বিজ্ঞাপন

মিশ্র ফল বাগান গড়ে সফল সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা

February 6, 2022 | 10:42 am

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: জেলা সদরের মগবান ইউনিয়নে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। ৬ বছর আগে তার গড়ে তোলা বাগান থেকে ফলন পাচ্ছেন দুই বছর ধরে। চার বছরের মাথায় একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন সুশান্ত। এদিকে তার এমন উদ্যোগে সফলতার মুখ দেখায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। কৃষি বিভাগ বলছে, উদ্যোক্তা তৈরিতে তারা সবসময়ই কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সুশান্তর মতো অন্যান্যরা এগিয়ে গেলে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সোনারাম কার্বারি পাড়ায় বাড়ির আঙিনায় ১০ একর পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। ধারাবাহিকভাবে এই বাগানে প্রায় ২০ প্রজাতির ফলজ চারা রোপণ করেন তিনি। পাশাপাশি বিলাতি ধনিয়া পাতাসহ অন্যান্য সবুজ সবজি বাগানও গড়ে তুলেছেন। চার বছরের মাথায় বছরের ২০২০ সাল থেকে এই বাগান থেকে ফল উৎপাদন শুরু হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন বাগান পরিদর্শনে দেখা গেছে, চারদিকে হ্রদ বেষ্টিত একটি পাহাড়ে বসতঘর তুলে পরিবারসহ বসবাস করে আসছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। উঁচু পাহাড়ে বসতঘর তৈরি গড়ে তুলেছেন সুশান্ত। পুরো বাড়ির আঙিনার চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে।

নিজ বাগানের পরিচর্যা করছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, ছবি: সারাবাংলা

নিজ বাগানের পরিচর্যা করছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, ছবি: সারাবাংলা

কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ২০১৬ সালে বাড়ির আঙিনায় মিশ্র ফলের বাগান শুরু করি। চার বছরের মাথায় বিভিন্ন জাতের ফলন পেতে শুরু করি। আমার বাগানে ২০ প্রজাতির মিশ্র ফল গাছ রয়েছে। বর্তমানে বরই এর ফলন এসেছে। আমার বাগানে বল সুন্দরী, কাশমেরী, দেশী আপেলকুল ও দেশী মিষ্টি কুল- এই চার জাতের বরই রয়েছে। এছাড়া মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লটকন, লিচু, আমলকি, পেঁপে, তেঁতুল, মাল্টা, লেবু, বেল, নারিকেল, সুপারি, রাম্বুটানসহ অন্যান্য বারোমাসি ফল রয়েছে। এছাড়া বিলাতি ধনিয়াসহ বাগানে উৎপাদিত ফল ও সবজি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় করে থাকি। কীটনাশক, ওষুধ, আনুষাঙ্গিক খরচ ও শ্রমিকের মজুরি মেটানোর পরও প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার মতো আয় থাকে। তা দিয়েই আমার সংসার খরচ চলে যায়।

বিজ্ঞাপন

সুশান্ত আরও জানান, মৌসুমি ফল এলে বাগানে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তখন তাদের (শ্রমিক) দিন হিসেবে মজুরি দিতে হয়। আমি বাগান গড়ে তোলার পর স্থানীয় অনেক বেকার যুবক কাজের সন্ধান পেয়েছেন। পাশাপাশি একদিকে আমার নিজের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ের মানুষও ভেজালমুক্ত (ফরমালিন) ফল, শাক-সবজি পাচ্ছেন। আমি মনে করি, এতে মানুষের সেবা করাও যাচ্ছে। তাই চাকরি পেছনে না ছুটে বেকার জীবন কাটানোর চেয়ে কৃষি উদ্যোক্তা কিংবা যে কোনো উদ্যোক্তা হলে সমাজে বেকার মানুষের সংখ্যা কমে আসবে।

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার মিশ্র ফলের বাগান, ছবি: সারাবাংলা

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার মিশ্র ফলের বাগান, ছবি: সারাবাংলা

এদিকে, এই উদ্যোগের কারণে এলাকায় বেশ প্রশংসিত হয়েছেন কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। তার দেখাদেখি স্থানীয় অনেকেই কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। এজন্য তারা সরকারি ও কৃষি বিভাগের সহায়তার কথা বলছেন। সোনারাম কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা বাবুল চাকমা বলেন, কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা আমার ভাগ্নে হয়। সে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ায় গ্রামে তার সুখ্যাতি হয়েছে। অনেকেই এখন তার মতো বাগান গড়ে তোলার কথা ভাবছেন।

একই এলাকার শ্যামল চাকমা বলেন, সুশান্তের বাগানে বিভিন্ন মৌসুমে ও বাগান পরিচর্যার কাজে নারী-পুরুষ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানেও তার ভূমিকা রয়েছে। সবমিলিয়ে সুশান্ত আমাদের গ্রামের একজন সফল মানুষ।

বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তনু খীসা জানান, কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি একজন আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তাও, কৃষি বিষয়ক তার জ্ঞান অনেক ভালো। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে শুরু থেকে তাকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি। এছাড়া নতুন কোনো প্রণোদনা ও সুযোগ এলে তাকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বলতে গেলে পাহাড়ে কৃষি উদ্যোক্তা গড়ে তোলার জন্য তিনি একজন প্রকৃত উদাহরণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, ‘কেবল মিশ্র ফল বাগানই নয়, তিনি (সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা) সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকেই কৃষি কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। কৃষি উদ্যোক্তা হতে কেউ যদি আগ্রহ প্রকাশ করে এগিয়ে আসে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন