অভিযানে র‌্যাবের ওপর ‘মাদক কারবারিদের’ হামলা, অস্ত্র লুট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় মাদক কারখানা ধ্বংসের অভিযানে র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় মাদক কারবারিরা র‌্যাবের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে র‌্যাব সদস্যরা গুলি চালান।

হামলায় র‌্যাবের দু’জন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার ভুজপুর থানার সুয়াবিল ইউনিয়নের বারমাসিয়া চা বাগানে এ ঘটনা ঘটেছে বলে র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে র‌্যাব জানিয়েছে, হামলায় চা বাগানের শ্রমিকরা জড়িত নন, মাদক কারবারি ও তাদের সহযোগীরা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছে।

গুরুতর আহত দুই র‌্যাব সদস্য হলেন- র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপল (৩০) এবং উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সামাদ (৪২)। এছাড়া মনতোষ (৫৫) নামে বারমাসিয়া চা বাগানের এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আহত নিয়াজকে মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সামাদ চট্টগ্রামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আহত মনতোষ স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাধীন।

জানতে চাইলে র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, “র‌্যাবের টিম চা বাগানের পাশে চোলাই মদের কয়েকটি কারখানা ধ্বংস করে ফেরার পথে তাদের ওপর আক্রমণ হয়। লাঠিসোঠা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণের পর র‌্যাবের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে র‌্যাব সদস্যরা শটগানের গুলি ছোঁড়েন। আমাদের দু’জন সদস্য ‍গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে কেউ আহত হয়েছেন কি না সেটা আমরা জানতে পারিনি। তবে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।”

ভুজপুর থানা পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে র‌্যাবের একটি টিম সাদা পোশাকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার নিয়ে বারমাসিয়া চা বাগানের ভেতরে কালীতলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় যান। তারা জনৈক উজ্জলের চোলাই মদ তৈরির কারখানা ধ্বংস করে সেখান থেকে বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করে এবং মদ তৈরির কারিগর বিপনকে আটক করে। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী জনৈক বিপ্লবের চোলাই মদের কারখানায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে বিপ্লবকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় চা বাগানের ১০০ থেকে ১২০ জন শ্রমিক জড়ো হয়ে র‌্যাব সদস্যদের ঘিরে ফেলে। তারা প্রথমে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে। তাদের হামলায় র‌্যাব কর্মকর্তা নিয়াজ ও সামাদ গুরুতর জখম হন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে র‌্যাব সদস্যরা শটগানের গুলিবর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ভুজপুর থানা থেকে পুলিশও দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উত্তেজিত শ্রমিকরা চা বাগানের ভেতরে ঢুকে যান। গুলিতে শ্রমিক মনতোষের বাম পায়ে জখম হয়েছে। এসময় জানা যায়, র‌্যাব সদস্যদের ব্যবহৃত চারটি অস্ত্র হামলাকারীরা কেড়ে নিয়ে গেছে। পুলিশ মাইকে ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়।

এসময় রাজিব সেন নামে একজন ঘটনাস্থলে থাকা সুয়াবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের কাছে দু’টি অস্ত্র ফেরত দেন। ভাঙচুর করা প্রাইভেট কারের চালকের আসনের পা-রাখার স্থানে পাওয়া যায় একটি পিস্তল। খোয়া যাওয়া আরেকটি পিস্তল উদ্ধারে রাতেই চা বাগানের ভেতরে এবং আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বারমাসিয়া চা বাগানের শ্রমিকদের বসতঘরের পেছনে জনৈক টিটু ঘোষের বাড়িতে একটি গাছের নিচে প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়ানো পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ভুজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন ফারুকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। দ্রুততার সঙ্গে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এখন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

র‌্যাব-৭ এর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চোলাই মদ তৈরি কিংবা র‌্যাবের ওপর হামলা- এর সঙ্গে চা বাগানের শ্রমিকরা জড়িত নন বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। চা বাগানের আশপাশে বেশ কয়েকটি মদের কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় মাদক কারবারিরা। তারা সেখানে চোলাই মদ তৈরি করে শ্রমিকদের সরবরাহ করে। সামনে থার্টি ফার্স্ট নাইট। এজন্য বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ তৈরি করা হচ্ছিল কারখানাগুলোতে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাদক কারবারি ও তাদের সহযোগীরা হামলা করেছে।’

সারাবাংলা/আরডি/এমও