বিজ্ঞাপন

আরও বেড়েছে রেমিট্যান্স, জানুয়ারিতে এসেছে ১৪,৬৫৮ কোটি টাকা

February 1, 2022 | 10:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পাঁচ মাসের নিম্নগামী প্রবণতা পেরিয়ে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা এই রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ৮৬ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ডিসেম্বর মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৬২ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

করোনাভাইরাসে কাজ হারিয়ে প্রবাসীরা সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়েছিলেন বলে করোনাকালেও রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতি ছিল বলে মন্তব্য করছিলেন অর্থনীতিবিদরা। প্রবাসীদের বড় একটি অংশ কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এলে রেমিট্যান্সের গতিও কমে যায়। নিম্নমুখী এই প্রবণতা বজায় ছিল টানা পাঁচ মাস— গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

পরে আবার প্রবাসীর ধীরে ধীরে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়। এর মধ্যে সরকারও রেমিট্যান্সে প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসবের প্রভাবেই আবার রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতি এসে থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কাজ বা চাকরি হারিয়ে বা হারানোর আশঙ্কা থেকে অনেকেই তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দেওয়ায় রেমিট্যান্স বেড়েছিল। রেমিট্যান্সে সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনার বিষয়টিও বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়িয়েছে। সরকার এখন এটিকে আড়াই শতাংশ করেছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত। এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের তুলনায় বাড়ছে। এটি অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক দিক।

বিজ্ঞাপন

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, সবশেষ সাত মাসের মধ্যে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ডিসেম্বরে এসে কিছুটা বেড়েছে, জানুয়ারিতে আরও কিছুটা বেড়েছে। এটি সুখবর। তবে এই প্রবৃদ্ধি কতদিন ধরে রাখা যাবে, তা বলা মুশকিল।

বিদায়ী বছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স

বিদায়ী ২০২১ সালে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১৮৪ কোটি ২ লাখ ডলার এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

মাসভিত্তিক হিসাব বলছে, বিদায়ী বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ১৭৮ কোটি ৫০ ডলার ডলারে নেমে আসে। মার্চ থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। গত মার্চে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, এপ্রিলে আসে ২০৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার ও মে মাস রেমিট্যান্স আসে ২১৭ কোটি ১১ লাখ ডলার। তবে জুন মাসে তা কিছুটা কমে ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এরপর জুলাই মাস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার কমতে শুরু করে। এর মধ্যে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। আর নভেম্বরে দেশে আসা ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছিল এর আগের দেড় বছরের মধ্যে এক মাসের হিসাবে সর্বনিম্ন। সবশেষ ডিসেম্বরে এসে অবশ্য এর পরিমাণ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৬২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

বিজ্ঞাপন

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে রেমিট্যান্স

২০১৫ সালে প্রথম দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সীমা ছাড়ায় রেমিট্যান্স। ওই বছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। পরের বছর ২০১৬ সালে তা কমে হয় ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে আরও কিছুটা কমে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।

এর মধ্যে ২০১৮ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসে রেকর্ড ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলারের নতুন রেকর্ড গড়ে। ২০২০ সালে রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো স্পর্শ করে ২ হাজার কোটি ডলারের ল্যান্ড মার্ক। ওই বছর রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। ২০২১ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙেছে। এ বছর ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এলো দেশে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন