বিজ্ঞাপন

বিপ্লবীদের স্মৃতি আছে জাদুঘরে, নামফলকে নেই

March 24, 2022 | 7:12 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী এবং একাত্তরের প্রতিরোধযোদ্ধা পুলিশের স্মৃতিবিজড়িত দুই ভবন নিয়ে গড়ে তোলা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম’। এই নামে বোঝার উপায় নেই, এখানে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের সেই অগ্নিযুগের স্মৃতিও আছে। এই নাম নিয়ে আপত্তি ছিল বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের। কিন্তু আপত্তি আমলে নেয়নি সিএমপি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নগরীর দামপাড়ায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ লাইনের সম্মুখে এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেন।

ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত পাশাপাশি দুই লাল ভবন। দুই ভবনের প্রথমটি ছিল ব্রিটিশ পুলিশের অস্ত্রাগার, ১৯৩০ সালে মাষ্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে এক দল বিপ্লবী সেই অস্ত্রাগার লুট করে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। উড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের পতাকা। রচিত হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের’ ইতিহাস।

আবার ১৯৭১ সালের মার্চে ইতিহাসের আরেক যুগ সন্ধিঃক্ষণে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা দ্বিতীয় লাল দালান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। শহিদ হয়েছিলেন অন্তত ৮২ পুলিশ সদস্য।

বিজ্ঞাপন

সিএমপি ঐতিহাসিক দুই ভবনকে নিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বর্গ ফুটের জাদুঘর তৈরি করেছে। শুরুতেই ব্রিটিশদের স্মৃতিবিজড়িত সেই ভবন। সেই যুব বিদ্রোহের মহানায়ক বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের ফাঁসির একটি রেপ্লিকা স্থান পেয়েছে জাদুঘরে । আছে তার নেতত্বে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যদের ছবি, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং তাদের ব্যবহৃত পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।

অন্যদিকে, পাশের লাল ভবন, যেটি ১৯৭১ সালে পুলিশের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, সেখানে শহিদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হক ও শহিদ আর আই আকরাম হোসেনের বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। সেই দালানের একাংশে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) উদ্বোধন করতে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মারক, নথি দেখেন।

এরপর সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই চট্টগ্রাম মাস্টারদা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম। তিনিই প্রথম স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার রাজারবাগে যে আক্রমণটা হয়েছিল, একই আক্রমণ কিন্তু এখানেও (দামপাড়া পুলিশ লাইন) হয়েছিল। এখানেও প্রতিরোধ হয়েছিল। এখানে আমাদের একজন এসপি শামসুল হক যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হয়েছিলেন। মোট ৮১ পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছিলেন। সেই ইতিহাসের স্মারক হিসেবে একটি জাদুঘর হয়েছে, এই উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের মাঝে নিশ্চয় ইতিহাস তুলে ধরবে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে, চট্টগ্রামবাসী কোনোদিন মাথানত করেনি, সব সময় মাথা উঁচু করে থেকেছে।’

সিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

জাদুঘর নির্মাণের সময়ই বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ নামের সঙ্গে ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’ যুক্ত করার দাবি জানিয়েছিল। সংগঠনটি সিএমপি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিল। কিন্তু সিএমপি বিষয়টি আমলে নেয়নি। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধ- দুই অগ্নিযুগের দুই ইতিহাস নিয়ে একসঙ্গে জাদুঘর হলেও একটি ইতিহাসকে বাদ দেওয়া হলো কেন, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব মেলেনি সিএমপির কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও।

বিজ্ঞাপন

বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক বলেন, ‘খণ্ডিত নাম দিয়ে তো নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না। আমরা জাদুঘরের নামে যুব বিদ্রোহের বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সেটি করা হয়নি।’

সারাবাংলা/আরডি/একেএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন