বিজ্ঞাপন

গোমা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে

April 29, 2022 | 8:29 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ব্যয় বাড়ছে গোমা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে হাতে নেওয়া তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫৭ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীতে এর ব্যয় বেড়ে নির্ধারণ করা হয় ৭১ কোটি ৮৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। তবে তিন বছরের প্রকল্পে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি অর্ধেকও নয়। এর মধ্যে সেতুটির নকশাতেও এসেছে পরিবর্তন। তাই এবারে আরও প্রায় ২১ কোটি টাকা বাড়িয়ে নতুন করে পাঠানো হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাব। ফলে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯২ কোটি ৫৩ লাখ ৬২ হাজার টাকায়। তিন বছর দিয়ে শুরু করলেও প্রকল্পটি এখন শুরু থেকে ছয় বছরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে সংশোধনীতে।

বিজ্ঞাপন

সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, মূল প্রকল্প থেকে এখন মেয়াদ হয়েছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে, প্রাথমিক প্রস্তাবনা থেকে খরচ বেড়েছে ৩৪ কোটি টাকারও বেশি। প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবের তুলনায় সংশোধনী প্রস্তাবে খরচ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, বরিশালের দিনারেরপুল-লক্ষ্ণীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতু নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের ব্যয় ৬০ শতাংশ বেড়ে গেলেও বাস্তবতা বিবেচনায় সেটিকে যৌক্তিক মনে করেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উত্থাপনের জন্য বলেছে কমিশন।

জানা গেছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল জেলা সড়কে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি পরবর্তী কোনো একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বরিশাল (দিনারেরপুল)-লক্ষ্ণীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটার রাঙ্গামাটি নদীর ওপর ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রশস্ত দুই লেনের একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৫৭ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয় প্রকল্পটি।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গে পরিবর্তন আসে। সেগুলো হিসাবে নিয়ে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। এ পর্যায়ে ৭১ কোটি ৮৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় সেতুটি নির্মাণের জন্য। তবে প্রাথমিক প্রস্তাবনার মেয়াদেই সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্য ধরা হয় প্রথম সেই সংশোধনী প্রস্তাবে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবটি (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এর ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৩ জুন। ওই সভায় সংশোধনী প্রস্তাবের ব্যয় ঠিক রেখে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য রেখে পুনর্গঠিত সংশোধিত ডিপিপি গঠন করা হয়।

ওই পিইসি সভার অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে চলমান কাজ বিবেচনায় নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সবশেষ সুপারিশ অনুযায়ী ব্রিজটির স্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২০ মিটার এবং হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে নকশা সংশোধন করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলনও করতে বলা হয়। তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর জবাবে পুনর্গঠিত আরডিপিপিতে উল্লেখ করে, সেতুটির ভিত্তিসহ অধিকাংশ পিয়ার ও গার্ডারের কাজ বিআইডব্লিউটিএ’র আগের সুপারিশ করা ৭ দশমিক ৬২ মিটার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী করা হয়েছে। ফলে সংশোধনী প্রস্তাবনায় পিইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২০ মিটারে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি।

তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এই যুক্তি ধোপে টেকেনি। ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে তাদের বিআইডব্লিউটিএ’র নতুন নির্দেশনা তথা ১২ দশমিক ২০ মিটার অনুসরণ করতে নির্দেশনা দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে গত বছরের ১০ আগস্ট ফের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভার সিদ্ধান্তে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২০ মিটার নির্ধারণ কার হয়। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেতুর আরও কিছু অংশেও নকশায় পরিবর্তন আসে। আর এসব পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করতে প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৯২ কোটি ৫৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ রেখে সংশোধনী প্রস্তাবটি ফের পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নতুন আইন অনুযায়ী সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে ৮ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। সেতুটির দুইটি পিয়ার পি-১ ও পি-৬-এর অবস্থান নদীর মধ্যে হওয়ায় এবং রিভার বেড থেকে পিয়ার ক্যাপের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সেতু নির্মাণের সময়ে ব্যবহৃত স্টিল কেসিংয়ের দৈর্ঘ্য বেড়ে গেছে। সেতুর নকশা পর্যালোচনা করায় পাইলের দৈর্ঘ্যও বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিায়ারেন্স পরিবর্তনের ফলে নকশাতেও পরিবর্তন এসেছে। এর সঙ্গে আগের উল্লেখ করা বাড়তি খরচ মিলিয়ে এখন আগের সংশোধনী প্রস্তাবের তুলনায় ১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয় বাড়বে সেতুটি নির্মাণে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের দুইটি প্যাকেজের মধ্যে দ্বিতীয় প্যাকেজের প্রাক্কলন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের রেট শিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী করায় দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ বেড়েছে। আর সেতু নির্মাণের সময়ও বেড়েছে এক বছর।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স পরিবর্তনের ফলে নকশা নতুন করে করতে হয়েছে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নতুন আইন অনুযায়ী সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণেও খরচও আগের তুলনায় বেশি হবে। নকশা পরিবর্তনজনিত কারণে সেতুটির বিভিন্ন অঙ্গেও আরও খরচ বাড়বে।

মামুন-আল-রশীদ আরও বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি নদীর ওপর ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার গোমা সেতু নির্মাণ করা হলে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে সরাসরি ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই প্রকল্পটির প্রথম এই সংশোধনী অনুমোদনযোগ্য।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন