বিজ্ঞাপন

সক্ষমতা বাড়লেও পুরোপুরি আস্থাভাজন হয়ে ওঠেনি ডিএমপি

February 26, 2022 | 6:27 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মাত্র ১২টি থানা এবং সাড়ে ৬ হাজার জনবল নিয়ে ১৯৭৬ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গঠিত হয়। বর্তমানে ৫০টি থানা নিয়ে চলছে পুলিশের এই প্রধান ইউনিটটি। জনবহুল রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা বিধান ও অপরাধ প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের এই সংস্থাটি। যার বর্তমান জনবল প্রায় ৩২ হাজার।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ ঢাকাবাসীর অভিযোগ, জনবল, আধুনিক সরঞ্জামাদি, তথ্য প্রযুক্তিসহ সব জায়গায় ডিএমপির সক্ষমতা বাড়লেও নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে রয়েছে এক বিশাল ঘাটতি। জনগণের পুরোপুরি আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেনি ডিএমপি। থানা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই হয়রানি, দেরিতে রেসপন্স করা, মামলা না নেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে, ডিএমপির দাবি ডিএমপি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে পুলিশের একটি শক্তিশালী ইউনিটে পরিণত হয়েছে। ডিএমপিতে সব সময়ই যোগ্যতম অফিসাররা কাজ করে যাচ্ছেন। যোগ্যতার নেতৃত্বে তারা অনেক বেশি এগিয়ে। সৃজনশীল কর্মকৌশল কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন অপরাধের ধরণ আবিস্কার ও তা প্রতিরোধে কাজ করে চলেছেন কর্মকর্তারা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক হয়েছে ডিএমপির অন্যান্য ইউনিটগুলো। প্রায় তিন কোটি মানুষের এই শহরে পুলিশ নানাভাবে সেবা দিলেও সবার প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

তবে এতবড় একটি শহরে অপরাধের মাত্রা হিসেবে ধরলে তেমন কোনো অপরাধই হচ্ছে না। দুএকটি যে চুরি ছিনতাই ঘটছে তা অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিদের পাকড়াও করা যাচ্ছে। এরপরেও জনগণের সচেতনতা বাড়লে এই সেবা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপি থেকে জানা যায়, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিএমপিতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সাইবার ক্রাইম ইউনিটসহ বেশ কয়েকটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সাহসিকতার সঙ্গে ইউনিটগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চারটি বিভাগ থেকে থানা, গোয়েন্দা ও ট্রাফিক বিভাগকে আটটি বিভাগে উন্নীত করা হয়েছে। এর মূল কারণ হলো নাগরিক সেবা যেন দোরগোড়ায় পৌঁছায়। সাধারণ ডায়েরির ফর্মেটে পরিবর্তন আনা হয়। এখন যে কেউ চাইলেই বাসায় বসে অনলাইনে জিডি করতে পারেন।

একই সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রেও সহজ করায় নগরবাসী ঘরে বসেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। মাত্র তিনদিনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাচ্ছেন নগরবাসী। অপরাধী শনাক্তে নাগরিক ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়। নারী ও শিশুদের সেবার লক্ষ্যে ডিএমপির থানাগুলোতে যুক্ত করা হয় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক।

দক্ষ জনবল, আধুনিকায়ন ও অনেক কার্যক্রম সহজ করা হলেও এখনও পুরোপুরি জনবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি থানা পুলিশ। ৪৭ বছরে থানার সংখ্যা ও দক্ষ জনবল কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও নাগরিক সেবা প্রদান নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ উঠছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে। থানায় মামলা কিংবা জিডি দায়ের করতে গেলে না নেওয়া, মামলা নিলেও তদন্ত ও চার্জশিট ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা, একপক্ষের হয়ে কাজ করা, মাদক দিয়ে ফাঁসানো কিংবা চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেয়ে মাদক মামলায় ফাঁসানো, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। এক্ষেত্রে নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি রয়েই গেছে। তবে মামলা না নেওয়া, হয়রানি করা এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী নাগরিক সেবা প্রদান না করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত আড়াই বছরে এসআই থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার প্রায় শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, নগরবাসীর যতটা প্রত্যাশা ছিল, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও হয়ত সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মামলা নিতেই সরকার আমাদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে। কেউ মিথ্যা মামলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। তবে মামলা নিতেই হবে। থানা পুলিশের একটি কালচার হয়ে গেছে- ডাকাতি-ছিনতাই মামলা নিতে চায় না। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। থানায় মামলা বা সেবা নিতে গেছেন এমন ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে কল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সেবা পাননি এবং এক্ষেত্রে যে সকল অফিসার জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কমিশনার বলেন, ‘আমরা আরও বেশি আন্তরিক হয়ে কাজ করতে চাই। সে জন্য ডিএমপির সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তার জন্য নানাভাবে মোটিভেশন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ ঢাকাবাসীর কাছ থেকেও প্রত্যাশা করছি, তারা যেন সব নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। একজন সুনাগরিকের যে কর্তব্য তা যেন তারা পালন করেন। এতেই সেবার মান আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন