বিজ্ঞাপন

বর্ষবরণে যৌন হয়রানি: সাক্ষী না আসায় মামলার বিচারে কচ্ছপগতি

April 14, 2022 | 8:29 am

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনার দায়ের করা মামলাটির বিচার ছয় বছরেও শেষ হয়নি। মামলাটির বিচার কবে নাগাদ শেষ হতে পারে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাহফুজা পারভীনের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। দীর্ঘদিন সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলাটির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

মামলাটিতে একমাত্র আসামি কামালের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৯ জুন চার্জ গঠন করা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছরে মাত্র তিন জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তাদের হাজির করতে পারছে না।

সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। এ জন্য আদালত আগামী ১৮ মে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে আসামি কামাল হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলাটি প্রথমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ , এরপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ বিচারাধীন ছিল। পরবর্তী সময়ে মামলাটি বিচারের জন্য বদলি করা হয়। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এরইমধ্যে তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘মামলাটি নিয়ে আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ ) সবাই তৎপর। আদালত থেকে সাক্ষী হাজির করতে থানায় সমন পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশের তৎপরতা না থাকায় সাক্ষী হাজির করা যাচ্ছে না। এ মামলার অধিকাংশ সাক্ষীই পুলিশ। তারা অনেকে শাহবাগ থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়েছেন। সাক্ষীদের আদালতে আনার দায়িত্বও কিন্তু পুলিশের। তারপরও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান জানান, মামলার এজাহারে আসামি কামালের নাম উল্লেখ ছিল। মামলায় পুনঃতদন্তে চার্জশিটে তার নাম এসেছে। আসামি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।’

আইনজীবী বলেন, ‘লালবাগের খাজী দেওয়ানে আসামি কামাল সবজির ব্যবসা করেন। ঘটনার দিন আসামি ঘোরাফেরা করার জন্য বের হয়েছিলেন। ঘটনা ঘটার পরে ওই জায়গাটি ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর কামাল সেখানে হাঁটাহাটি করতে যায়। সেখানে যে কোনো ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে কামাল কিছুই জানতেন না। সে হেঁটে এসেছিল আর তার ছবি ওই ভিডিও ফুটেজে এসেছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার করেছে।’

তিনি আরও বলেন, আসামি ভোগান্তির শিকার। এ মামলায় প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার না করে ভুলভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে আসামি কিছুই জানেন না।

আইনজীবী আনিসুর রহমান দাবি করেন- ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৃত আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারা কেউ নির্দিষ্টভাবে কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ বলতে পারেনি। আশা করি, বিচার শেষে আসামি খালাস পাবেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওই ঘটনায় ভিকটিমদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দেন। শাহবাগ থানার পুলিশ মামলাটি কয়েকদিন তদন্তের পরই তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়।

একই বছরের ১৭ মে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আটজন যৌন হয়রানিকারীকে শনাক্ত ও তাদের ছবি পাওয়ার কথা জানান তৎকালীন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। শনাক্তকৃতদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর আসামিদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর শনাক্তকৃত আসামিদের মধ্যে মো. কামাল (৩৫) গ্রেফতার করে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়।

ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

সারাবাংলা/এআই/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন