বিজ্ঞাপন

পিবিআইয়ের বদলে র‌্যাব কিংবা সিআইডি দিয়ে তদন্ত চান মিতুর বাবা

February 22, 2022 | 6:18 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন দাখিল করেছেন তার বাবা মোশাররফ হোসেন। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিবর্তে র‌্যাব অথবা সিআইডিকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিমের আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

মোশাররফের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিতু হত্যার ঘটনায় প্রথমে উনার স্বামী অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের দায়ী করে একটি মামলা করেছিলেন। পিবিআই তদন্ত করে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে বলল যে, বাবুল আক্তারই খুনের সঙ্গে জড়িত। বাবুল আক্তার নারাজি দিলেন। আদালত সেটা গ্রহণ না করে পুনঃতদন্তের আদেশ দিলেন।’

‘কিন্তু যখনই বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণের কথা পিবিআই আদালতকে জানালেন তখনই তো নতুন মামলার ভিত্তি তৈরি হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই মোশাররফ হোসেন বাবুল আক্তারকে আসামি করে মামলা করলেন। ওই মামলায় সাক্ষী-আসামিসহ কয়েকজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হলো। এরপর পিবিআই আবার ওই মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিল। বাদীর সঙ্গে একবার কথাও বলল না। সুতরাং বাদী সেটা মানবেন কেন? তিনি নারাজি আবেদন দিয়েছেন। তিনি পিবিআইয়ের পরিবর্তে র‌্যাব অথবা সিআইডিকে দিয়ে তদন্তের আবেদন করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

আদালত আগামী ৬ মার্চ মামলার নথিসহ শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন বলে জানান আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।

মোশাররফের দায়ের করা মামলায় গত ২৫ জানুয়ারি তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। আদালত ২২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানির সময় নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মোশাররফ নারাজি আবেদন দেওয়ায় গ্রহণযোগ্যতার শুনানি আর হয়নি।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। প্রায় দেড় বছর পর ২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তারের মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, যাতে উল্লেখ করা হয়- তদন্তে বাদী বাবুল আক্তারের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

ওইদিনই অর্থাৎ ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

পিবিআই হেফাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে ১২ মে মোশাররফের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে বাবুল আক্তার কারাগারে আছেন। ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর মামলার এক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানান, বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করায় পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। তার ঘনিষ্ঠ সাইফুল হক, গাজী আল মামুন, মোকলেসুর রহমান ইরাদ এবং আসামি মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারও আদালতে জবানবন্দি দেন।

তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এসব জবানবন্দির এক পর্যায়ে নিজের মামলায় পিবিআইয়ের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন দাখিল করেন বাবুল আক্তার। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারের নারাজি আবেদন প্রত্যাখান করেন। একইসঙ্গে পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনও প্রত্যাখান করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

ফলে মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলাটির পাশাপাশি করা বাবুল আক্তারের মামলাটিও সক্রিয় হয়ে যায়। দুই মামলার সমান্তরাল তদন্তভার এসে পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে তার নিজের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। ৯ জানুয়ারি আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে বাবুলকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।

কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে মোশাররফের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একইসঙ্গে ওই মামলার ডকেট প্রথম মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে তদন্তের জন্য আবেদন করেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন