বিজ্ঞাপন

রমনা বটমূলে বোমা হামলা— ২১ বছরেও শেষ হয়নি বিচারের অপেক্ষা

April 14, 2022 | 4:13 pm

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল। বরাবরের মতোই বঙ্গাব্দ বরণের উৎসব রমনার বটমূলে। হঠাৎই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। বোমার আঘাতে এলোমেলো গোটা এলাকা। ঘৃণ্যতম সে হামলায় রমনাতেই প্রাণ হারান ৯ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও একজনের। কলঙ্কিত সে হামলার ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার মধ্যে একটিতে রায় হলেও আরেকটিতে রায়ই হয়নি এখনো।

বিজ্ঞাপন

রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলাটির রায় হয় ঘটনার ১৩ বছর পর। তাতে আট জনের ফাঁসি ও ছয় জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত। তবে এরপর আট বছর পেরিয়ে গেলেও হাইকোর্টে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষ হয়নি। কবে নাগাদ সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে, সে বিষয়েও কেউ কিছুই বলতে পারছেন না।

এদিকে, হত্যা মামলার রায় হলেও একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজই শেষ হয়নি এখনো। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে যুক্তিতর্কে পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ অবশ্য বলছে, আর ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে’ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।

আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলায় বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুইটি মামলাতেই রায় হয়ে গেলে দ্রুত রায় কার্যকর করা সম্ভব হতো।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে বিস্ফোরফ আইনের মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। আগামী ২০ এপ্রিল মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করা রয়েছে।

মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা সারাবাংলাকে বলেন, মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী ২০ এপ্রিল মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। এরপরই মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করবেন বিচারক। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আশা করছি, খুব শিগগিরই মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

আবু আবদুল্লাহ ভূঞা আরও বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। ওই মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। ফলে রাষ্ট্রপক্ষের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তার অসুস্থতাজনিত কারণেই দুই বছর সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষ থেকে একই ঘটনায় হত্যা মামলার পর বিস্ফোরক মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন তুলে যাওয়া হচ্ছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকোট ফারুক আহম্মাদ সারাবাংলাকে বলেন, একই অপরাধে আসামিদের দুইবার বিচার হচ্ছে। মামলাটির বিচার দ্রুত সময়ে শেষ হলে সবার ভোগান্তি কমে যায়। আমরা চাই আসল অপরাধীরা সাজা পাক, নির্দোষ ব্যক্তিরা মুক্তি পাক। বিস্ফোরক মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনিও।

এর আগে, ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরও ছয় জনকে।

ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলেন— মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান।

মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন— শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের।

বিজ্ঞাপন

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজনে বোমা হামলার ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দুইটি দায়ের করেন। এর প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ। তিনি ছিলেন মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা।

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বিচারের জন্য মামলা দু’টি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দু’টিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারের জন্য পাঠানো হয়। এর বছর পাঁচেক পর বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় দিলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতেই আছে।

সারাবাংলা/এআই/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন