বিজ্ঞাপন

কাশিমপুর কারাগারে মাছে বড় চুরি

April 5, 2022 | 12:08 pm

উজ্জল জিসান, সিনির করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের কারাগারগুলোতে বহুদিন ধরে দুর্নীতি, অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। সেসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা সংবাদও প্রকাশ করা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগার যেন এই তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে। পুরুষ বন্দিদের বাইরে থেকে নারী সরবরাহ, মাদক প্রবেশ, সিট বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

এবার ঘটনা ঘটছে বন্দিদের খাবার মাছ নিয়ে। মাছ নিয়ে কারা আইন অমান্য করে বড় চুরির ঘটনা ঘটছে, বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টা জানান, অসাধু কারা কর্মকর্তা আর কাদের মনোনীত ঠিকাদারদের যোগসাজসে এই চুরির ঘটনা ঘটছে।

গত রোববার (৩ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টা। কাশিমপুর মহিলা কারাগারের প্রধান ফটক পেরিয়ে একটি অটোরিকশা প্রবেশ করলো। অটোরিকশায় শুধুমাত্র চালক ছিলেন। অভ্যন্তরীণ প্রধান ফটকের অদূরে অটোরিকশাটি থামে। প্লাস্টিকের ক্যারেটে অটোরিকশা থেকে মাছ নামালেন ওই চালক। সেখানে দেখা যায়, প্রতিটি মাছের আনুমানিক ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম।

সূত্র জানায়, গতকাল (৩ এপ্রিল) সরবরাহ করা প্রতিটি মাছের ওজন ছিল ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম। গতকাল দেওয়া হয়েছে নওলা মাছ। অথচ কারা আইনে ছিলো বড় বড় রুই মাছ দেওয়ার নিয়ম। সেই রুই মাছের ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৮০০ গ্রাম। কিন্তু কারা কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ঠিকাদার কম ওজনের এসব কমদামি মাছ সরবরাহ করে থাকে। গতকালও তাই ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার হালিমা বেগম বলেন, ‘কারাবন্দিদের সব আগের নিয়মে খাবার বিতরণ করা হয়। রমজানে শুধু বাড়তি যোগ হয়েছে ইফতার। আজ ঠিকাদার যে মাছ সরবরাহ করেছিল, আমাদের চোখে আসার পর মনে হয়েছে যে মাছের ওজন কম। এরপর মেপে তা ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

তবে কারা সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কারাভ্যান্তরে প্রবেশ করানো মাছ আর বের করা হয়নি। তাছাড়া কারা নিয়মানুসারে বিকেল ৪টার দিকে বন্দিদের রাতের খাবার বিতরণ করা হয়। ওই সময় মাছ ফেরত পাঠিয়ে নতুন করে মাছ এনে রান্না করে তা বন্দিদের বিতরণ করা অসম্ভব ব্যাপার।

কারা সূত্র বলছে, হালিমার ছত্রছায়ায় পুরো কারাগারে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাছের ওজন কম হওয়া আর ২০ কেজির জায়গায় ১০ কেজি দেওয়া, ৫০ কেজির স্থলে ২০ কেজি দেওয়া নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে দুই দিক থেকেই টাকা লোপাটের সুযোগ থাকে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, হালিমার ছত্রছায়ায় প্রতিবছর একই ব্যক্তিকে টেন্ডার দেওয়া হয়। তিনি মাছ-মাংস থেকে কারাগারের সবকিছু সরবরাহ করে থাকেন। শুধু তাই নয় হালিমার ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির কারা সদস্য গত ২৫ ও ২৬ মার্চ পাপিয়াদের জন্য মদের বোতল সরবরাহ করেছে। যা সিসিটিভিতে সংরক্ষিত রয়েছে।

জানতে চাইলে ঠিকাদার ইয়াহিয়া রাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাছ সরবরাহের কথা সঠিক নয়। কে বলেছে আমি ছোট মাছ সরবরাহ করেছি? যার কাছে শুনেছেন তিনি সঠিক বলেননি। এরপর তিনি কল কেটে দেন।’

ঠিকাদার ইয়াহিয়া রাজের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো পরিবার মিলে এই ঠিকাদারির সাথে জড়িত। তারা কয়েক ভাই, বাবা, বোন, বোন জামাই ও শ্যালক মিলে কাশিমপুর কারাগারে মাছ, মাংস, মুরগি, ডিমসহ নানা পদের দ্রব্য সরবরাহ করে থাকেন। প্রতিবছরই এই পারিবারিক ঠিকাদাররা কেউ না কেই সরবরাহকারী হিসেবে লাইসেন্স পেয়ে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন