বিজ্ঞাপন

যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টা উড়ল ইউএস বাংলার বিমান

March 15, 2022 | 4:26 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মালদ্বীপগামী ইউএস বাংলার বিএস৩৩৭ ফ্লাইটটি বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর এই যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়েই ফ্লাইটটি ঢাকার আকাশে সাড়ে ৩ ঘণ্টা চক্কর দেয়। পরে বিমানটি মালদ্বীপ না গিয়ে আবার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) শাহজালাল বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র এবং বিমানটিতে থাকা কয়েকজন যাত্রী সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মালদ্বীপগামী ইউএস বাংলার বিমানে থাকা যাত্রী এটিএন নিউজের সংবাদপাঠিকা শ্রাবণী জলি সারাবাংলাকে বলেন, ইউএস বাংলার ফ্লাইটটি মালদ্বীপের মালের উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা ছিলো ১১টা ১০ মিনিটে। কিন্তু ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সকাল সাড়ে ১১টায়। এরপর বিমানটি ফ্লাই করার আধা ঘণ্টা পর বৈমানিক জানায় বিমানটি ভুল তথ্য দিচ্ছে এবং সঠিক উচ্চতায় বিমানটি যেতে পারছে না।

তিনি আরও জানান, এরপর বিমানটি মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে না গিয়ে বিমানে থাকা ফুয়েল বার্ন করেছে ঢাকার আকাশে সাড়ে ৩ ঘন্টা উড়ে। এছাড়া বিমানের ভেতরে প্রচন্ড গরম এবং হযবরল সিস্টেম ছিল। এসময় বিমানের ভেতরে থাকা সমগ্র যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। এই ধরনের সমস্যায় পড়লে যাত্রীদের মানসিক অবস্থা খারাপ ছিল।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা (জিএম) মো কামরুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।

এই ধরনের সমস্যা কেন হতে পারে এই কারণ খুঁজতে একাধিক অভিজ্ঞসম্পন্ন বৈমানিকের সঙ্গে কথা বলে সারাবাংলা। জানা যায়, বিমানের ওজন বেশি থাকলে, ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম কাজ না করলে কিংবা আকাশে বেশি বিমান থাকলে বিমান উপরে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে এটিসি (কন্ট্রোল টাওয়ার) ক্লিয়ার না দিলে বিমান উপরে উঠতে পারে না। তবে কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ৩০ মিনিট উড্ডয়ন করলে বিমানটির পক্ষে ২৮-৩০ হাজার ফিট উপরে উঠা সম্ভব। তবে সেসময় যদি কোনো বিমানে সমস্যা দেখা দেয় আর বৈমানিক যদি নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে না চান তাহলে বিমানে থাকা তেল শেষ না করে বিমানটি জরুরি অবতরণ করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।

জানা যায়, বিমানে থাকা তেল না কমালে বিমানটি জরুরি অবতরণ করতে সমস্যা হতে পারে। কারণ উড্ডয়নের পরে বিমানটি জরুরি অবতরণ করতে চাইলে বিমানে থাকা তেল শেষ করাটাই প্রথম কাজ। কারণ কোনো বিমান যখন অবতরণ করে তখন বিমানটির ঘণ্টায় গতি থাকে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ কিলোমিটার। সেসময় বিমানটি ভারি থাকলে অবতরণের সময় বিমানের টাওয়ার ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনার সাথে চাকায় আগুনও ধরে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বৈমানিকরা জানান, বিমানটি যেহেতু আকাশে চক্কর দিতে পেরেছে সেহেতু বিমানটির হয়ত কমিনিকেশন সিস্টেম ঠিক ছিল।তবে ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হয়ত ঠিক ছিল না। কারণ বিমানের ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তথা নেভিগেশন সিস্টেম কাজ না করলে বিমানটি কোথায় আছে, কতো গতিতে আছে, নিচে যাচ্ছে নাকি উপরে যাচ্ছে এমনকি বিমানের কোনো সিস্টেমই কাজ করার কথা না। হয়ত বিমানের কোনো ইলেকট্রনিক্স সমস্যাও থাকতে পারে কিংবা বিমানে এমন কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছিল যার কারণে বিমানটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে না গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে।

এমন সমস্যায় বিমানটি বড় কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে পারত কি না এমন প্রশ্ন করা হলে বৈমানিকরা জানান, যেহেতু বিমানটি আকাশে চক্কর দিয়েছে সেহেতু বিমানটি কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যদি যোগাযোগ না করতে পারত তাহলে বিমানটি বড় দুর্ঘটনায় পড়তে পারত। সেক্ষেত্রে যাত্রী এবং বিমানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

এদিকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনকে ফোন দেওয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের ১২ই মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ছিলেন সেদিনের ওই ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্বে। তার সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ। দুর্ঘটনায় তারা দুজনসহ বিমানের মোট ৫১ জন যাত্রী এবং ক্রু নিহত হন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসজে/এসএসএ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন