বিজ্ঞাপন

ঘরের বাঘরা গর্জে উঠলো কি?

April 12, 2018 | 7:30 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকাঃ দেশের ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে সফল দলটি ঢাকা আবাহনী। তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সাফল্যের পর সাফল্যে ক্লাবটি নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। কিন্তু, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বরাবরই ম্লান আকাশী-নীলরা। তাই গায়ে উপধা জুটে যাচ্ছিল- ‘ঘরের বাঘ বাইরে গেলেই ম্যাও!’।

তবে এবার আর ছাড় দেয়নি আবাহনী। ভারতের আই লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের তাদের হারিয়েছে হেসে খেলেই। দাপটের সঙ্গে। এএফসি কাপে এমন দাপুটে জয় তাও আবার বিদেশের মাটিতে। ভাবা যায়!

খাতা কলমে দশ মৌসুম ধরে পেশাদার ফুটবলে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রিমিয়ার লিগের দশ আসরের ছয়টিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবাহনী লিমিটেডই দেশের ফুটবলের রাজা। ঘরের মাঠে তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি আন্তর্জাতিক ফুটবল পা দিলেই ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নদের ব্যর্থতার ফিরিস্তিটা অনেক লম্বা। যদিও আশির দশকের শেষে আর নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবাহনীর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এশীয় পর্যায়ে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার চ্যাম্পিয়ন দল এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভকে হারিয়েছিল। হারিয়েছিল এশীয় ফুটবলের শীর্ষ শক্তি ইরানের চ্যাম্পিয়ন পিরুজিকে। কাতারের আল সাদ, ইরানের ইশতেগলালের মতো দল কোনোমতে মান বাঁচিয়েছিল তাদের সঙ্গে। সাফ অঞ্চলের ক্লাবগুলি পাত্তাই পেত না মোহামেডানের সঙ্গে। বিরাট ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডও আছে মোহামেডানের।

১৯৯৩ সালে মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়া ক্লাবকে ৮-০ আর ১৯৯৬ লাওসের ইলেকট্রিসিটি ক্লাবকে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল সাদা-কালোরা। সেই মোহামেডান তো এখন দূরের ইতিহাস। উল্টোদিকে আবাহনীর রেকর্ড খুবই খারাপ। মোহামেডানের ধারে-কাছেও নয়। সেই আশি-নব্বইয়ের রমরমা যুগেও আবাহনী এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে বলার মতো কিছুই করতে পারেনি। এই যুগে তৃতীয় সারির টুর্নামেন্ট এএফসি প্রেসিডেন্ট কাপে পাঁচবার খেলে একবারও গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা। গত মৌসুমে এএফসি কাপে গ্রুপের চার দলের মধ্যে হয়েছে চতুর্থ। অর্থাৎ এএফসির ছয় আসরে টানা ব্যর্থ বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নরা। ঘরের মাঠেও আন্তর্জাতিক আসরে আবাহনী ভালো করেনি। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শেখ কামাল ক্লাব কাপের দুই আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে আবাহনী।

এবারও মালদ্বীপের ক্লাব নিউ রেডিয়েন্ট ও ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে মাত্র এক গোলের ব্যবধানে হেরে মিশন শুরু করেছিল আবাহনী। পার্থক্য খুবই কম। কিন্তু দলে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হয়েছে এশিয়া কোটা। এএফসি কাপের পূর্বের আসরগুলোতে যে কোটার ব্যবহার করেনি দল এবার সেইয়া কোজিমোকে দিয়ে সেই কোটা কাজে লাগিয়েছে তারা। চার বিদেশি নিয়ে খেলেছে দলটি। যার সাফল্যও পেয়েছে ক্লাব।

বিজ্ঞাপন

ভারতের আইজলের বিপক্ষে ম্যাচের ৩৭ মিনিটেই মূলত জয় বগলদাবা করেছে আবাহনী। ম্যাচের বয়স তখন দুই মিনিট। টুর্নামেন্টের কাঙ্খিত গোলের দেখা পায় আবাহনী। এমেকার পাস থেকে ডি বক্সের ডান প্রান্ত থেকে রুবেল মিয়ার ডান পায়ের শট গোলবারের টপ কর্নার দিয়ে জাল খুজে পায় (১-০)। গোলে উৎসবে ভেসে যায় নীল শিবিররা।

১৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন ডিফেন্ডার এলিসন। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বারের খুব কাছ থেকে গোল করেন এই নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার।

৩৭ মিনিটে সানডে সিজোবার হেড থেকে ডি বক্সের মাঝখানে বল পান সেইয়া কোজিমো। বারের বাঁ পাশ দিয়ে নিচু শটে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান আরও বড় করেন এশিয়ান কোটায় খেলতে আসা এই জাপানিজ মিডফিল্ডার।

আবাহনী এর আগের মৌসুমেও দেখিয়েছে তারা পারে। গত মৌসুমেই ভারতের বেঙ্গালুরু এফসিকে দুর্দান্ত খেলেই ২-০ গোলে হারিয়েছিল আবাহনী। সে ম্যাচে রুবেল মিয়া করেছিলেন অবিশ্বাস্য এক গোল। ১০ জন নিয়ে সে ম্যাচে জিতে আবাহনী নিজেদের যোগ্যতার ঝলক দেখিয়েছিল। এই বেঙ্গালুরুই কিন্তু পরে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

এবার অতীত পেছনে ফেলে এএফসি কাপ নিয়ে আগেভাগেই কোমর বেঁধে নেমেছে আবাহনী। সাইফুল বারীকে কোচ করে দলে অনেক আগেই প্রস্তুতি শুরু করেছে দল। এশিয়ান কোটারও ব্যবহার করেছে। টানা দুই ম্যাচ হেরে তৃতীয় ম্যাচে দাপুটে জয় নিয়ে টুর্নামেন্টেও টিকে রইল দলটি।

এখন ২৫ এপ্রিল আইজলের বিপক্ষে হোম ভেন্যুতে ম্যাচ। এরপর নিউ রেডিয়ান্ট ও ব্যাঙ্গালুরুর সঙ্গে ম্যাচ। একটি হোম অন্যটি অ্যাওয়ে। সব কিছু মিলিয়ে ধারাবাহিক সাফল্যে ফিরতে চায় কোচ, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/জেএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন