বিজ্ঞাপন

ইফতারে প্রথম দাওয়াত বিএনপিকে, সুসম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত জাপায়

April 19, 2022 | 9:32 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই— এই বক্তব্যেরই প্রমাণ রাখছে জাতীয় পার্টি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় যে বিএনপিকে কখনো ইফতার পার্টিতে দাওয়াত দেওয়া হয়নি, এবারে সেই বিএনপিকেই ইফতারের দাওয়াত দিয়েছে দলটি।

বিজ্ঞাপন

পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সামাজিকতা রক্ষার জন্যই বিএনপিকে এই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, ইফতার পার্টিতে বিএনপিকে দাওয়াত করার পেছনে রয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নতুন মেরুকরণের ভাবনা।

পার্টির একাধিক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন একটি জোট গঠনের পরিকল্পনা থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও বিএনপি’র সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে— এমনটিই সারাবাংলাকে জানিয়েছেন জেলা কমিটির কয়েকজন নেতা।

বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্কের বৈরিতা নতুন কিছু নয়। পার্টির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এরশাদকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কীভাবে অপমান করেছিলেন, তা তিনি (এরশাদ) নিজ মুখে বলে গেছেন। প্রয়াত এরশাদ ২০১৪ সালে ৩০ আগস্ট এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশে দুঃশাসন চালু করবে। তারেক রহমান আমার সম্পর্কে বলেছিলেন, কম্বল পেঁচিয়ে আমাকে লাঠিপেটা করবে।’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির নেতারা বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান তাদের নির্বাচনি জোটে জাতীয় পার্টিকে নিতে প্রবল চাপ তৈরি করেছিলেন এরশাদের ওপর। শেষ পর্যন্ত এরশাদ দুই দিনের জন্য উধাও হয়ে যান। ওই সময় সব গোয়েন্দা সংস্থার নজর ফাঁকি দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে যখন পল্টনে শেখ হাসিনার মহাজোটের মঞ্চে এনে তোলা হয়, তখন চারদিকে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সবাই থাকলেও এরশাদ যোগ দেওয়ার পরই জোট পূর্ণতা পায়।

ওই সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন শ্বাসরুদ্ধকর। তারেক রহমানের হুমকির পর এরশাদ আত্মগোপনে। ওই সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করতে (বিএনপি জোটের বাইরে) সব রাজনৈতিক দল একে একে পল্টন ময়দানের মহাসমাবেশে যোগ দিচ্ছিল। দুপুর ২টায় পল্টন ময়দানের মহাসমাবেশ কানায় কানায় পূর্ণ। মঞ্চে ১৪ দলের নেতারা ছাড়াও ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বাম দলের নেতারা উপস্থিত। কিছুক্ষণ পরই মঞ্চে আসেন শেখ হাসিনা। বিকেল ৩টার দিকে একটি গাড়িতে করে পল্টন ময়দানে সবাইকে চমকে দিয়ে উপস্থিত হন এইচ এম এরশাদ। ওই গাড়ির সামনে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। গাড়ি চালাচ্ছিলেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সফিকুল ইসলাম। সেদিনই সেই মহাসমাবেশ থেকে মহাজোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

বিএনপির সঙ্গে এমন এমন তিক্ত রাজনৈতিক সম্পর্ক সত্ত্বেও এবারের ইফতারে দলটিকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে নির্বাচনের রাজনীতিতে বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়াকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের কয়েকজন বলছেন, আসলে রাজনীতিতে মান-অভিমানের স্থান নেই। রাজনীতিতে শেষ কথা বলেও কিছু নেই। এরশাদ বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণেই বিএনপির দিকে দলটিকে ঝুঁকে পড়তে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, এরশাদের জীবদ্দশায় জাপাকে বিএনপির দিকে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল একাধিকবার। কিন্তু এরশাদ ছিলেন একজন জাত পলিটিশিয়ান। তিনি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কৌশলে কথা বলতেন। তিনি মারা গেলেও তার কিছু শিষ্য রয়েছে পার্টিতে। তবে তাদের ভূমিকা এখন গৌণ হয়ে পড়েছে। ফলে এরশাদের ভাবনার বিপরীতে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে জোট হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

জাপার প্রভাবশালী একজন সংসদ সদস্য বলেন, ‘জাপাকে বিএনপির দিকে নিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে নমনীয়।’ তবে শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগের সফলতা নিয়েও শঙ্কা জানান এই সংসদ সদস্য। বলেন, ‘জি এম কাদেরের নির্বাচনি এলাকাতে তার নিজেরই অস্তিত্ব নেই। ফলে তার নির্দেশেই সবকিছু হবে, এমনটি মনে করার কারণ নেই।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক কারণে বিএনপিকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। জামায়াত বাদে সব দলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছি আমরা। এমনকি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ফলে এই দাওয়াত নিয়ে এতকিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।’

বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি জোট গঠন বা ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে জোট করব না। কারও জোট করার প্রয়োজন হলে আমাদের কাছে আসবে। জোট প্রসঙ্গে দলের চেয়ারম্যানেরও একই অভিমত।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন