বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগ সভাপতির কাছ থেকে ২০ এসি জব্দ!

April 21, 2022 | 10:51 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: ‘মিডিয়া’ ব্র্যান্ডের ২০টি এসি বিক্রি করেছিলেন ঢাকার সাকিরা ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. হান্নান মিয়া। এসিগুলোর দাম হিসেবে অগ্রিম নিয়েছিলেন এক লাখ টাকা। বাকি ছিল ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জন্য মাওরুম ট্রেডার্সের মাধ্যমে এসিগুলো বিক্রি করেন তিনি। কথা ছিল, রাঙ্গামাটি গেলেই বাকি টাকা দেওয়া হবে তাকে। ক’দিন ধরে রাঙ্গামাটির পথে পথে ঘুরেও সেই টাকা পাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হয়েছেন পুলিশের। শেষ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির কাছ থেকে সেই ২০টি এসি জব্দ করেছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে নির্মিতব্য ‘হোটেল সোনার বাংলা’ থেকে সেই ২০টি এসি পুলিশ জব্দ করেছে থানায় নিয়েছে।

এর আগে, বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হান্নান মিয়া। অভিযোগে রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিনুর রহমান ও শাহীন হায়দার নামে ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে অভিযুক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমরা লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। তাই আপাতত এসিগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে এসেছি। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে টাকার সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব আমরা। তারপর বাকি সিদ্ধান্ত।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাকিরা ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী হান্নান মিয়া জানান, ঢাকার মিরপুরে সাকিরা ইলেট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মূলত এসির ব্যবসা করেন তিনি। সম্প্রতি বিক্রয় ডটকমের মাধ্যমে শাহীন নামের এক ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জন্য মাওরুম ট্রেডার্সের মাধ্যমে ২০টি এসি সরবরাহ করতে বলেন। এরপর মহসিন ও শাহীনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এক লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’তে প্রথম দফায় ৯টি ও দ্বিতীয় দফায় ১১টি এসি সরবরাহ করার কাজ নেন তিনি।

হান্নান মিয়া বলেন, কথা ছিল— মালামাল রাঙ্গামাটি পৌঁছালে আমাকে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ১৭ এপ্রিল প্রথম দফায় মিডিয়া ব্র্যান্ডের ৯টি এসি রাঙ্গামাটি পৌঁছালে ছাত্রলীগ সভাপতি সুজন এসিগুলো রিসিভ করেন এবং বাকি এসিগুলো পাওয়ার পর টাকা শোধ করবেন বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, পরদিনই আমি বাকি ১১টি এসি পাঠিয়ে দিই। কিন্তু এসিগুলো রাঙ্গামাটি পৌঁছানোর পর রিসিভ করা হলেও টাকা দেননি সুজন। আমাকে চেনেন না বলেও জানান। টাকার জন্য মহসিনের যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। পরে মহসিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি যোগাযোগ করতে বলেন শাহীনের সঙ্গে। কিন্তু শাহীন আমাকে আগেই জানিয়েছিলেন, মালামাল রাঙ্গামাটি পৌঁছালে সুজনই টাকা পরিশোধ করবেন।

হান্নান মিয়ার অভিযোগ, এখন আমার টাকা না দিয়ে টালবাহানা করছে তারা। গত দুই দিন আমি রাঙ্গমাটির বিভিন্নজনের কাছে গিয়েছি, সবার সহযোগিতা চেয়েছি। জানি না আমি আমার টাকা পাব কি না।

অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোহসিুনর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এসি আমি অর্ডার করেছি, এটি সত্য। এসিগুলো আমি সুজনের কাছে বিক্রির জন্যই অর্ডার করেছি। কিন্তু যার মধ্যস্থতায় অর্ডার করেছি, সেই শাহীনের সঙ্গে আমার কিছু ব্যবসায়িক লেনদেন আছে। তার কাছে আমি টাকা পাই। তাই হান্নান মিয়ার টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন বলেন, ‘আমি সোনার বাংলা হোটেলে এসি সরবরাহের কাজ নিয়ে মহসিনকে অর্ডার করেছি। সে কোথা থেকে বা কার কাছ থেকে এসি এনেছে, আমি জানি না। আমি মালামাল পেয়েছি, বুঝে নিয়েছি। মহসিনকে আমি টাকা দিয়েছি। বাকি কিছুই আমার জানা নেই।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে অবশ্য আরেক অভিযুক্ত শাহীনের কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে এসি জব্দ করার পর মো. হান্নান মিয়া রাঙ্গামাটির স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ফোন করার পর তিনি আমাকে পুলিশ সুপারের কাছে পাঠান। পুলিশ সুপার মহোদয় আমার সব কথা শুনে এবং কাগজপত্র দেখে তাৎক্ষণিকভাবে এসিগুলো জব্দ করার নির্দেশ দেন। আমি রাঙ্গামাটির প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমার কাছে অভিযোগ তুলে ধরার পর আমি তাকে পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়েছি। তার অভিযোগটি যাচাই করে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন