বিজ্ঞাপন

মুফতি ইজাহারের কারাদণ্ড

March 20, 2022 | 1:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২০ মার্চ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ এ রায় ঘোষণা করেন। দুদকের কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু এ খবর জানিয়েছেন।

দণ্ডিত মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম নগরীর আলোচিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া লালখানবাজার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাড়ি বাঁশখালী জেলায়।

কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে জানান, ২০১৩ সালের ১৭ জুন মুফতি ইজাহারুল ইসলামের সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক। ১১ জুলাই মাদরাসায় গিয়ে ইজাহারের দেখা পেতে ব্যর্থ হয় দুদকের অনুসন্ধান টিম। ২৮ জুলাই ইজাহারের কর্মস্থল ও আবাসিক ঠিকানা মাদরাসার ফটকে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ৭ আগস্ট নির্ধারিত সময় সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইজাহার সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় এবং সময়ের আবেদনও না করায় মামলার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

বিজ্ঞাপন

এরপর ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদী হয়ে খুলশী থানায় ইজাহারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন সংস্থার উপ-সহকারী পরিচালক শহীদুল আলম সরকার।

একই বছরের ১২ মে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। দুদকের পক্ষে আদালতে সাতজন সাক্ষ্য দেন। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারামতে আসামি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীর সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ইজাহার আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

২০১৫ সালে অন্য মামলায় মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর দুদকের মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। তবে পরে দুদকের মামলায় তিনি জামিন পান। জামিনে থাকা ইজাহার রোববার রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আপিলের শর্তে তিনি জামিনের আবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন

ইজাহারের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে ইজাহার সাহেব সম্পদের বিবরণী জমা দিতে পারেননি। পুলিশের মামলা-হামলার কারণে প্রাণ বাঁচাতে তিনি নিজ বাসায় ছিলেন না সেসময়। তবে পরবর্তীতে তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন এবং দুদক এতে কোনো অসঙ্গতি না পেয়ে তাকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পদের বিবরণী জমা না দেয়ার মামলায় উনাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। এছাড়া আপিলের শর্তে আমরা জামিনের আবেদন করেছি। আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ আছে।’

দেশের কওমি অঙ্গনের শীর্ষ নেতা হিসেবে পরিচিত মুফতি ইজাহারুল ইসলাম। জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডের জন্য ইজাহার ও তার ছেলে হারুন আলোচিত-সমালোচিত। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠার পর লালখান বাজার মাদরাসায় প্রশিক্ষণ হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। ইজাহারুল ইসলাম সংগঠনটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও অভিযুক্ত। এছাড়া আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও আল কায়েদার সঙ্গে ইজাহারের একসময়ের সম্পৃক্ততার তথ্য বিভিন্নসময় গণমাধ্যমে এসেছিল। এছাড়া তিনি তালেবানের পক্ষে আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ আছে।

২০১০ সালে ইজাহারুল ইসলাম ও হারুন ইজাহারকে ডিএমপির ডিবি শাখা গ্রেফতার করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া এসব তথ্য তখন গণমাধ্যমে এসেছিল। ২০১৩ সালে লালখান বাজার মাদরাসায় গ্রেনেড বানানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এরপর হারুন ইজাহারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বাবা পালিয়ে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হলেও পরে আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন যে চারদলীয় জোট সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল, সেই জোটের রূপকার হিসেবেও নিজেকে দাবি করেন ইজাহার। আবার ২০০৬ সালে সেই জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে বর্ষীয়ান কওমি নেতা আহমদ শফীর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করা হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ছিলেন ইজাহার। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের নেপথ্যে ইজাহারসহ সংগঠনটির কট্টরপন্থী গ্রুপের নেতাদের ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ আছে। পরে আবার আহমদ শফীর অনুসারীদের সঙ্গে তার মতবিরোধ হয়। সংগঠনটিতে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর হেফাজতের যে সাংগঠনিক কমিটি হয়েছে তাতে আর ইজাহারের নাম নেই।

হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুহিউদ্দীন রাব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী আমাদের আগের কমিটিতে ছিলেন। এখন যে কমিটি আছে সেখানে উনি নেই।’

সারাবাংলা/আরডি/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন