বিজ্ঞাপন

নৌকার পক্ষে ভোট না করায় ভূমিহীনের ঘর ভাঙচুর-উচ্ছেদের অভিযোগ

January 10, 2022 | 9:18 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: প্রায় ১০ বছর আগে স্বামী পরিত্যক্ত ও ভূমিহীন নারী মুক্তারা বেগমকে নিজের জায়গাতে বাড়ি করতে দিয়েছিলেন সদ্য অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু নির্বাচনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার কারণে সেই বাড়ি ভাঙচুর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। এমনকি ঘরে থাকা নগদ অর্থ ও বিভিন্ন আসবাব লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের রিপনমোড় নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গোবরাতলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরাফুল ইসলাম আজিজি। সদ্য অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৬৬৭ ভোট পেয়ে তিনি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী রবিউল ইসলাম টিপু চশমা প্রতীকে ৭ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরেক বিএনপি নেতা তাসেম আলী আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৫৪১৩ ভোট।

অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনে হেরে নৌকার সমর্থকরা হঠাৎ করে গত শনিবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মুক্তারা বেগমের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এসময় তাদেরকে বাড়ি থেকে কোনকিছু বের করারও সুযোগও দেওয়া হয়নি। উচ্ছেদের পরে রাতে ভাঙা বাড়ির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিলেও তাড়িয়ে দেয় নৌকার সমর্থকরা। এমনকি আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। এখনও অবশিষ্ট থাকা বাঁশের খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতেও বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মুক্তারা বেগমের।

ভূমিহীন মুক্তারা বেগম আনারস প্রতীকের নিজের ভোট করেছেন বলে স্বীকারও করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী তাসেম আলী। অন্যদিকে, নির্বাচনে হারার কারনে বাড়ি ভাংচুর করা হয়নি বলে দাবি নৌকার প্রার্থী আরাফুল ইসলাম আজিজির।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, সাবেক চেয়ারম্যান আরাফুল ইসলাম আজিজির ইচ্ছাতেই তার জমিতে ১০ বছর আগে বাড়ি নির্মাণ করে মুক্তারা বেগম। এরপর থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সেখানেই বাস করতেন তিনি। বাড়ির সঙ্গেই রাস্তাসংলগ্ন ছোট্ট মুদিখানার দোকান ও কয়েকটি ছাগল পালন করেই তার সংসার চলতো। বাড়ি ভাঙচুর করার এখন তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ছোট ভাই সাদিকুল ইসলামের বাড়িতে।

মুক্তারা বেগম বলেন, ‘দোকান চালিয়ে ও মানুষের বাড়িতে কাজ করে অভাবের সংসার চালাই। নিজের জায়গা নাই, তাই চেয়ারম্যানের দেওয়া জায়গায় খড় ও টিন তুলে বসবাস করি। যা উপার্জন করি, তা দিয়েই মেয়েকে নিয়ে খাই। সরকার এতোগুলো বাড়ি দিচ্ছে, এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে একটি সরকারি বাড়ি চাইলে তারা জানায়, তোমাকে তো চেয়ারম্যান জায়গা দিয়েছে, ওখানেই থাকো। তাই ভূমিহীন হয়েও আমি সরকারি বাড়ি পাইনি।’

বিজ্ঞাপন

মুক্তারা বেগমের বড় বোন জাহানারা জানান, ঘটনার সময় আমরা ছিলাম। বাড়ি ভাঙচুর করতে করতে নানারকম খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করছিল তারা। বাড়িতে থাকা ১৫ হাজার টাকাও তারা লুট করেছে।

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাসেম আলী জানান, মুক্তারা বেগম আমার একজন সমর্থক ছিলেন। নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছে। পরে শুনলাম, আমার পক্ষে ভোট করার কারণে নাকি তার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান আরাফুল ইসলাম আজিজির জায়গা হলেও শুধুমাত্র ভোট না দেওয়ার কারনে ভাঙচুরের বিষয়টি দুঃখজনক।

তবে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আরাফুল ইসলাম আজিজি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে বাড়ি ভাঙচুরের সম্পর্ক নেই। আমার জায়গাটিতে অন্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। তাই আমার লোকজন তাদেরকে বের করে জায়গাটি পরিস্কার করেছে। এক মাস আগেই মুক্তারা বেগমকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।’

ভাংচুরের দিন রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

বিজ্ঞাপন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন