বিজ্ঞাপন

যাচাই কমিটির সুপারিশ না পাওয়া ১২৬ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ

March 15, 2022 | 11:17 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ভাতা পেয়েছেন। তবে নতুন করে যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ না পাওয়ায় রাজশাহী মহানগর এলাকার ১২৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ গত মাসের ভাতা তারা পাননি।

বিজ্ঞাপন

বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখন প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পান। গত রোববার (১৩ মার্চ) সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা গত মাসের ভাতা পেয়েছেন। তবে এই ১২৬ জনের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা হয়নি।

বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনলাম। ভাতা বন্ধ হওয়ার পর দুয়েকজন আমার কাছে এসেছিলেনও। কিন্তু এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এটি জামুকা’র (জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল) সিদ্ধান্ত।’

ভাতা বন্ধ হওয়া ১২৬ জনের মধ্যে আছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান। ২০০৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে তিনি নিয়মিত ভাতা পাচ্ছিলেন। ভাতা বন্ধ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ না করার পর আমি তো আপিল করেছি। সেই শুনানি এখনো হয়নি। এর মধ্যেই ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমি এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণ প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রয়োজন জামুকার সুপারিশও। কিন্তু বিভিন্ন সময় গেজেটভুক্ত হওয়া রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জনের মধ্যে ১৬০ জনের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সে কারণে জামুকা গত বছর তাদের যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয়। জামুকার নির্দেশনায় জেলা প্রশাসন একটি কমিটির মাধ্যমে এই ১৬০ জনকে নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে।

চার সদস্যের ওই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্য সচিব ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এস মনিরুল ইসলাম সদস্য হিসেবে ছিলেন। গত বছরের শুরুতে এই কমিটি আপত্তি ওঠা ব্যক্তিদের জবানবন্দি নেয়। এছাড়া ওই ব্যক্তির পক্ষে কোনো সাক্ষী থাকলে তারও সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটি জামুকায় প্রতিবেদন পাঠায়। যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসা মোট ১৬০ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। গেজেট নিয়মিতকরণের সুপারিশ বঞ্চিত হন ১২৬ জন। এই ১২৬ জনেরই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, এই ১২৬ জন এত দিন যে ভাতা নিয়েছেন, তা তা ফেরত নেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘সরকার তাদের গেজেটভুক্ত করেছিল। সরকারই বাতিল করেছে। আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি এ বিষয়ে এখন কিছুই বলতে পারছি না।’

ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ১২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসাসহ রাজশাহীর সুপরিচত অনেক মুখ। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে মাঝেই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। এ নিয়ে অবশ্য ক্ষোভ আছে রাজশাহীর প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এবার ভাতা বন্ধ হওয়ায় ‘বিতর্কিত’দের সংবর্ধনা নেওয়া বন্ধ হলো বলে মনে করছেন অনেকেই।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন