বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন দিবস আজ

April 10, 2018 | 11:52 am

সারাবাংলা ডেস্ক

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারতের কলকাতায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। রচিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। পরে মুক্তিযুদ্ধকে আরো বেগবান করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে নেতৃত্ব দেয় এই সরকার।

উত্তাল একাত্তরের ১০ এপ্রিল গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন সম্পর্কে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অন্যতম রচয়িতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, মুক্তির নেশায় তখন রণাঙ্গনে সশস্ত্র সংগ্রামে বীর বাঙ্গালী। তবে মুক্তিযুদ্ধকে আরো সুসংগঠিত করা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে বন্দী, আর তাই আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতাদের চেষ্টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের সহায়তার আশ্বাস পাওয়া যায়। এরপরই ১০ই এপ্রিল কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।  এছাড়া পররাষ্ট্র আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, অর্থ শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র সরবরাহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান ছিলেন। পরদিন ১১ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জানানো হয় ওই সরকার গঠনের খবর।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হলেও ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল রচিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলার সংগ্রামকে বিশ্ব পরিমন্ডলে স্বীকৃতি আদায় করতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও রচিত হয় ১০ এপ্রিল। পরবর্তীতে ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।’

মুজিবনগর সরকারের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিলো বলে এ সরকার ‘প্রবাসী মুজিবনগর সরকার’ হিসেবে খ্যাত। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিলো মুজিবনগর সরকারের কার্যকাল। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এই সরকারের প্রধান কার্যালয় কলকাতাতে স্থাপন করা হয়, প্রধানত নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে।

বিজ্ঞাপন

১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সে সময়কার আওয়ামী লীগের হুইপ আব্দুল মান্নান এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। এ সময় নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে এগারোটি সেক্টরে ভাগ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার যেমন সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সংগঠিত করেছিল, একইভাবে সরকার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় ও বিভিন্ন বিভাগ গঠন করেছিল। মুজিবনগর সরকার রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হলেও কার্যত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ছিলেন মূল চালিকা শক্তি।

ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ দখলমুক্ত হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের ভেতর বঙ্গবন্ধুর সরকার এক অসাধারণ সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন- যার ভিত্তি ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র। আমাদের জন্য এই সরকার গঠন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যুদ্ধের উপরে এর প্রভাব ছিল সুদুর প্রসারী। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই এটা ছিল বৈধ সরকার। ফলে বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আইনানুগ ক্ষমতাও ছিল তাদের।’

একাত্তরে মুজিবনগর সরকারের অপরিহার্যতা সম্পর্কে আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘মুজিবনগর সরকার গঠিত না হলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা বিদ্রোহী হয়ে পড়তাম। ফলে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন কার্যাবলী পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে কত ব্যাপক এবং সুসংগঠিত ছিল এই সরকারের কর্মসূচি এবং গঠন কাঠামো।’

বিজ্ঞাপন

 

ছবি: মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের।

সারাবাংলা/ এসবি

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন