বিজ্ঞাপন

সরকার বিদায়ের ক্ষণগণনা চলছে: রিজভী

February 17, 2022 | 12:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকার বিদায়ের ক্ষণগণনা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

রিজভী বলেন, ‘বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে বিনা ভোটের অবৈধ সরকার গুম, খুন, অপহরণকে ক্ষমতায় টিকে থাকার রক্ষা কবজে পরিণত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব বাহিনী ও ৭ র‌্যাব-পুলিশ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপে পিছু হটায় গুম-খুনের আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলোতে কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু ইদানীং আবারও পুরানো পৈশাচিক চেহারায় ফিরে এসে গুমের মতো ভয়াবহ অপরাধ শুরু করেছে সরকার।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাহিনী রূপে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র‌্যাবকে। এদের নিয়োজিত করা হয়েছে পৃথিবীর জঘন্যতম এই অপরাধ সংঘটনে। এরপর রাষ্ট্রীয় আরেকটি বাহিনী গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশকেও গুম-অপহরণ-বন্দুকযুদ্ধে নামানো হয় গোটা দেশে। এখন সিআইডিকেও গুম-অপহরণে নামানো হয়েছে। এহেন পৈশাচিকতায় তাদের সাজানো গল্প একই থাকে— প্রথমে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া। এরপর কখনো অনন্তকালের জন্য অন্তর্ধান-নিঁখোজ, কখনো অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ারের হত্যা, আবার কখনো রাস্তার ধারে অথবা ডোবা নালা বা নদীতে লাশ পাওয়ার রোমহর্ষক নাৎসীয় বর্বরতা।’

রিজভী বলেন, ‘এরই মধ্যে জাতিসংঘ থেকে গুম হওয়া সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যালোচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দুরাচার অবৈধ সরকারকে আত্ঙ্ক ঘিরে ফেলেছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়া শুরু করেছে। ক্ষণগণনা চলছে সরকারের বিদায়ের।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসনের ভয়ংকর শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে দেশবাসীর আসন্ন দুর্বার আন্দোলনের আশঙ্কায় সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার এই মুহূর্তে পদত্যাগ না করলে মিটিং-মিছিল-স্লোগান প্রতিরোধে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।’

‘আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই— গুম-অপহরণ-দুঃশাসন চালিয়ে যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন, তার পরিণতি হবে ভয়ংকর। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন গুম-খুন অপহরণের শিকার পরিবারগুলোর শোকার্তরা কাফনের কাপড় পরে স্বজনদের খোঁজে গণভবনের দিকে রওনা দেবে। দেশের প্রতিটি শোকার্ত মানুষের ধারণা, প্রতিটি গুমের হুকুমের প্রধান আসামি বসে আছেন গণভবনে। গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গণতন্ত্র হত্যার বিচার এ দেশেই হবে। কারণ, এদের জন্য মানবতা ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে,’— বলেন রিজভী।

বাংলাদেশকে অদ্ভুত এক রহস্যের আঁধার ঘিরে ধরেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সরকারের সব কিছুতেই অস্পষ্টতা-রহস্যময়তা। জার্মানিতে কাঁথা-বালিশ চাদরের ফ্যাকটরি পরিদর্শনের নামে পুলিশ প্রধানসহ তিন কর্মকর্তার সফর সংক্রান্ত সরকারি আদেশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি জারি হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তার সই করা আদেশে বলা হয়েছিল, বালিশের কাভারসহ ডাবল সাইজের এক লাখ পিস বিছানার চাদরের শিপমেন্ট নিশ্চিত করতে এই তিন কর্মকর্তা ৯ দিনের জন্য জার্মানি যাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা ফ্যাকটরি অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্টেও (এফএটি) অংশ নেবেন।’

বিজ্ঞাপন

‘এ নিয়ে চরম বিতর্ক দেখা দেওয়ায় পুলিশ সদর দফতর থেকে আরেকটি প্রেসনোট দিয়ে বলা হয়েছিল— বিভ্রান্তির কিছু নেই। যা হয়েছে নিয়মমাফিক হয়েছে। শুধু কিছু জিওতে শব্দগত ভুলের কারণে বিভ্রান্তি। ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ তিন সদস্যের জার্মানি সফর নিয়ে বিভ্রান্তি ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হলেও মূলত চাদর ও বালিশের কাভার নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ থেকেই। তবে এসব প্রস্তুতের জন্য রঙ আসবে জার্মানির একটি কোম্পানি থেকে। কার্যত ওই রঙের গুণগত মান দেখতেই জার্মানি যাচ্ছেন আইজিপিসহ ওই তিন সদস্য,’— বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড সমালোচনা ও চাপের মুখে গতকাল (মঙ্গলবার) পুলিশ সদর দফতর থেকে আবারও বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে— কাঁথা-বালিশ-চাদর কেনার ইস্যু নিয়ে পুলিশ প্রধানকে ঘিরে যা কিছু বলা হচ্ছে, সবই বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। জার্মানি বিছানার চাদর উৎপাদন ও রফতানিকারক কোনো দেশ নয়। তারা ভারী শিল্পের দেশ। সঙ্গত কারণে চাদর, বালিশের কাভার কেনার জন্য আইজিপির জার্মানি গমনের কোনো অবকাশ নেই।’

‘এখন জনমনে প্রশ্ন— তাহলে ৭ ফেব্রুয়ারি সুনিশ্চিত ভঙ্গিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাঁথা-বালিশ ফ্যাকটরি পরিদর্শনের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, তা কি ভুল ছিল? এটা কি এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে? আইজিপির নাম কি ভুলে দেওয়া হয়েছে? নাকি তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল? বড় প্রশ্নটি হচ্ছে— রাষ্ট্র-সরকারের অভ্যন্তরে হচ্ছেটা কী? সরকারের নাটাই কার হাতে?,— প্রশ্ন রিজভীর।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন