বিজ্ঞাপন

বিদেশিরা আসলে গণপরিবহন নিয়ে লজ্জায় পড়ি : কাদের

April 16, 2018 | 3:55 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অর্জনের সঙ্গে রাজধানীর অধিকাংশ গণপরিবহনের গরীব-মলিন ও জীর্ণ চেহারা মেলে না। তাই কোনো বিদেশী আসলে আমাদেরকে লজ্জা পেতে হয়, বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (১৬এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শনকালে ওবায়দুল কাদের একে একে কয়েকটি সিএনজি, বিআরটিসিসহ তিনটি বাস আটকিয়ে চালক এবং যাত্রীদের অভিযোগ শোনেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও কয়েকটি মোটরসাইকেলে হেলমেটবিহীন আরোহীদের সতর্কতা অবলম্বনেরও পরামর্শ দেন।

অভিযান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সামনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সিএনজির ক্ষেত্রে অভিযোগগুলো আংশিক সত্য। একটা সিএনজিও মিটার ছাড়া চলছে- কোনো যাত্রী কমপ্লেইন করেনি। কাজেই সিএনজির ব্যাপারটা যতটুকু কমপ্লেইন আছে ততটা নেই। আংশিক সমস্যা আছে। একেবারেই ক্রটিবিহীন একথা বলবো না।’

তবে রাজধানীতে চলাচলকারী লোকাল বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে অভিযান পরিদর্শনকালে আবদুল্লাহপুর হয়ে আজিমপুরগামী একটি বাস আটকিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে  কথা বলে তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে তিনি বলেন,  ‘একটি লোকাল বাস আবদুল্লাহপুর থেকে আজিমপুর যাবে, হিসেব করে দেখেছি এটার ভাড়া ৩২ টাকা কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করেছে ৫০ টাকা। আমি এই গাড়ি ডাম্পিং করার জন্য অলরেডি নির্দেশ দিয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে ডাম্পিং করি না। গাড়ির নাম্বার রেখে দেওয়া হয়েছে। আর বিআরটির কাছে তো সব গাড়ির নাম্বার আছেই। গাড়ির মালিককে ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বিআরটিসির দ্বিতল বিশিষ্ট একটি বাসের ব্যপারে বলেন, ‘ওই বাসে নিচের তলায় ফ্যান আছে কিন্তু উপরের তলায় ফ্যান নেই। আর একতলা বিশিষ্ট একটি বাসে চারটি ফ্যান আছে কিন্তু চারটি ফ্যানই বিকল। এ বিষয়ে আমি এখান থেকেই বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে ফোন করে সককিছু ঠিকঠাক করে এগুলো রাস্তায় নামানোর নির্দেশ দিয়েছি।’

বিআরটিএর সর্বশেষ তথ্যে, ৫৫ হাজারেরও বেশি গাড়ি যারা দশ বছর যাবৎ ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়নি, তার মধ্যে সরকারি গাড়ি আছে ৩ হাজার ৭৬০টি। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন,  ‘এগুলো ঠিকঠাক করার চেষ্টা চলছে। এখানে সমন্বিত প্রয়াসের দরকার আছে। আর এতো গাড়ি রোজ রোজ বাড়ছে। গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিটা একেবারের উদ্বেগজনক, আমাদের রাস্তার তুলনায় ছোট গাড়ি বেশি বাড়ছে।’

সেখানে গণপরিবহন যা আছে, এই শহরে গণপরিবহনের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। অধিকাংশ গাড়িরই গরীব গরীব একটা মলিন জীর্ণ চেহারা। যেটা আমাদের বাংলাদেশের আজকের জিডিপি, পারক্যাপিটা ইনকামকে লজ্জা দেয়। আমাদের আজকে যে বৈদেশিক রিজার্ভ, উন্নয়ন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রথম ধাপ উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছি জাতিসংঘের কাছ থেকে এই উন্নয়ন এবং অর্জনের সঙ্গে ঢাকা শহরের পরিবহনের যে চেহারা-ছবি, সেটা কোনো অবস্থাতেই মেলানো যায় না। কোনো বিদেশী আসলে আমাদেরকে লজ্জা পেতে হয়। যে ধরনের বিশ্রী-কুশ্রী গাড়ি রাস্তায় চলে। তারপর আনফিট গাড়ি আমাদের রাস্তায় চলে।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে মালিকদের বহুবার মালিকদের সাথে আলোচনা করে সমাধান হয়নি বলেও হতাশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘তারপর এই শহরে যেভাবে অতিরিক্ত ট্রিপ নেওয়ার অসুস্থ-অস্থির প্রতিযোগিতা হয় সেই প্রতিযোগিতায় গত ১৫ দিনে এ নগরীতে তিন জনের মধ্যে একজন মৃত্যুশয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আরও দুই জন পঙ্গত্ব বরণ করতে পারে।’

রাস্তাঘাট যত বৃদ্ধি ও প্রশস্ত হচ্ছে তত সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ জন্য বেপরোয়া ড্রাইভিংকে দায়ী করেন তিনি। এ বিষয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আপনাদের চালকদের ডেকে কাউন্সিলিং করুন। রাজধানীতে তিনটি মূল্যবান প্রাণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুই জন পঙ্গু হয়ে যাবে এবং আরেকজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই করুণ দৃশ্যপট সহ্য করা যায় না।’

এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সড়কে ইজিবাইক, নছিমন, করিমন ব্যাটারি চালিত রিকশা প্রভাবশালীদের মদদে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলাচলের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক স্থানীয় প্রতিনিধি নেতা, প্রভাবশালী নেতারা এই সব ছোট ছোট গাড়িগুলোর চলাচলের নিষেধ থাকার পরও মদদ দিয়ে এইসব গাড়িগুলোকে চলাচলে উৎসাহিত করছে। যে কারণে এই দুর্ঘটনা বাড়ছে।

এ ছাড়া পথচারীরাও যেখানে ফুটওভার ব্রিজ আছে সেটা ব্যবহার না করে, রাস্তা পারাপারে সাবধানতা অবলম্বন না করার ফলেও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইন মেনে চলুন, শৃংখলা মেনে চলুন। উল্টো পথে গাড়ি চালাবেন না। যত প্রভাবশালীই হোন উল্টো পথে গাড়ি চালানো যাবে না। দুদক যখন ধরে তখনও যদি ভিআইপিদের হুশ না হয়? কবে হবে তাদের এই সচেতনতা, আমি জানি না! নিজেদের ইজ্জতও এখানে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। কারণ, যখন একজন ভিআইপি উল্টো পথে চলে তখন সাধারণ মানুষের কাছে কী জবাব দেবো?’

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

অারও পড়ুন:

এরশাদকে কাদের, ‘দয়া করে প্রকাশ্যে সিট চাইবেন না’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন