বিজ্ঞাপন

ভারতে কিডনি পাচারের চক্র সক্রিয় চট্টগ্রামেও, গ্রেফতার ৩

December 31, 2021 | 8:36 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, তারা সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য। ফেসবুকের মাধ্যমে কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেনাবেচা করে। রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য তারা বাংলাদেশ থেকে সুস্থ মানুষ ভারতে পাচার করে।

বিজ্ঞাপন

তিনজনকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব আরও জানিয়েছে, ঢাকার পর চট্টগ্রামেও সংঘবদ্ধ চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। গত অক্টোবরে ঢাকায় এ ধরনের একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। চট্টগ্রামে সক্রিয় হয়ে ওঠার পর চক্রটিকে ধরতে ফাঁদ পেতেছিল র‌্যাব। সেই ফাঁদে ধরা দেয় পাচারকারী চক্রের তিন সদস্য।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর নগরীর খুলশী থানার ভারতীয় ভিসা কার্যালয়ের সামনে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ আলী ডালিম (৩৫), কিশোরগঞ্জের আতিকুর রহমান রনি (৩৬) এবং মাদারীপুরের আলম হোসেন (৩৮)।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফেসবুকে পেইজ খুলে তারা কিডনি ও লিভার কেনার আগ্রহ ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। আমাদের টিম ক্রেতা সেজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ক্রেতা সেজেই ভারতীয় ভিসা অফিসের সামনে গিয়েছিলেন র‌্যাব সদস্যরা। তিন সদস্যের চক্রটি তখন সাইফুল নামে একজনকে কিডনি বিক্রির জন্য প্রলুব্ধ করছিল। র‌্যাব সদস্যরা যাওয়ার পর বুঝতে পেরে তিনজন পালানোর চেষ্টা করে। ধাওয়া দিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার তিনজন চক্রের তিনটি অংশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘গরিব, অসহায় লোকজন এবং নিঃস্ব হয়ে যেসব লোক বিদেশ থেকে ফিরে আসেন তারাই চক্রের মূল টার্গেট। আমরা জানতে পেরেছি, এই চক্রটি সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম থেকেই অন্তত ৪০ জন লোককে ভারতে পাঠিয়েছিল কিডনি বিক্রির জন্য। ভারতে রোগীদের কাছ থেকে তারা ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিত। আর বাংলাদেশের যে ব্যক্তির কিডনি কিংবা লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য নেওয়া হত তাকে দিত মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। আবার প্রতিস্থাপনের সময় যদি মৃত্যু হয় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে এর দায়ভার নেয় না চক্রের সদস্যরা।’

র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে— গ্রেফতার ডালিম আন্তর্জাতিক কিডনি ও লিভার কেনাবেচায় জড়িত চক্রের মূল হোতা। আতিকুর রহমান রনি বিক্রিতে আগ্রহী লোকজনকে পাচারে সক্রিয় ছিল। আলম ফেসবুকের মাধ্যমে অথবা সরাসরি অসহায় লোকজনকে প্রলুব্ধ করত কিডনি-লিভার বিক্রির জন্য। শাহিন নামে তাদের চক্রের এক সদস্য ভারতে অবস্থান করেন। তিনি ভারতে রোগীদের সঙ্গে কিডনি-লিভার পাইয়ে দেওয়ার মধ্যস্থতা করেন। প্রতিস্থাপনে আগ্রহী রোগী পেলে ডালিম, আলম ও রনিদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আগ্রহীদের নিয়ে যান।

ভারতে রোগী এবং বাংলাদেশে কিডনি-লিভার বিক্রিতে আগ্রহী লোক পাওয়া গেলে, চক্রের সদস্যরাই পাসপোর্ট বানিয়ে দেন, এমনকি ভারতের ভিসারও ব্যবস্থা করে দেন। আবার অবৈধভাবেও পাচার করা হয়। তবে ভারতে পাঠানোর আগে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে রক্ত, কিডনি ও লিভারের পরীক্ষা করা হয়। ভারতে যাবার পর শাহিনের তত্ত্বাবধানে আবারও পরীক্ষা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে তবেই প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এরপর টাকা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, মানাবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ অনুযায়ী কারো অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় ওই আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন