বিজ্ঞাপন

পুলিশ কেন আন্দোলনের অধিকার কেড়ে নেবে?

April 25, 2022 | 9:29 pm

স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট

ঢাকা: জনগণ কোনো ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে আইনি সহায়তা নিতে এলে বা আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চাইলে তাদের নানাভাবে পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। রোববার (২৪ এপ্রিল) ১৭নং ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকায় তেঁতুলতলা মাঠ সংরক্ষণের আন্দলোনকারী নেত্রী সৈয়দা রত্না ও তার নাবালক ছেলে ঈশা আব্দুল্লাহ প্রীয়াংশুকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশের ধরে নিয়ে যাওয়া ও ১৩ ঘণ্টা থানা হাজতে আটকে রাখা পরে বেআইনিভাবে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া, এই ঘটনার সর্বশেষ সংযোজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিজ্ঞাপন

তেঁতুলতলা মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া ও সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে আটকের ঘটনার তদন্তের দাবিতে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা তো ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলে বাস করছি না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বাস করছি। তাহলে আমাদের কেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যাবে, আটকে রাখবে বা অগণতান্ত্রিক মুচলেকা নিয়ে ছাড়বে। তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে আর অংশ নেবেন না বা কোন সভা-সমাবেশে অংশ না নেওয়ার মুচলেকায় সই দিয়ে রাত ১২টার পর ছাড়া হয় রত্না ও তার ছেলেকে। তাহলে আমাদের বলে দেওয়া হোক সরকারি কাজের তালিকা কি আর আমরা কি নিয়ে আন্দোলন করতে পারবো?’

সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১১.০০ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-এর সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারী পক্ষ, বাংলাদেশ উদীচি শিল্প গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইট্‌স সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি। ‘তেঁতুলতলা মাঠে থানা না, এলাকাবাসীকে হয়রানী ও আটকের তীব্র প্রতিবাদ’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন খুশী কবির, শামসুল হুদা, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবীবসহ আয়োজক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন থানার প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটি খোলা মাঠ দখল করে নয়। কলাবাগানেই অনেক পরিত্যক্ত ভবণ আছে সেখানে হতে পারে। মাঠে থানা হলে এলাকাবাসী খেলবে কোথায়। খেলতে না পারলে শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশ হবেই বা কীভাবে। শিশুরা কম্পিটারে গেমস খেলে খেলে অপরাধপ্রবণ হবে আর তাদের থানায় আটকে রাখার জন্য থানা দরকার হবে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, “আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সৈয়দা রত্না ও তার নাবালক পুত্রকে কোনরকম আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, বা কোন আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়া দীর্ঘ ১৩ ঘন্টারও বেশি সময় আটকে রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের ন্যাক্কারজনক লঙ্ঘন ও বেআইনি। সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর রোববার সারাদিন বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেন যোগাযোগ করা যায়নি তা স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখার দাবি রাখে। বারংবার অনুরধ স্বত্বেও থানা ও মাঠে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা সৈয়দা রত্না ও তার নাবালক পুত্রের আটক বিশয়ে মাঠে থানা নির্মাণের আইনগত বৈধতার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। ফলে আটক ও তুলে নিয় যাওয়া এবং মাঠ দখলের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কলাবাগান থানা যে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিরই নিন্দনীয় প্রতিফলন ঘটিয়েছে তা স্পষ্ট।”

নাগরিকদের ন্যূনতম বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকার ও মানবাধিকারের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষের এমন অবৈধ আটক মুচলেকা গ্রহণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

আমাদের স্পষ্ট দাবি হচ্ছে তেঁতুলতলা মাঠটি উন্মুক্ত স্থান ও মাঠ হিসেবে রাখতে হবে এবং মাঠে থানা স্থাপনের চলমান সকল কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মাঠে থানা বা অন্য কোন স্থাপনা হবে না, মাঠে শিশুরা খেলবে, কলাবাগান থানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পরেশন ও রাজউককে অনতিবিলম্বে সেই প্রতিশ্রুত প্রদান করতে হবে একইসাথে সৈয়দা রত্না ও নাবালক পুত্রসহ পরিবারের সকল সদস্যের ও এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তেঁতুলতলা মাঠ উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আইন করেছে উন্মুক্ত মাঠ ও জলাশয় দখল করা যাবে না। জনগণের বন্ধু হিসেবে পুলিশের উচিৎ ছিল মানুষের দাবির পক্ষে দাঁড়ানো। সব পুলিশ খারাপ না। পুলিশেরই আছে গৌরবজনক ইতিহাস। স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে তারাই সবার আগে প্রাণ দিয়েছিল। কিন্তু কিছু গুটিকয়েক ব্যক্তি এমন বিতর্কিত কাজ করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উচিৎ এলাকার লোকজনের দাবির কথা শোনা ও তাদের চাহিদা সম্পর্কে জানা। যদি এলাকাবাসীর কোন ভুল হয় তাহলে তাদেরকে বুঝিয়েও বলাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরই দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল পুলিশ বা জনপ্রতিনিধি কেউই সাধারণ জনগণের দাবির পক্ষে নাই।’

উদিচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘বড় বড় মাঠ-ঘাট দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা মাঠ-ঘাট রক্ষার জন্য লড়াই করে যাবো। ঢাকায় যতগুলো মাঠ দখল হয়ে আছে সেগুলো পুনরুদ্ধারে উদীচী একযোগে কাজ করে যাবে।’

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘আন্দোলনস্থল থেকে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে ধরে নিয়ে আটক করে রাখা হলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি না। কেন ধরেছে, কোথায় আটক রেখেছে তার কোন তথ্যই দিচ্ছে না। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংসদ, মন্ত্রীসহ কেউই ফোন ধরেনি।’

বিজ্ঞাপন

উলেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কলাবাগানে অবস্থিত প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো তেঁতুলতলা মাঠটি তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে কলাবাগান থানা ভবণ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে উন্মুক্ত এ স্থানটি ১৭ নং ওয়ার্ডের লক্ষাধিক বাসিন্দা ঈদগাহ হিসেবে, মৃতদেহ গোসল করানোর কাজে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবের কেন্দ্রস্থল এবং শিশুদের জন্য একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। উল্লেখিত মাঠে কলাবাগান থানা ভবণ নির্মাণ করা হবে এবং স্থানীয় উপস্থিত পুলিশদের ভাষ্যমতে, পতিত শ্রেণির উন্মুক্ত এ স্থানটি ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক থানা নির্মাণ করার জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে।

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন: মা-ছেলেকে ছেড়ে দিল পুলিশ

‘তেঁতুলতলায় থানা হবে কি না সিদ্ধান্ত আলোচনার পর’

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন