বিজ্ঞাপন

পহেলা বৈশাখ ঘিরে নান্দনিক পসরা

April 13, 2018 | 8:14 am

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বহুজাতিক কোম্পানির করপোরেট অফিসে কাজ করছেন মিসেস মিরানা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে অফিস সাজানোর দায়িত্ব পড়েছে তার ওপর। অফিসে নান্দনিক একটা ‘লুক’ আনার জন্য লোকজ উপকরণ দরকার। তাই সহকর্মী সায়মা রহমানকে নিয়ে সোজা চলে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়- দোয়েল চত্বরে।

বিজ্ঞাপন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন সড়কের ফুটপাত জুড়ে মৃৎ শিল্পের স্থায়ী দোকান-পাট। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দোকানগুলোর পরিধি বেশ বাড়ানো হয়েছে। দোকানের বর্ধিত অংশ পৌঁছেছে সড়ক পর্যন্ত। বেচা-কেনা তো বটেই— চোখ ও মনের তৃপ্তি মেটাতে দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে।

 

বিজ্ঞাপন

 

সেই ভিড়ের মধ্যে প্রমাণ সাইজের দু’টি ‘সাজি’ (বাঁশ দিয়ে তৈরি পাত্র বিশেষ) হাতে দাঁড়িয়ে আছেন মিসেস মিরানা। আরো অনেক কিছু কেনার বাকি। পুরো অফিস সাজানো হবে বেত, বাঁশ ও মাটির তৈরি বিভিন্ন উপকরণে। পহেলা বৈশাখ অফিসে ব্যবহারের জন্য তৈজসপত্রগুলোও হতে হবে ষোলআনা মাটির। বিশেষ এই দিনটিতে রাসায়নিক উপকরণে তৈরি স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, শিসা, সিরামিক বা লোহা-লক্করের থালা-বাসনে চলবে না। সবকিছুই হতে হবে আবহমান বাংলায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হওয়া মাটির বাসন-কোসন। তাই একটার পর একটা মাটির আইটেম পছন্দ করছেন, দাম-দর ঠিক করে কিনে নিচ্ছেন মিসেস মিরানা। তাকে সহযোগিতা করছেন অফিস সহকর্মী সায়মা রহমান।

 

বিজ্ঞাপন

 

কথা হয় এই দুই নারীর সঙ্গে। ‘শুধু কী অফিস সাজাতে বছরের এই একটা দিন বেত-বাঁশ-মাটির তৈরি তৈজসপত্রে প্রেম?

চৌকস দুই নারীর স্মার্ট উত্তর, ‘মোটেই না। নান্দনিক এই তৈজসপত্রের প্রতি প্রেম চিরকালীন। কিন্তু সেটির বহিঃপ্রকাশ হয়ত বৈশাখে এসে ঘটে। দেখুন, এখানে যে দোকানগুলো আছে, ওরা কিন্তু টেম্পরারি নয়। সারাবছরই এখানে বেচা-কেনা হয়। বৈশাখ এলে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

অবশ্য বিক্রয়কর্মী শাহবুদ্দিন জানালেন, সারাবছর মূলত বেত, বাঁশ ও মাটির তৈরি শো-পিস বিক্রি হয়। আর বৈশাখ এলে বিক্রি হয় গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্র।

 

 

পহেলা বৈশাখের ১৫ দিন আগে থেকেই দোয়েল চত্বর এলাকার এই নান্দনিক পসরায় জমজমাট বেচা-কেনা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নন্দনপ্রিয় মানুষ এখান থেকে রুচি, সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে পছন্দের জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান।

মাটির জগ, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, হাঁড়ি, পাতিল, কলস, বাটি, কড়াই, কাপ-পিরিচসহ ঘরের কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্র তো আছেই। সঙ্গে আছে ঘর সাজানোর জন্য মাটির শো-পিস হুক্কা, মুখোশ, ফুলদানি, পুতুলসহ নানারকম খেলনা।

শুধু মাটির তৈরি নয় বেত, পাট ও বাঁশের তৈরি গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের পাশাপাশি ঘর সাজানোর উপকরণও নান্দনিক এই পসরাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

বাঁশ ও বেতের তৈরি সাজি, ডালা, কুলা, চালুন, শের, ধামা, পলো, ঢেঁকি, সিকা, চেঙ্গারিসহ ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের নানা উপকরণে ঠাসা এ নান্দনিক পসরা শহুরে মানুষের হৃদয় হরণ করে চলছে।

 

 

অবশ্য পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সাজিয়ে বসা এই বাজারে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের যাওয়ার জো নেই। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। মাটির প্লেট, বাটি, মগ ও জগগুলো বিক্রি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম, কাচ বা সিরামিকের চেয়েও বেশি দামি।

মাঝারি আকারের একটি মাটির জগ ৩০০ টাকা, আকারভেদে একেকটা প্লেট ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, মগ ৭০ টাকা, গ্লাস ৫০ টাকা, ভাতের হাঁড়ি ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। দামাদামির কোনো সুযোগ নেই। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে দোকানিরা গো’ ধরে বসেছেন— এক দাম, এক রেট।
কথা হয় বিক্রয়কর্মী সাজেদের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে পহেলা বৈশাখে বেশি দামে আমাদেরকে জিনিসপত্র কিনতে হয়। সে কারণে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।’

ধানমন্ডি থেকে আসা সানজিদা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। তবুও কিনতে আসছি যখন খালি হাতে তো ফেরা যাবে না।’

ছবি: হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/এজেড/একে/এমএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন