বিজ্ঞাপন

প্রতি ইদে ৩০০০ টিকিট সরিয়ে নিতেন সহজ কর্মকর্তা রেজাউল

April 28, 2022 | 5:54 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রেজাউল করিম (৩৮)। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কর্মরত ছিলেন রেলের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমে, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সে কারণে রেলের টিকিটের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকতো তার হাতে। আর এই সুযোগে রাতেই বেশির ভাগ টিকিট কেটে নিতেন তিনি। ফলে সকাল ৮টায় সহজ অ্যাপে টিকেটিং অপশন চালু হতেই সব টিকিট উধাও হয়ে যেত। এ কারণে অনলাইনে কেউ টিকিট কাটতে পারতেন না। রেজাউল করিম ছয় বছর ধরে প্রতি ইদে কমপক্ষে তিন হাজার টিকিট কেটে নিতেন। এরপর সহযোগীদের মাধ্যমে কালোবাজারিতে এসব টিকিট বিক্রি করতেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রেজাউল করিম অবৈধভাবে কেটে নেওয়া টিকিট পরিচিতজনদের কাছে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা বেশিতে বিক্রি করতেন। আর সহযোগীদের কাছে কখনো এক হাজার আবার কখনো দেড় হাজার টাকা বেশি নিতেন। এভাবে তিনি ইদের আগে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

র‌্যাব জানায়, আগের রাতে অনলাইন কোটায় থাকা বেশির ভাগ টিকিট তিনি কেটে রাখতেন। আবার সকাল বেলা যখন কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হতো তখনও তিনি সার্ভার থেকে টিকিট কেটে নিতেন। ফলে লাইনে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে যেতেন টিকিট শেষ।

যাত্রীদের এরকম অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর র‌্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল নজরদারি শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ এর একটি দল গত ২৭ এপ্রিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত সহজ ডটকমের কার্যালয় থেকে রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রেজাউল করিম ছয় বছর ধরে রেলওয়ের এই টিকিট নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত। তিনি সিএনস বিডিতে ছয় বছর কর্মরত ছিলেন। এরপর গত মার্চে সিএনএস বিডিকে বাদ দিয়ে টিকিট নিয়ন্ত্রণের ভার সহজ ডটকমকে দিলে অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে রেজাউলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারিতে তার অবস্থান ফিরে পায়।

আরও জানা যায, র‌্যাবের কাছে যখন পরিষ্কার হয় যে, রেজাউল করিম টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত, তখন তিনি র‌্যাবের একজন কর্মকর্তাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন। র‌্যাবের ওই কর্মকর্তাকে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাকে যদি আপনারা ছেড়ে দেন, তাহলে সারাজীবন আপনার এবং আপনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের রেলের টিকিট নিয়ে আর সমস্যা থাকবে না। শুধু বলবেন আর টিকিট পেয়ে যাবেন।’ কিন্তু র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা তার এই লোভে পা দেননি।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর সিও আব্দুল্লাহ আল মোমেন রেজাউল করিমের বিষয়ে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল করিম এলোমেলো তথ্য দিলে এক পর্যায়ে তার ফোন তল্লাশি করা হয়। এতে দেখা যায়, সে অবৈধভাবে টিকিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত। সেইসঙ্গে তার সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। রেজাউলের তথ্য মতে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সম্রাটকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছে থাকা বিপুল পরিমাণ অবৈধ ই-টিকিট জব্দ করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা মোমেন বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত রেজাউল-ই প্রধান— এটা প্রমাণ হওয়ার পরও তিনি ভিআইপিদের টিকিট আবদার মেটানোর কারণে এরকমটা করেছেন বলে জানান। তারপরও তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা অথবা সহজ ডটকমের অন্য কেউ জড়িত আছেন কি না তা তদন্ত করা হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রেজাউল করিম একজন অভিজ্ঞ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট সংক্রান্ত যোগাযোগ করে আসছিলেন। সেইসঙ্গে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসের বদলে তিনি নগদ অর্থের লেনদেন করতেন।’

রেজাউল করিম ও সম্রাটকে কমলাপুর জিআরপি থানায় হস্তান্তর করা হবে। সেখানে একটি মামলা হবে। সেই মামলায় তাকে আদালতে নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন