বিজ্ঞাপন

তুহিনকে শোকজ, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে চিঠি

December 21, 2021 | 7:28 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিজয় দিবসের দিন ঐতিহাসিক ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বিশৃঙ্খলা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনকে শোকজ করা করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যুব মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে শোকজের জবাব পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সংগঠনের সব কর্মকাণ্ড থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ের পাশের নতুন ভবনে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়েছে, গঠনতন্ত্রের (১১-খ) ধারা মোতাবেক শাখা সংগঠনসমূহের সভাপতির দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটি এবং ঊর্ধ্বতন সবস্তরে জবাবদিহি করবেন। গঠনতন্ত্রের ( ১২-খ) ধারায় সভাপতির গণতান্ত্রিক ক্ষমতা ও দায়িত্ব মোতাবেক আপনার সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা বা কারণ দর্শাতে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলী ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গঠনতন্ত্রের সিরিয়াল অনুসারে সহযোগী সংগঠনগুলো ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা প্রতিকৃতিতে পুষ্পমালা অর্পণ করবে। কিন্তু আপনি কখনোই কোনো সাংগঠনিক নিয়মকানুন মেনে চলেন না। সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী সদস্য উপস্থিত থাকার পরও প্রত্যেক জাতীয় কর্মসূচিতে মহানগর উত্তরের নামের আগে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন এবং দীর্ঘক্ষণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনের জায়গা বেদখল করে দাঁড়িয়ে থাকেন। ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যার কারণে প্রায়ই আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। যা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পূর্বে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক-৩২ নম্বরের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তারসহ অনেককে অপমান নাজেহাল এমনকি শারীরিকভাবে আহত ও লাঞ্ছিত করেছেন। জাতির পিতার রক্তের স্মৃতিবিজড়িত ওই ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বাড়ি আমাদের পবিত্র স্থান, আমাদের আবেগ অনুভূতির জায়গা। সুবর্ণজয়ন্তীর একটি ঐতিহাসিক দিনে আপনার ও আপনার কর্মীদের ঔদ্ধত্যাপূর্ণ আচরণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির অনেককে চোখের জল নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলো। আপনি এর প্রকৃত এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আপনি ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের দায়িত্ব নেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছরে কোনো থানা এবং ওয়ার্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করেননি। ফলে দলীয় কর্মীরা পদাধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। সাংগঠনিক নিয়ম না মেনে আপনার দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ফলে দল সংগঠিত হচ্ছে না; অথচ আপনি পদ আঁকড়ে আছেন। এর সুনির্দিষ্ট তথ্য যুক্ত ব্যাখ্যা দিন।

কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়, নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া আপনার দীর্ঘদিনের পারিবারিক বন্ধু। তার অপকর্মের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে গড়া সংগঠন যুব মহিলা লীগ দেশে-বিদেশে অনেক সমালোচনার মুখে পড়ে। আপনার বিরুদ্ধে পাপিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে। এর প্রকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিন। আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নাজমা আক্তার ১/১১ সময় আপনাকে কোর্ট ও সাবজেলে যেতে নিষেধ করেছিল। নাজমা আক্তার জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অংশ না নিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন। আপনার এই বক্তব্যের উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

বিজ্ঞাপন

এমতাবস্থায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তার ব্যাখ্যাসহ লিখিত জবাব আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যুব মহিলা লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। এবং সেইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনাকে যুব মহিলা লীগের সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এর আগে, গত শুক্রবার যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার সারাবাংলাকে জানান, মহান বিজয় দিবসে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন চত্বরে তিনি যে বিশৃঙ্খলা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে- এব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল আমরা এ বিষয়ে চিঠি ইস্যু করব।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবস উপলক্ষ ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ বাস্তবায়ন ও সফল করতে এক জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঐতিহাসিক ধানমন্ডির-৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে যুব মহিলা লীগের মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একটি অংশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে বৈঠকে সেদিন ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনা হয় এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে যুব মহিলা লীগ উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনকে শোকজের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন