বিজ্ঞাপন

সূর্যের শক্তিতে উদ্ভাসিত হওয়ার বার্তায় বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা

April 14, 2018 | 9:27 am

লেখা: মাকসুদা আজীজ
ছবি: 
হাবিবুর রহমান ও সুমিত আহমেদ

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: অমিত শক্তি ও সম্ভাবনার আকর সূর্য। আকাশে মেঘ আসে, দিনের পরে নামে রাত। তারপরেও প্রতিদিন নতুন একটি সূর্য ওঠে, জানায় তার অসীম সম্ভাবনা আর টিকে থাকার প্রত্যয়ের কথা।

আলোকিত সূর্যের প্রত্যয় নিয়ে শনিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয় ১৪২৫ বঙ্গাব্দের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার প্রাণের বাণী, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। সূর্যকে সামনে রেখে লালনের এই বাণীতে ধ্বনিত হয় শোভাযাত্রা। নাচে গানে শাহবাগ, শিশু পার্ক হয়ে মৎস ভবনের সামনে এসে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা।

বিজ্ঞাপন

বর্ণিল এই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নানা বয়সী মানুষের হাতে হাতে ছোট ছোট পেঁচা, বাঘের মুখের প্রতিকৃতি। মাঝে মাঝেই উঁকি দিচ্ছে বিশাল মাথার রাজা রাণী।

এক এক জন রাজা রানী নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে ভিড়ের মাঝেও অনন্য। লোকে লোকারণ্য এ আনন্দ মিছিলের মাঝে মাঝেই আছে বিশাকার সব প্রতিকৃতি। লোক সংস্কৃতির মাটির টেপা পুতুলের অবয়ে তৈরী হয়েছে হাতি, ঘোড়া, বিশাল একটি পুতুল, মাছ সামনে নিয়ে মাছরাঙা, রাগী একটি ষাঁড়।

বিজ্ঞাপন

এদের সবাইকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশাল একটি সূর্য।

১৪২৫-র মঙ্গলশোভা যাত্রা চারুকলার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সূর্যটাই ছয় সাতদিন আগে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের তোপে পুড়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল আরও অনেক প্রতিকৃতি। তার পরেও চারুকলার শিল্পীরা সূর্যের মতো ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানুষের ভজনায়। মঙ্গল শোভাযাত্রা তার জন্মলগ্ন থেকে এভাবেই সরবে জানিয়ে যাচ্ছে জেগে উঠার কথা, জ্বলে উঠার কথা।

বিজ্ঞাপন

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম এই অনুষ্ঠান মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু আশির দশকে। তখন বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সামরিক শাসন চলছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিল্পীরা বিভিন্ন প্রতিকৃতি, মুখোশ, বিশাল সব ভাস্কর্য নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায়।

১৯৮৯ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম ছিল আনন্দ মিছিল। শুরুতেই এ মিছিল নজর কাড়ে সকলের। তারও আগে ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল- পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

প্রতি বছর একটি নতুন বিষয়কে মাথায় রেখে, নতুন স্লোগানে পহেলা বৈশাখের সকালে শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ এ আনন্দ মিছিল ১৯৯৬ সালে এসে নাম পায় “মঙ্গল শোভাযাত্রা” সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিরিবিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট আয়োজন করে আসছে এ উৎসবের।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।

চারুকলার সঙ্গে তাল রেখে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতিক সংগঠন নিজ আয়োজনে করেন মঙ্গল শোভাযাত্রার। এ বছর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

দিল্লিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন, তাঁদের সবাইকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলা বর্ষবরণের এই আয়োজনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ করা হয়েছে দিল্লির বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠনকেও।

শনিবার পহেলা বৈশাখের বিকেলে চাণক্যপুরীর প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্র প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হবে এ শোভাযাত্রা।

সারাবাংলা/এমএ/এমআইএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন