বিজ্ঞাপন

তাবিউরের নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না— জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

March 14, 2022 | 10:41 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বেরোবি: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন অবৈধভাবে চাকরি করার দায়ে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হকের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিন্নাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সোমবার (১৪ মার্চ) এ রুল জারি করেন।

প্রসঙ্গত যে, মাহামুদুল হক তাবিউর রহমানের অবৈধ নিয়োগের কারণে নিয়োগ বঞ্চিত হন এবং সাত বছর আইনি লড়াইয়ে পর হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ পান ২০১৯ সালে।

রিটকারী শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, ‘তাবিউর রহমানের প্রভাষক পদের নিয়োগ হয়েছে অবৈধভাবে। তার ওই অবৈধ অস্থায়ী পদ স্থায়ী করতেও পদে অনিয়ম করা হয়েছে। আবার তার প্রভাষক পদে স্থায়ীকরণ হওয়ার আগেই তিনি হয়েছেন সহকারী অধ্যাপক।’

বিজ্ঞাপন

নিয়োগ বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের নথি থেকে জানা যায়, তাবিউর রহমানকে ৭ মার্চ পদোন্নতি বোর্ড করে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। একইদিনে ৭৭তম বিশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেওয়া হয়। তাবিউর রহমান পতাকা অবমাননা মামলার অন্যতম আসামি। মামলার তদন্তে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। অথচ তাকে বরখাস্ত না করে দেওয়া হয়েছে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি তাও আবার অনিয়ম করে। অথচ একইভাবে রংপুর কোতয়ালী থানায় এক মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়ায় ২০১৫ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ৪৫তম সিন্ডিকেটে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি স্থগিত করা হয়। তাবিউর রহমানের ‘অবৈধ নিয়োগ’ স্থায়ী করতেও পদে পদে অনিয়ম করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বেরোবি শিক্ষকের ‘অবৈধ’ নিয়োগ বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজপত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক দু’টি স্থায়ী পদে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমান প্রধানসহ মোট ২২ জন প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে মোহা. মাহামুদুল হক ও নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমান তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, অপেক্ষামান তালিকায় তৃতীয় হিসেবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বাছাইবোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, কম্পিউটারে কম্পোজকৃত ‘মেধাক্রমানুসারে’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘যেকোনো’ শব্দটি লেখা হয়েছে সুপারিশপত্রে। ওই সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে: ‘চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত আবেদনকারী ওই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করতে অপারগ হলে অপেক্ষামান তালিকা থেকে প্রথমজনকে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হলো। অপেক্ষামান তালিকার প্রথম জন যোগদানে অপারগ হলে অপেক্ষমান তালিকার দ্বিতীয় জনকে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করা হল।’ অপেক্ষামান তালিকার তৃতীয়জন সর্ম্পকে কিছুই বলা নেই কারণ ওই সিরিয়াল ছিল না এজন্য যে দু’টি পদের বিপরীতে দু’জনকে অপেক্ষামান তালিকায় রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২১তম সিন্ডিকেট অপেক্ষামান তালিকায় দুই জনের পরিবর্তে তৃতীয়জন তাবিউর রহমানের নাম অনুমোদন করা হয় এবং বলা হয় নিচের তালিকা থেকে ‘যে কাউকে’ নিয়োগ দেওয়া যাবে। সিরিয়াল রাখা হয় ১. মোহা. মাহামুদুল হক ২. নিয়ামুন নাহার ৩. তাবিউর রহমান প্রধান।

উল্লেখ্য, নিয়োগের জন্য মেধাতালিকায় তিনজন এবং অপেক্ষামান তালিকায় সেই তিনজনকে অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ২২তম সিন্ডিকেটে যে কাউকে শব্দটি বাতিল কিন্তু অবৈধভাবে অপেক্ষমান তালিকায় সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়। এতে মেধাতালিকার প্রথমজন যোগদান না করায় তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।

২১তম সিন্ডিকেটে অনুমোদনপ্রাপ্ত ‘যে কাউকে’ শব্দটি সিন্ডিকেট সদস্যদের আপত্তির কারণে বাতিল করা হয়। অর্থাৎ অপেক্ষামান তালিকার প্রথমজন মোহা. মাহামুদুল হক এবং দ্বিতীয়জন নিয়ামুন নাহার নিয়োগ পান ২১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। কিন্তু এখানেও জালিয়াতি করা হয়। এতে নিয়োগের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত ২জন শিক্ষকদের নাম লেখার সময় প্রথমজন হিসেবে তাবিউর রহমান প্রধান এবং দ্বিতীয়জন হিসেবে নিয়ামুন নাহারের নাম লেখা হয়। অপেক্ষমান তালিকায় প্রথম মোহা. মাহামুদুল হকের নাম বাদ দিয়ে অপেক্ষমান তালিকার সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়।

এছাড়া তাবিউর রহমান প্রধানকে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ নিয়োগ বাছাইবোর্ড ছিল প্রভাষক পদে। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কেউ দরখস্ত না করায় কোন বাছাইবোর্ড হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রার্থী পাওয়া না গেলে এর বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগ দিতে হলে নতুন করে বিজ্ঞাপন দিতে হয় কিন্তু তাবিউর রহমানের নিয়োগের সময় তা অনুসরণ করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, ‘নিয়োগ থেকে পদোন্নতি পর্যন্ত সব প্রক্রিয়াই অবৈধভাবে হলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করার আর আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি থাকে না। বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। আর পতাকা মামলার তদন্তে প্রমাণিত আসামিকে পদোন্নতি দেওয়া আরেক স্খলন। এ ধরনের আসামিদের পদোন্নতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নিয়েছেন। আমি বিষয়টি আদালতের নজরে আনবো।’

উল্লেখ্য, মাহামুদুল হক হাইকোটের রায়ে ১০ মার্চ ২০১৯ ওই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২০ তাবিউর রহমান প্রধানের ‘অবৈধ ও জালিয়াতির মাধ্যমে’ নিয়োগ বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন মাহামুদুল হকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম। মাহামুদুল হকের জ্যেষ্ঠতা, জ্যেষ্ঠতানুযায়ী পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও চাকরির আনুতোষিক বিষয়াদি দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই নোটিশে। এই মামলাও প্রক্রিয়াধীন।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন