বিজ্ঞাপন

চুরির সোনা-হীরা রাস্তায় আর নদীতে ফেলেছে চোরচক্র

December 28, 2021 | 8:52 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর কাকরাইল কর্ণফুলী গার্ডেন শপিং মল থেকে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও হীরা চুরির পর বেশির ভাগ সোনা-হীরা রাস্তায় আর নদীতে ফেলে দিয়েছে চোরচক্র। মাত্র ২০১ ভরি সোনা উদ্ধার করতে পেরেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ ঘটনায় ফরিদপুরের শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৮), বরিশালের শৈশব রায় ওরফে সুমন (৩৫) ও রাজধানীর তাঁতিবাজারের স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সুরকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) এবং সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি’র প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আকতার সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর কর্নফুলী গার্ডেন সিটির দুই দোকান থেকে ৭০০ ভরি সোনা চুরি করে সংঘবদ্ধ চোরচক্র। এ ঘটনায় মামলা হলে গোয়েন্দা পুলিশের (রমনা বিভাগ) তদন্তে নামে। পরে এ ঘটনায় জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে তারা চুরির কথা স্বীকার করেছে।

ডিবি প্রধান বলেন, এই চুরির নেতৃত্ব দেয় শাহিন মাতব্বর। তবে শাহিন ও শৈশব ঢাকায় আসে চুরির ঘটনার ১৫ দিন আগে। তাদের তাঁতিবাজারের কল্পনা বোডিং এ থাকার ব্যবস্থা করে দেয় উত্তম। এছাড়া চুরির জন্য যা টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে তাও বহন করে উত্তম। তারা ওই বোর্ডিংয়ে এ থাকার সময় উত্তমকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে রেকি করে।

বিজ্ঞাপন

পরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনে হওয়ায় তারা কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটকে বেছে নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কেটের দুই দোকানে চুরি করে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের মোহনা জুয়েলার্স ও বেস্ট অ্যান্ড ক্রিয়েশন জুয়েল অ্যাভিনিউ জুয়েলার্স নামক দুটি সোনার দোকানে প্রায় ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়। তদন্তে ডিবি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোরদের শনাক্ত করে। তদন্তে জানা যায় শৈশব ও শামীম দুই জনই নিজ নিজ এলাকায় চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদের এক দিন মনে হল তারা ঢাকায় এসে কিছু করবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা তাদের পূর্বপরিচিত উত্তম রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তারা তিন জন মিলে চুরির পরিকল্পনা করে।

ঘটনার চার দিন আগে তারা কর্ণফুলী মার্কেটে চেষ্টা করেও চুরি করতে ব্যর্থ হয়। পরে তারা ঘটনার দিন মার্কেটের পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবন দিয়ে বেয়ে মার্কেটের একটি বাথরুমে প্রবেশ করে। বাথরুম থেকে তারা মার্কেটের ভেতর প্রবেশ করে দুই দোকানে চুরি করে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

ডিবি পুলিশের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তারা সোনার পাশাপাশি একটি দোকান থেকে কিছু হীরাও চুরি করেছে। কিন্তু, চুরি করে যাওয়ার সময় হীরা-সোনা থাকা একটি ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়। এর মধ্যে রাস্তা থেকে ২২ ভরি সোনা পাওয়া গেছে যা রমনা থানায় জমা রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকশ ভরি সোনা পানিতে ফেলে দিয়েছে বলে এক জন জানিয়েছে। বাকিটা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে।

তবে, রাস্তা পড়ে যাওয়া সোনা ও হীরা কেউ যদি পেয়ে থাকেন তাহলে তাদের অনুরোধ জানাবো, যেন তারা এসব জিনিস দ্রুত স্থানীয় থানায় জমা দেন। যদি তা না হয় আর তদন্তে যদি তাদের খোঁজ পাওয়া যায় তাহলে চোরাই মাল রাখার দায়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ডিবি প্রধান।

তিনি বলেন, তদন্তে দেখা গেছে কল্পনা বোর্ডিং এ চোররা উঠেছিল তারা কোনো নাম এন্ট্রি করিনি। কিন্তু ডিএমপি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে হোটেলে নাম এন্ট্রি করার। কল্পনা বোর্ডিং এ তাদের নাম এন্ট্রি থাকলে আরও সহজে ধরা যেত। তবে এ ব্যাপারে কল্পনা বোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, কেউ যদি মনে করে গ্রাম থেকে এসে ঢাকায় এসে চুরি করে সহজে চলে যেতে পারবেন বা পার পেয়ে যাবে সেটি হবে না। সব সময় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছে ডিবি।

চুরির সোনাগুলো চোররা কি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ফেলেছিল নাকি দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কিছু সোনার দোকানে রেখেছিল আবার কিছু সোনা তাদের কাছ থেকে জব্দ করেছে। তবে, তারা বলেছে কিছু সোনা রাস্তায় পড়ে গিয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২০১ ভরি সোনা জব্দ করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে পেলে বাকি সোনা কোথায় আছে তা উদ্ধারের চেষ্টা হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে, আরেকটি বিষয় বলে রাখতে চাই যেসব দোকানিরা চোরাই সোনা কেনেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি তদন্তে তাদের নাম আসে। এছাড়া বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবাইকে বলবে যে, কেউ চোরাই মাল কিনবেন না। আর যদি কেউ কেনেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, অনেক দোকানি চোরাই সোনা কিনে গলিয়ে অন্য সোনা বানিয়ে ফেলেন। তদন্তে তাদের নাম পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এজাহারে বলা হয়েছে ৭০০ ভরি কিন্তু জব্দ হয়েছে ২০১ ভরি বাকি সোনা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে কিছু সোনা পড়ে গেছে। তবে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা চলছে।

মার্কেটের কেউ চোরদের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কারও নাম পাওয়া যায়নি তবে তদন্ত চলছে।

সারাবাংলা/ইউজে/একেএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন