বিজ্ঞাপন

নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত হলো বৌদ্ধ স্তূপ ও ধর্মচক্র

April 16, 2022 | 8:10 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

মুন্সীগঞ্জ: টঙ্গীবাড়ির নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত হলো আরও একটি অষ্টকোনাকৃতির বৌদ্ধস্তূপ ও ধর্মচক্র। নবম ধাপে ৬ মাসের খননে আবিষ্কৃত এই নিদর্শন দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসে বিরল বলে বলছে যা প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ও দেশের প্রত্ন ক্ষেত্রকে আরো সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি গবেষণা ও পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে আবিষ্কৃত প্রত্নস্থাপনা ঘুরে দেখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ গবেষণা ও উৎখনন কাজের সংশ্লিষ্টরা। পরে এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, মুন্সীগঞ্জের নাটেশ্বরে ২০১৩সালে প্রথম আবিস্কৃত হয় ৯০০ থেকে ১২শ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ প্রাচীন মন্দির ও নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এরপর ধাপে ধাপে উৎখননে এলাকাটির মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন নগরীর রাস্তা, মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, পিরামিড আকৃতির স্থাপনাসহ বহু প্রাচীন নিদর্শন। নবম ধাপে এবার ৬ মাসের উৎখনন কাজে মাটির প্রায় ১৪ ফুট নিচ থেকে আবিষ্কৃত হলো অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ ও ধর্মচক্র। দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ এই স্থাপনা বৌদ্ধ ধর্মের অষ্টাঙ্গিক মার্গকে নির্দেশ করে।

এর আগে, আবিস্কৃত ৪টিসহ এনিয়ে নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত অষ্টকোনাকৃতির স্থাপনার সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচে।

বিজ্ঞাপন

বৌদ্ধ দর্শন অনুযায়ী এই স্থানের মাটির নিচে আরও ৩টি একই ধরনের স্থাপনা থাকতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। ১০একর টিবিতে উৎখনন কাজ শেষ হলে আর্কিওলজিক্যাল পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যা পর্যটনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে।

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই নাটেশ্বরে বৌদ্ধ ধর্ম সংস্কৃতির চর্চা আমাদের দাবি ৭০০/ ৮০০ থেকে হাজার ১২শ শতকে আমাদের বাংলাদেশে নয় ভারতবর্ষের মধ্যে সবচে বিকশিত রূপ বিক্রমপুরে ঘটেছে অতীশ দ্বীপংকরের নেতৃত্বে। প্রথম অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ পেয়েছি ২০১৩-১৪ সালের খননে, এরপর পর্যায়ক্রময়ে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ টি পেয়েছি। আমাদের যে গবেষণা ও চিন্তা চেতনা সেখান থেকে মনে হচ্ছে পুরো এলাকায় আটটি অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ আছে। ৫নং স্তূপটি থেকে আমরা আরো মনে করছি ৮টি আছে। ৮টি পেলে নাটেশ্বর যে বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার একটি উন্নত শিখরে অবস্থান করছিলো তার ইঙ্গিত এটিই দিচ্ছে।


অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, গত ১০বছর যাবত আমরা খনন কাজ পরিচালনা করছি। আমরা বৌদ্ধ মন্দির নগরী আমরা আবিষ্কার করেছি। ৮ম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর বিভিন্ন সময় নির্মিত হয়েছে। এবারে সর্বশেষ আমরা একটি অষ্টোকোনাকৃতির স্তূপ ধর্ম চক্র সহ আবিস্কার করেছি। এই ধরনের নিদর্শন বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। সেই দিক থেকে এটা এক অবিস্মরণীয় আবিস্কার।

বিজ্ঞাপন

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব মো. আবুল মনসুর জানান, খনন কাজে নতুন আবিষ্কৃত স্থাপনা দেখে আমি খুশি। এর মূল্য অনেক অনেক। বাকি ৩টি আবিষ্কৃত হওয়ার পর একটি ম্যাপে আসবে। তারা যে খনন করেছে আবিষ্কার করেছে এটি অত্যন্ত আশাপ্রদ। এর মাধ্যমে পর্যটন তথা আমাদের বিক্রমপুর যে প্রাচীন সভ্যতার অংশ তা সারা বিশ্বে প্রমাণিত হবে। অতীশ দীপংকরকে বলা হয বৌদ্ধ ধর্মের দ্বিতীয় পুরুষ। সরকারি প্রচেষ্টায় যদি এই স্থাপনা তার সময়ের তা প্রমাণ করা যায় তবে বিক্রমপুর পর্যটন তথা ধর্মীয় পর্যটনের জন্য গুরুত্ব বহন করবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত হওয়া প্রত্ন নিদর্শন ৭ম থেকে ১২ শতকের বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মন্দির ও নগরের ধ্বংসাবশেষ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত নভেম্বরে নবম ধাপের খনন কাজ শুরু করে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণ।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন