বিজ্ঞাপন

‘ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়ে শুধু রোগী নয়, পরিবারেরও মৃত্যু ঘটে’

February 5, 2022 | 11:21 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, কোনো পরিবারে যদি কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, আর চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে তিনি যদি এ রোগে মারা যান, তাহলে মূলত একটি পরিবারেরই মৃত্যু ঘটে। কারণ, অনেক সময় চিকিৎসার জন্য পরিবারকে জায়গা জমি বিক্রি করে দিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে গণস্বাস্থ্য গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় সাময়িক নিরাময় হলেও পূর্ণাঙ্গ নিরাময় হয় না। আগে ক্যানসার চিকিৎসার পদ্ধতি অনেকটা জটিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে নতুন প্রযুক্তিতে যে মেশিন আবিষ্কার হয়েছে, তাতে ক্যানসারের চিকিৎসা সহজ হয়েছে।’

এ দিন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে বিশ্বখ্যাত বিকিরণ আইসোটোপবিহীন ইলেকট্রনিক ব্রাকিথেরাপির মাধ্যমে সাশ্রয়ী খরচে ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এটিকে ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘নতুন এ মেশিনে কোনো সোর্স ব্যবহার করতে হয় না। ডিসপোজালের ঝামেলা নেই। সময় কম লাগে। এটা বাংলাদেশের প্রথম মেশিন। আমাদের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে কেমোথেরাপির ব্যবস্থা আছে, সার্জিক্যাল অনকোলজির ব্যবস্থা আছে, এখন তো ব্রাকিথেরাপির ব্যবস্থাও আছে এবং আমাদের এখানে বোন মেরু রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থাও নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা রেডিএক্সেলের সবচেয়ে আধুনিক ভার্সনের অর্ডারও দিয়েছি। আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডিডিআর এক্সেলেটরও স্থাপন করব।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, প্রচলিত ব্রাকিথেরাপিতে ক্যানসার টিস্যুর ভেতর রেডিওঅ্যাকটিভ সোর্স দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এগুলো রেডিওনিউক্লিয়াইড হিসেবে পরিচিত, এই সোর্সগুলো খুব উচ্চ মাত্রার বিকিরণ ঘটায়।

বিজ্ঞাপন

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন রেডিয়েশন প্রোটেকশনে সম্প্রতি গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে, উচ্চমাত্রার বিকিরণের ফলে কম করে হলেও ৫০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে প্রাণহানি ঘটছে।

রেডিওঅ্যাকটিভ সোর্স ব্যবহারের ভিত্তিতে ব্রাকিথেরাপি দুই রকম আছে। একটি প্রচলিত রেডিওনিউক্লিয়াইড যুক্ত এবং অন্যটি রেডিওনিউক্লিয়াইড মুক্ত বিকিরণ নিরাপদ ইলেকট্রনিক ব্রাকিথেরাপি। যা ক্যানসার চিকিৎসায় নিরাপত্তা ও কার্যকারিতায় নব দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

ইলেকট্রনিক ব্রাকিথেরাপিতে এক্স-রে রশ্মি দ্বারা নিরাপদে চিকিৎসা করা হয়। এই ধরনের ব্রাকিথেরাপি দ্বারা পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্যবান টিস্যুকে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করে শরীরের প্রায় যেকোনো স্থানের ক্যান্সার চিকিৎসা করা যায়। যেমন- স্তন ক্যান্সার, নন-মেলানোমা চর্ম ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসার, গাইনোকোলজিকাল ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার, প্যানক্রিয়েটিক, অন্ত্র, পায়ুপথ ও মস্তিষ্কের ক্যানসার ইত্যাদি।

ক্যানসার রোগীদের সুবিধার কথা ভেবে নগর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে এই সর্বাধুনিক পদ্ধতির ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা ইলেক্ট্রনিক ব্রাকিথেরাপি স্থাপন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খোরশেদ আলম বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সর্বাধুনিক এই ইলেকট্রনিক ব্রাকিথেরাপিতে খরচ হবে চার থেকে আট হাজার টাকা, যা প্রায় সরকারি হাসপাতালের সমান। কিন্তু অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এর খরচ ধরা হয় ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা।’

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালটিতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম চিকিৎসা নেওয়া নারীও সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এদিন উদ্বোধনী বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ডা. সামিম উল মওলা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ক্যানসার বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবউল্লাহ তালুকদার তাসকিন, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন দক্ষিণ এশিয়ার জপ্টের প্রধান পিয়ারে ফ্রান্সেসকো, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদ-উজ জামান অপু প্রমুখ।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন