বিজ্ঞাপন

বুস্টার ডোজ নিয়ে মুখোমুখি পরামর্শক কমিটি ও নাইট্যাগ

December 18, 2021 | 8:20 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয় নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন রূপ ওমিক্রন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তকরণের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও দুইজনের কোভিড-১৯ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতন বাংলাদেশেও নানারকম পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই ভ্যারিয়েন্টের প্রতিরোধে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ৬০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ইতোমধ্যেই দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। তবে এখনই এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের দিকে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি।

নাইট্যাগ (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) সদস্যসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের গঠন করা নাইট্যাগ দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই কমিটিটি দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত। ইতোপূর্বে দেশে সরকার ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র পক্ষ থেকে নাইট্যাগের কাছে সুপারিশ চাওয়া হলে তারা পরামর্শ জানায়।

বিজ্ঞাপন

দেশে অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে এই কমিটির কাছে পরামর্শ জানতে চাওয়া হয়। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই নাইট্যাগের একটি বৈঠকে অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এই কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে সরকার নানা পরামর্শ চায় ও আমরা সেটা পর্যালোচনা করে দেই। সরকারের পক্ষ থেকে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ভ্যাকসিনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আমরা সে বিষয়ে পরামর্শ জানাই। নাইট্যাগ প্রথম থেকেই মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে ভ্যাকসিনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সেই মতামত পর্যালোচনা করে সরকার সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

তবে এর আগে নাইট্যাগের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া নিয়ে দুই ধরণের সিদ্ধান্ত দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

৩০ নভেম্বর নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে তিনি জানান, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

১০ ডিসেম্বর সারাবাংলায় ‘পরামর্শক কমিটির অভিমত— এখনই বুস্টার ডোজ নয়’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে জানানো হয়, এখনই এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের দিকে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি। নাইট্যাগ (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) সদস্যসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। একইসঙ্গে বর্তমানে দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের বড় একটি অংশ এখন পর্যন্ত এক ডোজ ভ্যাকসিনই পাননি। এ অবস্থায় বুস্টার ডোজের সিদ্ধান্ত হবে বৈষম্যমূলক।

নাইট্যাগের সভাপতি অধ্যাপক ডা. চৌধুরী আলী কাওসার সারাবাংলাকে বলেন, অনেক দেশেই বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এটিকে অনেকে থার্ড ডোজও বলা হয়। কিন্তু সেসব দেশগুলোতে ভ্যাকসিন কভারেজ অনেক বেশি। অর্থাৎ দেশগুলোতে অনেক বেশি মানুষকে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমেরিকা ও চীনে বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে এখন। আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সেটা দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ডা. চৌধুরী আলী কাওসার আরও বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে— প্রাথমিক পর্যায়ে দুই ডোজ ভ্যাকসিন অনেককেই দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২২ থেকে ২৩ শতাংশকে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা, ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা।

বুস্টার ডোজের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন নাইট্যাগ সভাপতি।

তিনি বলেন, আমরা এই ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে যেন ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারি, সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে। সেটি করতে না পারলে যারা এখন পর্যন্ত এক ডোজ ভ্যাকসিনও পাননি, তাদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দিলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সে কারণে আমরা মনে করছি, এখনই বুস্টার ডোজ জরুরি নয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের বড় একটি অংশ বয়সে পঞ্চাশোর্ধ্ব। এই বয়সসীমার প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, এই বয়সসীমার মানুষদের যত দ্রুত-সম্ভব দুই ডোজ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। সেটি না করে বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে এরই মধ্যে যারা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলেছেন, তাদেরই আরও শক্তিশালী করে তোলা হবে। অন্যদিকে যারা ভ্যাকসিনের এক ডোজও পাননি, তাদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হবে।

একই দিন ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নির্দিষ্টসংখ্যক জনসংখ্যার সবাইকে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতায় আনা। যদি একজন মানুষও সেখানে ভ্যাকসিনের দুই ডোজ না পেয়ে থাকেন, তবে অন্যরাও কিন্তু সুরক্ষিত, এমনটা বলা যায় না।

তিনি বলেন, নাইট্যাগের একটি বৈঠকে বুস্টার ডোজ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী যাদের আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা, তাদের দুই ডোজ দেওয়া আগে নিশ্চিত করতে হবে— এমনটা আলোচনা হয়েছে। যারা এরই মধ্যে সুরক্ষিত, তাদের আবার বুস্টার ডোজ দেওয়াটা অনেকটা ডাবল বা ওভার সিকিউরিটি দেওয়ার মতো বিষয়। সেক্ষেত্রে যারা এক ডোজ ভ্যাকসিনও পাননি, তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হবে। এ কারণেই মূলত আমরা এখনই বুস্টার ডোজ দিতে হবে— এমন কোনো মতামত দিইনি।

তিনি আরও বলেন, ওমিক্রন প্রতিরোধে অনেকে বুস্টার ডোজের বিষয়ে বলছেন। কিন্তু এই ওমিক্রনে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যু হয়নি। ওমিক্রনের সংক্রমণ মাত্রাও ডেল্টার চাইতে বেশি— এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই ওমিক্রনকে ঘিরে বুস্টার ডোজ তড়িঘড়ি করে দেওয়া অনেকটা খাপছাড়া পরিকল্পনা হয়ে যায়।

তবে ১১ ডিসেম্বর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৪৯তম সভায় বুস্টার ডোজের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা।

১৩ ডিসেম্বর পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোভিড-১৯ বুস্টার ডোজ প্রদানের বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত জানতে চেয়েছেন। আর তাই কোভিড-১৯ রুটিন ভ্যাকসিনেশনের জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করে ষাটোর্ধ জনগোষ্ঠী ও সম্মুখসারির যোদ্ধা, যাদের দুই ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অন্তত ছয় মাস আগে দেওয়া হয়েছে, এমন জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে- এমন সুপারিশ জানানো হয়েছে।

পরবর্তীতে ১৭ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে বুস্টার ডোজের প্রয়োগ শুরু হবে আগামী পরশু রোববার (১৯ ডিসেম্বর)।

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে জানান নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের নিয়মিত ভ্যাকসিন কর্মসূচি চলছে। এর পাশাপাশিই রোববার থেকে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হবে। শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব।

নাইট্যাগের পরামর্শ পাশ কাটিয়ে কেন বুস্টার ডোজ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত? – এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, নাইট্যাগের মিটিংয়েও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে এটা যেমন সঠিক একইভাবে পরামর্শক কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সকল বিষয়েই তো পরামর্শকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটে নি।

তিনি বলেন, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সসীমার অনেকেই ভ্যাকসিন নেন নি-এটা সত্যি। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণে কিন্তু এখন মানুষের মাঝে অনেক কম আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আর তাই লক্ষ্য পূরণের জন্য তো আমরা আমাদের ফ্রন্টলাইনার ও ঝুঁকিপূর্ণ বয়সের নাগরিকদের নিরাপত্তার দিকটা একদম অস্বীকার করতে পারি না। আমরা নিয়মিত ভ্যাকসিন কার্যক্রম তো চালিয়ে যাচ্ছিই, এর পাশাপাশি যদি ঝুঁকিপূর্ণ বয়সসীমার নাগরিকদের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দিতে পারি তবে অনেকক্ষেত্রেই তাদের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা অন্যান্য বিপদ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া যাবে বলে আশা করছি। তারা যদি নিরাপদে থাকে তবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার উপরেও চাপ থাকবে কিছুটা কম। এই সময়ে আমরা গুরুতর সংক্রমিতদের চিকিৎসার আওতায় আনতে পারবো।

ভ্যাকসিনের সঙ্কট হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সরকার সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবে। এতে করে ভ্যাকসিনের সঙ্কট হবে না। আমরা ইতোমধ্যেই গণটিকা কার্যক্রম চালিয়েছি বেশ কয়েকটা। সামনেও এমন কিছু কর্মসূচি দেখা যেতে পারে। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য সকলের মাঝে সচেতনতা থাকা প্রয়োজন। আর তখন আসলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, অতীত নিকটে আমাদের মাঠপর্যায়ে দেখা যাচ্ছে ভ্যাকসিনের প্রতি একটা শ্রেণির আগ্রহ কিছুটা কম আছে আর তাই অনেকেই ভ্যাকসিন নিচ্ছে না। তাদেরকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাবো। একই সঙ্গে ভ্যাকসিনের বুস্টারডোজ প্রয়োগও চালিয়ে যাবো।

তবে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে নাইট্যাগের সঙ্গে আলোচনা হয় নি জানিয়ে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, দেশে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে নাইট্যাগের কোনো আলোচনা হয় নি।

তিনি বলেন, ওমিক্রনের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক ডেল্টা ও অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট। এগুলোর কারণে কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং এসব ভ্যারিয়েন্টই মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। সেখান থেকে নিরাপদে থাকতে হলে আমাদের দুই ডোজ ভ্যাকসিনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সবার মধ্যে। সেটা হয়ে গেলে তারপর বুস্টার ডোজের বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। এর আগে বুস্টার ডোজ দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায় এটা নাইট্যাগ বুঝতে পারছে না।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বুস্টার ডোজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা বিষয়ে কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছি। তবে সেটা নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে না। স্বাভাবিক টিকাদান কর্মসূচি যেন অব্যাহত রেখে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও আমাদের কেনা যে পরিমাণ ভ্যাকসিন বর্তমানে দেশে রয়েছে তার একটা এক্সপায়ারি ডেটের বিষয়েও কিন্তু ভাবা হয়েছে। যদি সেই ‘এক্সপায়ারি ডেট’ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে যারা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়স ও সম্মুখসারির যোদ্ধা- তাদের দেওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য, দেশে জাতীয় পর্যায়ে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমের সূচনা করা হয় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেশে ছয় কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ৫২৪ জনকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়। এর মাঝে ১৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পেয়েছে চার কোটি ৫০ লাখ ৭ হাজার ৬২৯ জন। এর মাঝে দুই লাখ ৭৭ হাজার ৯০৬ জন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য এখন পর্যন্ত সুরক্ষা প্লাটফর্মে জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে নিবন্ধন করেছে সাত কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ২১৮ জন। পাসপোর্ট দিয়ে দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫৭ জন। এছাড়াও জন্মসনদ দিয়ে দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৬৮১ জন।

সারাবাংলা/এসবি/এএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন