বিজ্ঞাপন

‘ভোট চোরদের দেখলে এই স্লোগান দেবেন…’

March 10, 2022 | 10:01 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আন্দোলনের মাধ্যমে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য মানুষকে উজ্জীবিত করতে নেতাকর্মীদের তিনটি ‘নতুন’ স্লোগান শিখিয়ে দিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘ভোট চোরদের দেখলেই এই স্লোগানগুলো দেবেন, তাহলে মানুষ উজ্জীবিত হবে।’

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানা আক্তারের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এমন স্লোগান দেবেন যা মানুষকে উজ্জীবিত করবে। কয়েকটা স্লোগান সবাইকে শিখতে হবে, নতুন স্লোগান। একটা স্লোগান হচ্ছে- তুই চোর তুই চোর, ভোট চোর ভোট চোর। ভোট চুরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দেখলে এই স্লোগান দেবেন। আরেকটা স্লোগান আছে, ‘শেখ হাসিনার বদলে কেয়ারটেকার, ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার’। আরেকটা স্লোগান আছে আমাদের নেতা তারেক রহমানের, সেটা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ যাবে কোনপথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’। স্লোগান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করতে হবে। স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবসময় ছোট ছোট কিছু স্লোগান তৈরি হয়। এরশাদের পতনের সময় অনেক স্লোগান জনপ্রিয় হয়েছিল।”

ভোটচুরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই ভোট চোরদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আলাপ ছাড়া এই ভোট চোরদের সঙ্গে কোনো আলাপ আমরা করব না। এই ভোট চোরদের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমর যাব না। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর সবচেয়ে ‍গুরুত্বপূর্ণ সময় আমরা অতিক্রম করব। একেকটা দিন অত্যন্ত মূল্যবান সময় যাবে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এই সরকারকে আর সময় দেওয়া যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

‘অনেক বেশি সময় তারা পেয়ে গেছে। অনির্বাচিত সরকার দিনের পর দিন অত্যাচার-জুলুম করে দেশটাকে দখল করে রেখেছে। এরা কোনো সরকার নয়, এরা দখলবাজ। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এভাবে বাংলাদেশ চলতে পারে না। তাদের হাত থেকে দেশটাকে মুক্ত করতে হবে।’

ভোট চুরির সঙ্গে জড়িতদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই মন্তব্য করে সাবেক মন্ত্রী খসরু বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় থাকার জন্য অবৈধ কাজ করেছে, তারা বাঁচতে পারবে না। আজ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। নিষেধাজ্ঞা এসেছে ব্যক্তির ওপর। যাদের ব্যবহার করে গুম, খুন, হত্যা করা হয়েছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সময়ের অপেক্ষা, পুরো সরকারের ওপর আসবে। আজ দেশে-বিদেশে যারা আইনের শাসনের পক্ষে আছে, জনগণের জীবনের নিরাপত্তার পক্ষে যারা আছে তারা এই রেজিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সুতরাং ভোট চোরদের যাবার কোনো জায়গা নেই।’

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দলের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কিন্তু আন্দোলনে নেমে গেছি। এই কর্মসূচি শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত শেষ হবে না। নারীরা এগিয়ে না আসা পর্যন্ত কিন্তু শেখ হাসিনার পতন হবে না। সবাইকে রাস্তায় থাকতে হবে। আগামী দিন আরও বেশি কঠোর হবে। আমরা ভাইবোন সবাই মিলে একসঙ্গে রাস্তায় থাকব। বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় আন্দোলন হবে। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ নারী। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন। তাদের সবাইকে নিয়ে দল করতে হবে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে।’

‘বাংলাদেশের গরীব মানুষ, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা সবাই কিন্তু আন্দোলন চায়। তারা বলছে, একটা কিছু করেন। মহিলা দলের নেত্রীদের পাড়ায় পাড়ায় নারীদের সজাগ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে। চট্টগ্রামে আন্দোলনে মহিলা দল অত্যন্ত ভালো ভূমিকা পালন করেছে। আমি দশ বছর চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি ছিলাম। আমার সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে, রাস্তায় প্রতিবাদ করে অনেকে জেলে গেছে, আহত হয়েছে, অনেকে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। এর চেয়ে কঠিন সময় বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কখনও পার করেনি। আগামী ছয় মাস থেকে একবছর এভাবে রাস্তায় থাকতে হবে। সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরব।’

নারী নেত্রীদের দলের আরও উচ্চপদে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মূল দলে ৩০ শতাংশ নারী আমরা সম্পৃক্ত করব, এটা সিদ্ধান্ত আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা যে যে-ই চেয়ারে বসি সেটা আর ছাড়তে চাই না। সেই চেয়ার ছাড়াও উপরে অনেক জায়গা আছে। কিন্তু সেখানে যেতে চাই না। সারা বাংলাদেশের একই চিত্র। যেখানে বসে আছে সেখানেই বসে থাকবে, আর কোথাও যাবে না। বিএনপির মালিক আর কেউ নয়। আমরা সবাই বিএনপির মালিক।’

চরিত্রহননের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘মনমানসিকতা এমন হওয়া উচিত নয় যে, একজন আরেকজনকে সম্মান দেখিয়ে কথা বলবে না। যারা সম্মান করতে জানে না, তাদেরও কেউ সম্মান করবে না। আমাদের দলের মধ্যেও একজন কীভাবে আরেকজনের চরিত্রহনন করবে সেটাতে লিপ্ত থাকে। এটা খুবই খারাপ, বাজে ট্রেন্ড। এটা বন্ধ করতে হবে। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু একজন আরেকজনকে সম্মান করবে না, এটা কেমন কথা! পদ না পাওয়া মানে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়। আমি ১৫ বছর রাজনীতি করেছি কোনো পদ ছাড়াই। পদ ছাড়াও রাজনীতি করার সুযোগ আছে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম মহানগর ম‌হিলা দ‌লের সা‌বেক সভাপ‌তি ম‌নোয়ারা বেগম ম‌নি ও সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরীর প‌রিচালনায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক ফা‌তেমা বাদশা, লুৎফা খানম স্বপ্না।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন