বিজ্ঞাপন

পল্লী চিকিৎসকের বাড়িতে ডাকাতি, পুলিশ বলছে ‘নাটক’

February 6, 2022 | 8:02 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

পটুয়াখালী: মহিপুরে পল্লী চিকিৎসকের বাড়িতে গভীর রাতে ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাকাতরা ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ঘরের সবাইকে মারধর করে বেঁধে রেখে নগদ তিন লাখ টাকা ও পাঁচ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে লতাচাপলী ইউনিয়নের পৌরগোজা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ বলছে, ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, পল্লী চিকিৎসক সুকদেব সৈদ্দালের বসত বাড়িতে গ্রামের শতাধিক লোক জড়ো হয়েছেন। তার বসত ঘরের পূর্ব ও উত্তর পাশে দু’টি সিঁধ কাটা রয়েছে। ঘরের প্রধান দরজার লক ভাঙা আছে। ঘরের মধ্যে অবস্থিত মন্দির ও আলমিরাসহ আসবাবপত্র এলোমেলো। মন্দিরে থাকা পিতলের রাঁধা-কৃষ্ণের যুগল মুর্তি নেই।

সুকদেব সৈদ্দাল (৫০) বলেন, ‘রাতের খাবার খেয়ে আমি ঘরের ভেতরের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পরি। আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে সামনের বারান্দায় ঘুমান। আর বড় ছেলে আমার ভাইয়ের বাসায় ঘুমিয়ে ছিলো। রাত দুইটার পরে হঠাৎ একটি শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। এর মধ্যেই আমার স্ত্রী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করে। তখন ডাকাতরা তার চিৎকার থামানোর চেষ্টা করে। আমি রুমের ভিতর থেকে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিলে ওরা আমার রুমের দরজা লাথি মেরে ভেঙে ফেলে। এরপর আমাকে লোহার রড দিয়ে মেরে টাকা ও স্বর্ণালঙঙ্কার চায়। না হলে আমার ছোট ছেলেটাকে জবাই করার ভয় দেখায়। আমি ওদের চাবি দিতে বাধ্য হই। চাবি নিয়ে ওরা আমার হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর ওরা নগদ তিন লাখ টাকা, পাঁচ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার এবং সোনার মূর্তি ভেবে রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি নিয়ে চলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাকাতদের সঙ্গে একটি কাটা রাইফেল, অসংখ্য দেশি অস্ত্র ছিলো। ওরা সংখ্যায় ১৪-১৫ জন। ঘরের মধ্যে ৮-৯ জন, বাকিরা বাইরে ছিলো। আমি কাউকে চিনতে পারি নি। দুজন স্থানীয় ভাষায় কথা বললেও মুখে মাস্ক ছিলো। বাকিরা চট্টগ্রাম এলাকার ভাষার মতো কথা বলছে। ওদের কারও পায়ে জুতা ছিলো না। ওরা নিজেদের মধ্যে গালাগালি ও হাসাহাসি করছে।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ তার ঘর থেকে তিন লাখ দুই হাজার টাকা উদ্ধার করেছে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ঘরে আলাদা আলাদা জায়গায় টাকা থাকে। ডাকাতরা তিন লাখ পেয়ে নিয়ে গেছে। বাকি টাকা খুঁজে পায়নি, যা পুলিশ খুঁছে পেয়েছে।’

প্রতিবেশী সুজন হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলে হৃদয় ও সৌরভ এক জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলো। ডাকাতরা যাওয়ার পর হৃদয় আমাকে ডাকে। আমি ও আমার স্ত্রী এসে দেখি তারা হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় কন্নাকাটি করছে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. দুলাল সিকদার বলেন, ‘আমি সকালে খবর পেয়ে গিয়ে দেখি অনেক লোকজন উপস্থিত। সুকদেব ডাক্তারের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। ডাকাতির আলামত দেখেছি।’

বিজ্ঞাপন

তবে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘রাতে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক টহলে থাকা পুলিশ পাঠাই। পরে আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করি। তাদের একজনের বক্তব্যের সঙ্গে অন্যজনের বক্তব্যের মিল না পেয়ে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে দুটি মোবাইল এবং আলাদা আলাদা জায়গা থেকে তিন লাখ দুই হাজার পেয়েছি। আমার কাছে ঘটনাটি সাজানো নাটক মনে হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনি একজন পল্লী চিকিৎসক। তার কাছে অনেকগুলো ওষুধ কোম্পানি টাকা পাবে এবং আশেপাশের লোকজন তার ঘরে টাকা গচ্ছিত রাখে। তার ঘরে পাওয়া টাকা তাকে ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল দুটি আমি নিয়ে এসেছি, তদন্ত করে বিস্তারিত জানাবো।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন