বিজ্ঞাপন

ধর্ষণের শিকার শিশুর ভর্তি বাতিল: মাদরাসা পরিচালকের দোষ স্বীকার

January 24, 2022 | 7:53 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: ধর্ষণের শিকার হওয়ায় এক শিশুর ভর্তি বাতিল করে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় মাদরাসা পরিচালক দোষ স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটির কাছে ওই মাদরাসা পরিচালক দোষ স্বীকার করেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসকের নির্দেশের পর শিশুটিকে ফের মাদরাসায় ভর্তিও নিতে রাজি হন মাদরাসা পরিচালক। তবে একবার বের দেওয়ায় ভুক্তভোগী শিশুটির মা আর তাকে সেখানে ভর্তি করাতে রাজি হননি।

ভুক্তভোগী শিশুটি ২০২০ সালের ২১ মার্চ প্রতিবেশী এক কিশোরের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটির বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। মা একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া হিসেবে কর্মরত। রেলের জমির বস্তিতে একটি ঘরে থাকেন তারা। উম্মাহাতুল মু’মিনীন মহিলা মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকায় তারা ভেবেছিলেন, এখানে ভর্তি করলে তার সন্তান নিরাপদে থাকবে।

এই ভেবেই এ মাসের শুরুতে তারা শিশুটিকে এই মাদরাসায় ভর্তি করান। তবে তিন দিন পরই তাকে মাদরাসা থেকে বের করে দেন পরিচালক মোহা. হাবিবুল্লাহ। মেয়েটি ধর্ষণের শিকার বলেই তাকে অন্য কোথাও ভর্তি করাতে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ধর্ষণের শিকার সেই শিশুকে মাদরাসায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ

বিষয়টি জানাজানি হলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। ‘ধর্ষণের শিকার তাই বের করে দিল মাদরাসা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে সারাবাংলা ডটনেটও। গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন নজরে এলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল শিশুটিকে ওই মাদরাসায় ফের ভর্তি করে নিতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে নগরীর নগরীর হড়গ্রাম মুন্সিপাড়া এলাকার উম্মাহাতুল মু’মিনীন মহিলা মাদরাসায় তদন্তে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারিয়া পেরেরা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। তারা ঘটনাটির সত্যতা পান। তাদের কাছেই মাদরাসার পরিচালক হাবিবুল্লাহ নিজের ভুল স্বীকার করেন। তিনি শিশুর মা-বাবার কাছে ক্ষমাও চান।

বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জয়া মারিয়া ওই শিশুকে ভর্তি নেওয়ার জন্য মাদরাসার পরিচালককে নির্দেশ দেন। বিনা বেতনেই সেখানে পড়ার সুযোগ করে দিতে নির্দেশ দেন। তবে একবার বের করে দেওয়ায় শিশুটির মা আর সেখানে মেয়েকে ভর্তি করতে রাজি হননি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হওয়ায় মেয়েটিকে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়ার খবর শুনেই জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন। আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। মাদরাসা পরিচালক ভুল স্বীকার করেছেন। শিশুটিকে মাদরাসায় ভর্তি নিয়ে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির অভিভাবক চাইলে ভর্তি করাতে পারবেন।’

আবার শিশুটিকে ভর্তি করালে দুর্ব্যবহার করা হবে— শিশুটির মায়ের এমন শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভর্তি নেওয়ার পর ওই শিশুর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেদিকে নজর রাখব। সে রকম কিছু হলে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে শিশুটির মা বলেন, ‘একবার আমার মেয়েকে ভর্তি নিয়েও টাকা ফেরত দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। আবার ভর্তি করালেও পরিচালক আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন। তাই সেখানে আর ভর্তি করাতে চাই না।’ মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি মেয়েকে একটি স্কুলে ভর্তি করেছেন বলেও জানান।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানান, সোমবার দুপুরে সমাজসেবা অধিদফতর ও ইউনিসেফের শিশু সহায়তার ১০৯৮ নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। কর্মকর্তারা তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তার মেয়েকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তার ছোট্ট শিশুকে ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন তিনি।

সারাবাংলা/এনএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন