বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন না পেয়ে ফেরত গেল আড়াই হাজার শিক্ষার্থী

January 8, 2022 | 7:10 pm

মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজবাড়ী: ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম আরও আগেই শুরু হয়েছে রাজবাড়ীতে। তবে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। কেন্দ্রে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, তেমনি ভ্যাকসিন সংকট থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিন নিতে ভিড় জমায় সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। দুপুর ১টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, আজ দেওয়ার মতো আর ভ্যাকসিন নেই। অথচ তখনো ভ্যাকসিন নিতে পারেনি প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণায় তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

দুপুর পৌনে ১টায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফাইজারের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সুযোগই নেই। ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সুব্যবস্থাপনা না থাকায় কে কার আগে বুথে গিয়ে ভ্যাকসিন নেবে, তা নিয়েই চলছে হুড়োহুড়ি। এর কিছুক্ষণ পরই ১টার দিকে ভ্যাকসিন বুথ থেকে জানানো হয়, ভ্যাকসিন শেষ।

এদিন ভ্যাকসিন না পাওয়া অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই জানায়, সকাল ৯টা থেকে তারা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে। চার ঘণ্টা পর এসে তারা জানতে পারছে, ভ্যাকসিন শেষ। সে কারণে তারা ফিরে যাচ্ছে। এসময় হাসপাতালের বদলে নিজ নিজ স্কুলে ভ্যাকসিন প্রয়োগের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলায় বিরক্তির কথা জানালেন শিক্ষকরাও। সদর উপজেলার বসন্তপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. এমের আলী শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়ানোর জন্য সকালে এখানে (সদর হাসপাতাল) নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে সুশৃঙ্খল কোনো ব্যবস্থা নাই। নানা ধরনের অনিয়ম আছে। সকালে আসার পর দুপুর হয়ে গেলেও আমাদের শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন পায়নি। এখন জানানো হলো, ভ্যাকসিন শেষ। আজ আর কাউকে দেওয়া হবে না। এইভাবে শিক্ষার্থী ও আমরাসহ অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এছাড়া এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানারও কোনো সুযোগ নেই। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে। আমাদের চাওয়া একটাই— শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একটি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘রাজবাড়ী সদর উপজেলার ৮-১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সদর হাসপাতালে এসেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের ছেলেমেয়েরা এখানে আসার পর সুশৃঙ্খল কোনো পরিবেশ পায়নি। এখানে খুবই বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে এবং অধিকাংশ ছেলেমেয়েই ভ্যাকসিন পায়নি। সকাল থেকে অপেক্ষা করানোর পর দুপুরে এসে বলছে, ভ্যাকসিন নাকি শেষ। অথচ আমাদের জানানো হয়েছিল, শিক্ষার্থী যারা আসবে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এখন ভ্যাকসিন তো দেয়ইনি, কবে দেওয়া হবে সে বিষয়েও কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এভাবে ডেকে এনে আমাদের হয়রানি করার কোনো মানে হয় না।’

বিজ্ঞাপন

মামুন আরজু নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘এখানে যে ধরনের অব্যবস্থাপনা দেখছি তাতে আশঙ্কা হচ্ছে— আমাদের সন্তানেরা করোনামুক্ত হতে এসে করোনাযুক্ত না হয়ে যায়। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন মহোদয়ের কাছে আমাদের অনুরোধ, এরকম অব্যস্থাপনার মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করে স্কুলে স্কুলে অথবা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভ্যাকসিন দেওয়া হোক।’

জানতে চাইলে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ভ্যাকসিন কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) আমাদের এখানে সদর উপজেলার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিলো। সে অনুযায়ী নির্ধারিত চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আসতে বলা হয়েছিল। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫০০ ভ্যাকসিন বরাদ্দ ছিল। কিন্তু নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরেও অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য এসেছে। এ কারণে দ্রুত ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। তারপরও আজ আমরা ২ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়েছি।’

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ভ্যাকসিন সরবরাহ, মেসেজ দেওয়া ও কতজন শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নিতে আসবে— এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে সিভিল সার্জন অফিস। আমাদের হাসপাতালের কর্মীদের কাজ কেবল ভ্যাকসিন দেওয়া। আমরা সেক্ষেত্রে অনেকবারেই বলেছি, পর্যায়ক্রমে যেন স্কুলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়। কিন্তু দেখা যায় যে সবাই একসঙ্গে এসে ভিড় করে। এ কারণেই কিছু জটিলতা তৈরি হয়। হাসপাতালের অন্য রোগীদের সেবা দিতেও অনেক কষ্ট হয়।’

ডা. দীপক আরও বলেন, আমাদের যদি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয় এবং সেভাবে বলে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের কর্মীরা সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্তও কাজ করবে। সিভিল সার্জন কার্যালয় এরকম ব্যবস্থা নিলে এবং শিক্ষার্থীরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে কাউকে আর ভ্যাকসিন না পেয়ে ফিরে যেতে হবে না।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন