ১৮, শান্ত ০, মুমিনুল ০, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮*); (শাহিন আফ্রিদি ৬-৪-৬-৩, হাসান আলী ৫-০-১৯-১, ফাহিম ৩-১-৬-০, নুমান ৪-২-৭-০, সাজিদ ১-০-১-০)।

বাংলাদেশ এগিয়ে ৮৩ রানে।

 

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন